Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
লিলুয়া

বাবার সাইকেল থেকে পড়ে লরিতে পিষ্ট শিশু

আড়াই বছরের শিশুপুত্রকে সাইকেলে চাপিয়ে রোজই ঘুরতে যেতেন বাবা। সোমবার সকালেও তেমনই বেরিয়েছিলেন বাবা-ছেলে। গন্তব্য ছিল, বাড়ির কাছের দুধের দোকান। সেখানে পৌঁছে রাস্তার ধারে সাইকেল দাঁড় করিয়ে কেনাকাটা করতে যান বাবা। তখন শিশুটি একাই সাইকেলে বসেছিল। হঠাৎই সাইকেল উল্টে গিয়ে রাস্তায় পড়ে যায় সে। তখনই পাশ দিয়ে যাওয়া এক লরির চাকা পিষে দেয় তাকে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় শিশুটির।

পলাশ হালদার

পলাশ হালদার

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৩৮
Share: Save:

আড়াই বছরের শিশুপুত্রকে সাইকেলে চাপিয়ে রোজই ঘুরতে যেতেন বাবা। সোমবার সকালেও তেমনই বেরিয়েছিলেন বাবা-ছেলে। গন্তব্য ছিল, বাড়ির কাছের দুধের দোকান। সেখানে পৌঁছে রাস্তার ধারে সাইকেল দাঁড় করিয়ে কেনাকাটা করতে যান বাবা। তখন শিশুটি একাই সাইকেলে বসেছিল। হঠাৎই সাইকেল উল্টে গিয়ে রাস্তায় পড়ে যায় সে। তখনই পাশ দিয়ে যাওয়া এক লরির চাকা পিষে দেয় তাকে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় শিশুটির। সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে এমনই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার সাক্ষী রইল লিলুয়ার বিরাডিঙি মোড়ের কাছের বেনারস রোড।

পুলিশ জানায়, এ দিনের দুর্ঘটনার বলি ওই শিশুর নাম পলাশ হালদার। বাবা প্রিয়নাথ হালদার ও মা সরস্বতীদেবীর একমাত্র সন্তান সে। বাড়ি স্থানীয় সিটিআই এলাকার ভারতমাতা লেনে। সেখান থেকেই এ দিন সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ বাবার সাইকেলে চড়ে ঘুরতে বেরিয়েছিল ছোট্ট পলাশ।

স্থানীয় দোকানদারেরা জানিয়েছেন, প্রিয়নাথবাবু ছেলেকে নিয়ে ঘোরার জন্য সাইকেলে ছোট একটি সিট লাগিয়েছিলেন। এ দিন দুর্ঘটনার সময়ে নিজের সেই ছোট্ট সিটেই একা বসে ছিল পলাশ। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় চায়ের দোকানের কর্মী রমেশ পাত্র বলেন, “একটি সাইকেল পড়ে যাওয়ার শব্দ হল। এর পরেই দেখি পাশ দিয়ে যাওয়া একটি লরির ডান দিকের পিছনের চাকা পিষে দিয়েছে কিছুক্ষণ আগে সাইকেলে বসে থাকা শিশুটিকে।” এই দৃশ্য দেখেই এলাকার বাসিন্দা ও পথচারীরা চিৎকার করে তেড়ে যান লরিটির দিকে। কিন্তু ঘটনার গুরুত্ব বুঝে গতি বাড়িয়ে লরি নিয়ে সালকিয়ার দিকে পালিয়ে যায় চালক।

পুলিশ জানায়, ঘাতক লরিটি এবং তার চালকের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে পলাশের দেহ।

তবে এ দিনের এই দুর্ঘটনার জন্য প্রতক্ষ্যদর্শী থেকে স্থানীয় লোকজন— সকলে দায়ী করছেন পলাশের বাবা প্রিয়নাথবাবুকেই। স্থানীয় এক দোকানদারের অভিযোগ, রাস্তার ধারে ও ভাবে একটা দুধের শিশুকে একা ফেলে রেখে যাওয়াটাই তো মস্ত ভুল হয়েছিল। এত বড় ঝুঁকি নেওয়ার জন্যই মূলত এই দুর্ঘটনা ঘটে গেল। স্থানীয় আর এক ব্যক্তি বলেন, “এ রকম ব্যস্ত রাস্তার ধারে এ ভাবে কোনও শিশুকে একা ফেলে রেখে যায় নাকি কেউ!”

নিজেদের পরিবারের এত বড় ক্ষতির জন্য নিজেকেই দায়ী করছেন প্রিয়নাথবাবুও। একা একাই বলে চলেছেন, “আমার ভুলের জন্যই ছেলেটা এ ভাবে চলে গেল।” বারবার একই কথা তাঁর মুখে। কোনও কথাই বলার অবস্থায় নেই মা সরস্বতীদেবী। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কোলের শিশুকে হারানোর খবর শুনে থেকে ক্ষণে ক্ষণেই মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি।

এ দিকে, ঘটনার খবর ছড়াতেই পড়শিদের ভিড় জমে যায় পলাশদের টালির চালার বাড়ি ঘিরে। ওই পাড়ার এক বাসিন্দা জানান, খুব মিশুকে স্বভাবের ছিল শিশুটি। ছোট থেকেই এলাকার সকলের কোলে যায়। পাড়ার সকলেরই খুব প্রিয় সে। এমন মর্মান্তিক ঘটনার খবরে তাই শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোটা অঞ্চলেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE