Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বকেয়া চাওয়ার ‘সাজা’ গুড়াপে শ্রমিকদের মারধরের অভিযোগ

১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে পুকুর কাটা এবং রাস্তা তৈরির পরে কয়েক মাস কেটে গেলেও মজুরি পাননি শ্রমিকেরা। সেই বকেয়া মেটানোর দাবি নিয়ে গুড়াপের খাজুরদহ-মিল্কি পঞ্চায়েত যাওয়ার পথে পঞ্চায়েত অফিসের সামনে প্রহৃত হন শ্রমিকেরা। মঙ্গলবার বিকেলে।

হালপাতালে ভর্তি জখম সুশান্ত সিংহ। ছবি তুলেছেন তাপস ঘোষ।

হালপাতালে ভর্তি জখম সুশান্ত সিংহ। ছবি তুলেছেন তাপস ঘোষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুড়াপ শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৪ ০১:১৬
Share: Save:

১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে পুকুর কাটা এবং রাস্তা তৈরির পরে কয়েক মাস কেটে গেলেও মজুরি পাননি শ্রমিকেরা। সেই বকেয়া মেটানোর দাবি নিয়ে গুড়াপের খাজুরদহ-মিল্কি পঞ্চায়েত যাওয়ার পথে পঞ্চায়েত অফিসের সামনে প্রহৃত হন শ্রমিকেরা। মঙ্গলবার বিকেলে। সুপার ভাইজার গিরীশ দাসের নেতৃত্বে কিছু তৃণমূল কর্মী-সমর্থক ওই শ্রমিকদের উপরে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। সুশান্ত সিংহ নামে এক ট্রাক্টর-চালক রডের ঘায়ে গুরুতর আহত হন। শ্রমিকদের বেশির ভাগই সিপিএম কর্মী-সমর্থক হওয়ায় ঘটনায় রাজনীতির রং লাগে। ঘটনাস্থলে পুলিশ যায়।

পঞ্চায়েতটি তৃণমূল পরিচালিত। উপপ্রধান বিশ্বজিত্‌ কুমার শ্রমিকদের মজুরি বকেয়া থাকার কথা মেনে নিয়েছেন। তিনি জানান, কয়েক মাসে আগে বরাদ্দ না মেলায় কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। তবে, পুজোর আগেই মজুরি শ্রমিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে চলে যায়। সে কথা তাঁদের জানানো হয়নি বলেই ক্ষোভ তৈরি হয়। পুজোর ছুটি পড়ে যাওয়ায় শ্রমিকেরা ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে পারেননি। শ্রমিকদের সে কথা জানানো হবে। ব্যাঙ্কে গেলেই তাঁরা মজুরির টাকা পেয়ে যাবেন।

রাজনৈতিক কারণে শ্রমিকদের উপরে হামলার কথা মানতে চাননি উপপ্রধান। তাঁর দাবি, “যাঁদেরই জব-কার্ড থাকে, তাঁরাই কাজ পান। এ দিন ওই শ্রমিকেরা বিক্ষোভ দেখাতে এলে ভিড়ের মধ্যে থেকে কোনও কটূক্তি ভেসে আসায় সুপারভাইজারের সঙ্গে গোলমাল হয়।” অভিযুক্ত সুপারভাইজার গিরীশ দাসের দাবি, “ওরা হামলা করার জন্য জড়ো হয়। তার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।”

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত জুলাই মাসে ওই পঞ্চায়েত এলাকায় ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে মাটি ফেলে তিন কিলোমিটারের একটি রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হয়। তা শেষ হয় মাস তিনেক পরে। তার আগে ওই প্রকল্পে একটি পুকুর কাটার কাজও হয়েছিল। দু’টি কাজে জনা পঞ্চাশ শ্রমিক যুক্ত ছিলেন। কেউই মজুরি পাননি। পঞ্চায়েতে দরবার করেও সুরাহা হয়নি বলে তাঁদের অভিযোগ। মঙ্গলবার তাঁরা পঞ্চায়েতে বিক্ষোভ দেখানোর কর্মসূচি নেন। নেতৃত্বে ছিলেন সিপিএম সমর্থক হিসেবে পরিচিত সুশান্ত সিংহ। বিক্ষোভকারীরা পঞ্চায়েত অফিসের সামনে পৌঁছলে সুপারভাইজার গিরীশ দাসের নেতৃত্বে ওই হামলা হয় বলে অভিযোগ। রডের বাড়ি খেয়ে সুশান্তবাবু রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে যান। পুলিশ যাওয়ার আগে হামলাকারীরা পালায়। শ্রমিকেরা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান। সুশান্তবাবুকে প্রথমে গুড়াপ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়। পরে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে সরানো হয়। তাঁর বাঁ হাতের দু’টি আঙুল ভেঙেছে। আটটি সেলাইও পড়েছে। বুধবার চুঁচুড়ায় সিপিএমের জোনাল অফিসে গিয়ে প্রাক্তন সাংসদ রূপচাঁদ পাল-সহ দলীয় নেতাদের কাছে ঘটনার কথা জানান ওই শ্রমিকেরা।

এ দিনই হাসপাতালে সুশান্তবাবুকে দেখতে যান রূপচাঁদবাবু। সুশান্তবাবু বলেন, “আমাদের ৩৭টি শ্রমদিবসের মজুরি পাওয়ার কথা। পুজোরও আগে টাকা চেয়েছিলাম। পঞ্চায়েত দেয়নি। মঙ্গলবার বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে মার খেলাম। ওরা রড দিয়ে আমার মাথা ফাটাতে চেয়েছিল। হাত দিয়ে মাথা ঢেকে বসে পড়ি। হাতে রডের বাড়ি লাগে।” ঘটনার নিন্দা করে রূপচাঁদবাবু বলেন, “রাজ্য জুড়েই তৃণমূল আমাদের কর্মী-সমর্থকদের উপরে হামলা করছে। গুড়াপ সেই তালিকায় নতুন সংযোজন। কাজের ন্যায্য পাওনা চাওয়াটাও এখন যেন অপরাধ! টাকার পরবর্তে ওঁদের কপালে জুটল মার। রাজ্য ও জেলা নেতৃত্বকে ঘটনার কথা জানানো হয়।” ওই ঘটনা নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি ধনেখালির বিধায়ক অসীমা পাত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE