বৃষ্টি হলেই স্টেডিয়ামের চেহারা। ছবি: রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়।
বর্ষা শুরু হতেই স্টেডিয়ামে ঢোকার মুখে আপনাকে স্বাগত জানাতে তৈরি হাঁটু জল। মাঠের মূল অংশে জল না জমলেও স্টেডিয়ামের উঁচু-নিচু জমি দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে এই মাঠে কোনও টুর্নামেন্টের আয়োজন দুরাশা ছাড়া কিছু নয়।
অথচ, স্থানীয় ক্রীড়াপ্রেমীরা আশা করেছিলেন এই স্টেডিয়ামে বসে কলকাতা ফুটবল লিগের খেলা দেখার সুযোগ মিলবে। কিন্তু কলকাতা লিগ তো দূরঅস্ত, জেলার থানা লিগের খেলাও দেওয়া যায় না এই মাঠে। সকাল-সন্ধে এই মাঠ গবাদি পশুর বিচরণক্ষেত্র। স্বাভাবিক কারণেই স্টেডিয়ামের এমন শোচনীয় দশা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ক্রীড়াপ্রেমীরা। ২০০৯ সালে হাওড়ার সাঁকরাইল ব্লকের আড়গোড়িতে তৈরি হওয়া এই স্টেডিয়ামের আজ পর্যন্ত উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ার জন্য প্রশাসনের উদাসীনতার অভিযোগও উঠেছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, বিভিন্ন ক্লাব এবং ক্রীড়াপ্রেমীদের দাবিতে ২০০৯ সালে হাওড়া সদর কেন্দ্রের তৎকালীন সাংসদ স্বদেশ চক্রবর্তীর সাংসদ তহবিলের টাকা থেকে প্রায় ২৬ লক্ষ টাকা খরচ করে এই স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়েছিল। মাঠের একপাশে তৈরি করা হয় লম্বা হলঘর। যার উপরে তৈরি করা হয় দর্শকদের বসার গ্যালারি। বলাবাহুল্য দেখভালের অভাবে সে সবের অবস্থা খুবই খারাপ। দোতলায় যাওয়ার দরজা প্রায় ভাঙা। সিঁড়িতে ইতিউতি ছড়িয়ে আর্বজনা। শ্যাওলা পড়ে কালো হয়ে গিয়েছে কংক্রিটের আসন। কয়েকটি জায়গায় ভেঙেও গিয়েছে। গত বছর স্টেডিয়ামটির দুরাবস্থা নিয়ে এই পত্রিকায় এক প্রতিবেদন প্রকাশের পর স্থানীয়ভাবে মাঠ সংস্কারে উদ্যোগী হয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু তাতে যে বিশেষ কাজ হয়নি তার প্রমাণ স্টেডিয়ামে ঢুকলেই বোঝা যায়। মাঠটি গ্রামের মূল রাস্তা থেকে অনেক ভিতরে হওয়ায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে সরাসরি মাঠে ঢোকার জন্য একটি রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হয়। রাস্তাটি তৈরি হলেও মাঠ ও স্টেডিয়ামের কোনও সংস্কার হয়নি। ফলে বর্ষা নামলেই মাঠ অনেকাংশই চলে যায় জলের তলায়।
মাঠের দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে স্থানীয় আড়গোড়ি স্পোর্টিং ক্লাব। ক্লাব কর্তারা জানান, স্টেডিয়াম তৈরির সময় মাঠে ভর্তি ঘাস ছিল। কিন্তু এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা খারাপ হওয়ার জন্য সামান্য বৃষ্টিতেই মাঠে জল দাঁড়িয়ে যায়। মাঠের বর্তমানে যা অবস্থা তাতে পুরো মাটি খুঁড়ে নতুন মাটি ফেলতে হবে। লাগাতে হবে নতুন ঘাসের চারা। বদলাতে হবে স্টেডিয়ামের খোলনলচে। ক্লাবের এক কর্তার দাবি, পুরো প্রকল্পটির জন্য প্রায় ৬০ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। কিন্তু অর্থের কোনও সংস্থান না হওয়াতেই আটকে রয়েছে কাজ। স্থানীয় যুবকদের একাংশের দাবি, মাঠের বর্তমান দুরাবস্থার জন্য আড়গোড়ি স্পোর্টিং ক্লাবের বর্তমান কমিটিও দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারে না। স্থানীয় ফুটবলার আমিরুল ইসলাম হালদারের দাবি, “স্টেডিয়ামের সংস্কারের জন্য এলাকার ফুটবলাররা বার বার দাবি জানিয়েছি। কিন্তু ক্লাব আলোচনাতেই বসতে চায় না।” মাঠের সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন হাওড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যকরী সভাপতি দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “মাঠ সংস্কারের জন্য প্রয়োজন বিপুল অর্থের। টাকার সংস্থান না হওয়াতেই কাজ আটকে রয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy