Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভাতা-প্রাপকদের টাকা আত্মসাতে অভিযুক্ত প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর

এলাকার গরিব মানুষদের ব্যাঙ্কের পাশবই থাকত তাঁর কাছে। বার্ধক্য-ভাতা, বিধবা-ভাতা ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি ভাতা তাঁর মাধ্যমে হাতে পেতেন প্রাপকেরা। কিন্তু দিনের পর দিন নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে কম টাকা পাচ্ছিলেন তাঁরা। এমনকী, মৃতদের টাকা তুলে নেওয়ারও উদাহরণ রয়েছে। আর এ জন্য উলুবেড়িয়া পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কিছু মানুষ এলাকার প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর তথা ওই বোর্ডের প্রাক্তন ভাইস-চেয়ারম্যান নাজিমা খানের বিরুদ্ধে তাঁদের টাকা হাতানোর অভিযোগ তুলে মহকুমা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন।

নাজিমা খানের বিরুদ্ধে পোস্টার।-নিজস্ব চিত্র।

নাজিমা খানের বিরুদ্ধে পোস্টার।-নিজস্ব চিত্র।

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:২৮
Share: Save:

এলাকার গরিব মানুষদের ব্যাঙ্কের পাশবই থাকত তাঁর কাছে। বার্ধক্য-ভাতা, বিধবা-ভাতা ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি ভাতা তাঁর মাধ্যমে হাতে পেতেন প্রাপকেরা। কিন্তু দিনের পর দিন নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে কম টাকা পাচ্ছিলেন তাঁরা। এমনকী, মৃতদের টাকা তুলে নেওয়ারও উদাহরণ রয়েছে। আর এ জন্য উলুবেড়িয়া পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কিছু মানুষ এলাকার প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর তথা ওই বোর্ডের প্রাক্তন ভাইস-চেয়ারম্যান নাজিমা খানের বিরুদ্ধে তাঁদের টাকা হাতানোর অভিযোগ তুলে মহকুমা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন। নাজিমা অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।

গত জুলাই মাসেই উলুবেড়িয়ার পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়েছে। বর্তমানে প্রশাসক হিসেবে পুরসভা পরিচালনা করছেন উলুবেড়িয়ার মহকুমাশাসক নিখিল নির্মল। গত ২২ অগস্ট ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কিছু গরিব মানুষ তাঁর দফতরে নাজিমার বিরুদ্ধে ভাতার টাকা হাতানোর অভিযোগ দায়ের করেন। মহকুমাশাসক বলেন, “অভিযোগটি এখনও হাতে আসেনি। যদি সত্যিই তেমন হয়ে থাকে তা হলে বিষয়টি গুরুতর। আমি খোঁজ নিচ্ছি। প্রয়োজনে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এলাকার ভাতা-প্রাপকদের ব্যাঙ্কের পাশবই তাঁর কাছে থাকার কথা মেনে নিয়েছেন নাজিমা। কিন্তু একই সঙ্গে টাকা হাতানোর অভিযোগ উড়িয়ে তাঁর দাবি, “এলাকার নিরক্ষর মানুষেরা ব্যাঙ্কের ব্যাপার বোঝেন না বলে আমার কাছে তাঁদের পাশবই জমা রাখতেন। ভাতা এলে আমি প্রাপকদের খবর দিতাম। আমার লোক ওঁদের ব্যাঙ্কে নিয়ে গিয়ে টাকা তুলিয়ে দিত।” তাঁর সংযোজন, “ব্যাঙ্কের সিসিটিভি ফুটেজ দেখলেই বোঝা যাবে, আমি কোনওদিন ভাতা-প্রাপকদের নিয়ে ব্যাঙ্কে গিয়েছি কিনা। আসলে এ সব বিরোধীদের অপপ্রচার।” ভাতা-প্রাপকেরা কম টাকা পাওয়ার যে অভিযোগ তুলেছেন, তার সদুত্তর দিতে পারেননি নাজিমা। জেলা (গ্রামীণ) তৃণমূল সভাপতি পুলক রায় বলেন, “অভিযোগ যে কেউ করতে পারেন। তবে তদন্তে যদি কেউ দোষী প্রমাণিত হয় তবে দল নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবে।”

স্থানীয় সূত্রের খবর, ব্যাঙ্কে যাতায়াত এড়াতে ওই ওয়ার্ডের চেঙ্গাইল মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকা, মধ্যপাড়া, করুণাপাড়া, দৈবখালি, আয়মাপাড়ার মতো কয়েকটি এলাকার গরিব মানুষ তাঁদের পাশবই নাজিমা এবং তাঁর স্বামীর কাছে রেখে দিতেন। অনেকেই টাকা তোলার ফাঁকা ‘উইথড্রয়াল স্লিপে’ও আগাম সই করে দিতেন। যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের চেঙ্গাইল শাখা থেকে ভাতার টাকা দেওয়া হয়, সেই শাখার কর্তারা জানিয়েছেন, ভাতা-প্রাপকদের টাকা হাতিয়ে নেওয়া সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ দায়ের হলে খতিয়ে দেখা হবে।

কয়েক মাস আগে এক ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি তাঁর বার্ধক্য-ভাতা চালু করার আর্জি নিয়ে নাজিমার কাছে যান। তাঁর পাশবইও নাজিমার কাছে ছিল। বৃদ্ধের অভিযোগ, “নাজিমা জানিয়েছিলেন, আমার বার্ধক্য-ভাতার প্রস্তাব বাতিল হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ব্যাঙ্কে গিয়ে জানতে পারি, আমার ভাতা চালু হয়ে গিয়েছে। চার মাসের ভাতার টাকাও তুলে নেওয়া হয়েছে।” বৃদ্ধের অভিযোগ সামনে আসার পরেই বিষয়টি নিয়ে হইচই বাধে। কংগ্রেস এবং সিপিএম এ নিয়ে সরব হয়। নাজিমার কাছে গিয়ে ভাতা-প্রাপকেরা পাশবই ফেরতের দাবি জানান। কয়েক জনের পাশবই নাজিমা ফেরতও দেন। ব্যাঙ্কে গিয়ে তাঁরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তাঁরা কালেভদ্রে হাতে টাকা পেলেও তাঁদের নামে ভাতার টাকা দু’তিন মাস অন্তর নিয়মিত জমা পড়েছে এবং তা তুলেও নেওয়া হয়েছে।

মাদ্রাসপাড়ার বাসিন্দা নাসির লস্কর বলেন, “বাবা গত বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি মারা যান। অথচ, মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তাঁর নামে জমা পড়া টাকা তুলে নেওয়া হয় ওই বছরের ২০ মার্চ। ওই টাকা তো আমাদের প্রাপ্য ছিল। আমরা কিছুই জানলাম না।” ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইউনুস মল্লিক মারা যান চলতি বছরের ৭ এপ্রিল। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, ইউনুসের নামে জমা টাকা তোলা হয় গত ১২ এপ্রিল। মহম্মদ আলি সানা মারা যান এ বছরের ৫ মার্চ। তাঁর নামে টাকা তোলা হয় গত ১০ মে। এ বিষয়ে তাঁরা কিছুই জানতেন না বলে মৃতদের পরিবারের দাবি।

নাজিমার পাল্টা দাবি, “এই সব দুষ্কর্ম কংগ্রেস ও সিপিএমের স্থানীয় নেতারা করেছেন।” এর পিছনে ব্যাঙ্কের এক শ্রেণির কর্মীর যোগসাজশও রয়েছে।” ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ অভিযোগ মানেননি। কংগ্রেসের স্থানীয় নেতা বাবলু মোল্লার দাবি, “কারচুপিটা আমরাই ধরে ফেলি। তাই আমাদের নিশানা করছেন কাউন্সিলর।” তদন্ত দ্রুত শুরু করার দাবি তোলেন কংগ্রেসের প্রাক্তন পুরপ্রধান সাইদুর রহমান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE