গোঘাটের সেই স্কুল।
বেআইনি চোলাই মদের দোকান স্কুলের গায়েই। রাতে মদ্যপদের নিয়মিত ভুরিভোজের ব্যবস্থা হয় মিড-ডে মিলের উনুনে। স্কুল চত্বরেই পড়ে থাকে মদ্যপদের উচ্ছিষ্ট খাবার এবং এঁটো শালপাতা। মাঝে মাঝে যত্রতত্র বমি। এমনকী মলমূত্রও।
গোঘাটের পূর্ব অমরপুর নগেন্দ্র উপেন্দ্র বিদ্যানিকেতন (হাইস্কুল)-এর নিত্যদিনের চিত্র এটাই। প্রতিদিন স্কুল শুরুর আগে শিক্ষক এবং স্কুলের রান্নার মহিলাদের ওই আবর্জনা সাফাই করাটা রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে এই অসামাজিক পরিবেশ থেকে মুক্তি জন্য তাঁদের দাবি দীর্ঘদিনের। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, এলাকায় তৃণমূলের একটি গোষ্ঠীর মদতেই ওই চোলাই দোকান চলছে। প্রধান শিক্ষক উজ্জ্বলপ্রসাদ রায় বলেন, “সাহায্যের জন্য পঞ্চায়েতকে একাধিকবার জানিয়েছি। কোনও লাভ হয়নি।”
স্কুলটি তৃণমূল পরিচালিত কুমুড়শা পঞ্চায়েত এলাকায়। পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের হানুফা বেগমের দাবি, “স্কুলে অসামাজিকতার কথা জানতে পেরে ওই সংসদের পঞ্চায়েত সদস্য বিকাশ সরকারকে বিষয়টা নিয়ে পদক্ষেপ করতে বলেছিলাম। তিনি গুরুত্ব দিচ্ছেন না।” দলের আর এক নেতা সমর কোলেও বিকাশবাবুর ‘ভূমিকা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিকাশবাবুর পাল্টা অভিযোগ, “দলের একাংশের ইন্ধনেই এ সব অসামাজিকতা চলছে। আমি প্রতিবাদ করতে গেলে বাড়িতে এসে হুমকি দিচ্ছি ওরা।”
স্কুল থেকে ১০০ মিটার দূরে সংশ্লিষ্ট দোকানটি থেকে চোলাই ছাড়াও দেশি এবং বিদেশি মদও বিক্রি হয়। ওই গ্রামে কোনও বৈধ মদের দোকান যে নেই, সে কথা জানিয়েছেন আরামবাগ মহকুমা আবগারি দফতরের ওসি চিরঞ্জীব সরকার। ওই গ্রামেরই তাপস নন্দী নামে এক ব্যক্তি বছর পাঁচেক ধরে চোলাই ব্যবসাটি চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ। স্কুলটিতে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ৪০০। তাদের মধ্যে দু’শো জনের জন্য প্রতিদিন মিড ডে মিল রান্না হয়। শিক্ষক রয়েছেন ১৪ জন। প্রতিদিন সকালে তাঁদের মধ্যে অন্তত পাঁচ জনের তত্ত্বাবধানে স্কুল চত্বর পরিষ্কারের পালা চলে। আর এ জন্য সকাল ১০টায় স্কুল শুরু হলেও তাঁদের অন্তত আধ ঘণ্টা আগে আসতে হয়।
চোলাইয়ের দোকান।
এক শিক্ষকের কথায়, “প্রতিদিন সকালে স্কুলে এসে ওই সব আবর্জনা পরিষ্কার করতে কার ভাল লাগে? তবু করতে হয়। মিড ডে মিল রান্নার জায়গাও অপরিষ্কার করে রাখে মদ্যপেরা।” প্রধান শিক্ষকের দাবি, “পুলিশ এবং আবগারি দফতর মদের দোকানটি বৈধ কিনা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিক।”
মঙ্গলবার অবশ্য উজ্জ্বলবাবুরা পাশে পেয়ে যান গোঘাট থানায় কর্মরত ‘সিভিক ভলান্টিয়ার্স’-এর তিন কর্মীকে। সুব্রত রায়, সুশান্ত সরকার এবং হাসান মোল্লা নামে ওই তিন কর্মী স্থানীয় একটি হিমঘরে ‘ডিউটি’ দিতে এসেছিলেন। মদের দোকানের কাছে জমায়েত হওয়া লোকজনকে তাঁরা সরিয়ে দেন। দোকানে তালা মেরে সরে যান চোলাই ব্যবসায়ী।
তবে, এ দিনের ঘটনাকে নিছকই ব্যতিক্রম হিসেবে দেখছেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের অভিযোগ, রাজনৈতিক মদতেই যেখানে চোলাই কারবার চলে, সেখানে কে প্রতিবাদ দেখাবে? স্কুলের প্রাচীর না থাকায় রাতে সেখানে নানা অসামাজিক কাজকর্মও চলে। চোলাই ব্যবসায়ী তাপসবাবু নিজেকে শাসক দলের কর্মী হিসেবে দাবি করে বলেন, “আমার দোকানের যে অনুমতি নেই, তা জানি। নেতারাও জানেন। মদ খেয়ে কেউ স্কুল নোংরা করলে আমার কী করার আছে?”
আবগারি দফতর জানিয়েছে, অবৈধ ভাবে ওই গ্রামে কেউ চোলাই ব্যবসা করলে খতিয়ে দেখে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ জানিয়েছে, ইতিমধ্যে কয়েক বার ওই গ্রামে তল্লাশি চালানো হয়েছে। তবে, কাউকে ধরা যায়নি। জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, ওই গ্রামে বেআইনি মদের দোকান বন্ধে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
—নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy