বাউড়িয়ায় যুবক খুনে গ্রেফতার বন্ধু

এক যুবককে খুনের অভিযোগে তাঁর বন্ধুকে গ্রেফতার করল পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বাউড়িয়ায় জুটমিল এলাকায়। মৃত এবং অভিযুক্ত দু’জনেই বাউড়িয়ার একটি চটকলের শ্রমিক। থাকতেন একই কর্মী আবাসনে। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করলেও খুনের প্রকৃত কারণ এখনও জানাতে পারেনি পুলিশ। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নিহত যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল ধৃতের কিশোরী বোনের। কিন্তু কিশোরীর পরিবারের তরফে তাতে ঘোরতর আপত্তি ছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অনুমান, নিজের বোনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক মানতে না পেরেই বন্ধুকে খুন করেছে অভিযুক্ত। জেলা গ্রামীণ পুলিশের এক কর্তা অবশ্য জানান, আমাদের কাছেও এমন খবর রয়েছে। তবে সমস্ত সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখে তদন্ত হচ্ছে। ধৃতের দুই সাগরেদকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে এলাকার একটি ক্লাবের পাশের ঝোপ থেকে রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ মনোজ জয়সোরা (২৮) নামে ওই যুবকের গলাকাটা দেহ উদ্ধার হয়। মনোজের পরিবার এবং জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওইদিন সন্ধ্যা থেকে বাড়িতেই ছিলেন তিনি। রাত ৯টা নাগাদ ধৃত যুবক তার দু’জন সাগরেদকে নিয়ে মনোজদের বাড়িতে আসে। তাদের সঙ্গেই মনোজ বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। ঘণ্টাদেড়েক পরে ধৃতের এক সাগরেদ মনোজদের বাড়িতে ফিরে এসে তাঁর মাকে জিজ্ঞাসা করে মনোজ বাড়িতে ফিরেছে কিনা। মনোজের মা তাকে জানান, ছেলে এখনও ফেরেনি। এরপরেই ওই যুবক চলে যায়।

এখানেই উদ্ধার হয় মনোজের গলাকটা দেহ। ছবি: সুব্রত জানা।

মনোজের মা পুলিশকে জানিয়েছেন, বাড়িতে যে মনোজের খোঁজ করতে এসেছিল তার হাবভাব দেখে তাঁর সন্দেহ হয়েছিল। সে চলে যাওয়ার পরই তিনি সেজ ছেলেকে পাঠান মনোজের খোঁজে। খবর দেওয়া হয় পুলিশকেও। বেশ কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় মনোজের খোঁজ মেলে। দেখা যায় স্থানীয় এরটি ক্লাবের কাছে ঝোপের মধ্যে মনোজের গলাকাটা দেহ পড়ে। রাতেই মনোজের মা পুলিশের কাছে ছেলের বন্ধুর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ মনোজের বন্ধুকে তার বাড়ি থেকে গ্রফতার করে। পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃত যুবক মনোজকে খুনের কথা স্বীকার করেছে। এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা গেল খুনের ঘটনায় উত্তেজনা রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানান, মনোজের সঙ্গে ধৃতের বোনের বছরখানের আগে থেকে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। পরে তা ভেঙেও যায়। কিন্তু মাসতিনেক আগে ঘটনাটি জানাজানি হলে মনোজকে অভিযুক্তের পরিবারের পক্ষ থেকে শাসানো হয়। ওই কিশোরীকেও তার মা এবং দাদা এই সম্পর্কের জন্য মারধর করেন। অভিযুক্তের সঙ্গে মনোজের কথা-বার্তাও বন্ধ ছিল।

শোকার্ত পরিবার।

মনোজের মা কান্তিদেবীর কথায়, “আমার ছেলের সঙ্গে তিন মাস তার বন্ধুর কথা বন্ধ ছিল। বৃহস্পতিবার ওই বন্ধু যখন দুই সঙ্গীকে নিয়ে ছেলেকে ডাকতে আসে তখনই সন্দেহ হয়েছিল। পরিকল্পনা করেই আমার ছেলেকে খুন করা হয়েছে?” একইসঙ্গে তিনি বলেন, “আমার ছেলের সঙ্গে তার বন্ধুর বোনের প্রেমের সম্পর্ক একটা ছিল ঠিকই। তবে ঠিক কী কারণে সে আমার ছেলেকে খুন করল তা বলতে পারব না। পুলিশ তদন্ত করে দেখবে।”

অন্য দিকে ধৃতের পরিবারের তরফেও মনোজের সঙ্গে তাদের বাড়ির মেয়ের প্রেমের সম্পর্কের কথা স্বীকার করা হয়েছে। ধৃতের মা বলেন, “আমরা মনোজের সঙ্গে আমাদের বাড়ির মেয়ের সম্পর্ক তৈরি হওয়াটা মেনে নিতে পারিনি। কারণ, মেয়ের বয়স কম। এ নিয়ে আপত্তি করায় মাসতিনেক আগেই সব চুকেবুকে যায়।” মনোজ খুনের ঘটনায় তাঁর ছেলে জড়িত নয় দাবি করে তিনি বলেন, “আমার ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে।”