Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
আতঙ্কের চুঁচুড়া/ ৩

মস্তান-নেতার যোগসাজশে অসহায় পুলিশ

রাজনৈতিক নেতা আর মস্তানদের সহাবস্থানে এখন অনেকটাই ধন্ধে পুলিশ-প্রশাসন। আর এই ধন্ধ আরও বেড়েছে চাকরির নানা শর্ত আর ‘পছন্দের’ পোস্টিংকে কেন্দ্র করে। ওসি থেকে থানা, থানা থেকে ডিএসপি, তারও উঁচুতলায় পোস্টিংয়ের ঘুঁটি এখন অনেকটাই লাল ছেড়ে সবুজায়নের মোড়কে ঢাকা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৪০
Share: Save:

রাজনৈতিক নেতা আর মস্তানদের সহাবস্থানে এখন অনেকটাই ধন্ধে পুলিশ-প্রশাসন। আর এই ধন্ধ আরও বেড়েছে চাকরির নানা শর্ত আর ‘পছন্দের’ পোস্টিংকে কেন্দ্র করে।

ওসি থেকে থানা, থানা থেকে ডিএসপি, তারও উঁচুতলায় পোস্টিংয়ের ঘুঁটি এখন অনেকটাই লাল ছেড়ে সবুজায়নের মোড়কে ঢাকা। মস্তান ছাড়া দলীয় রাজনীতি এখন অনেকটা সোনার পাথর বাটির মতো। মস্তান আর দলীয় রাজনীতির আবর্তে পুলিশ এখন কার্যত নির্বিষ। কলকাতা ও রাজ্যে পুলিশের কর্তারা শক্ত হাতে প্রশাসন চালাতে গিয়ে যখনই কঠোর হয়েছেন তাঁকে টেনে নামানো হয়েছে রাজপথে। আর এর জেরে আগা থেকে গোড়া আলগা হয়েছে প্রশাসন। যার আবহে ব্যতিক্রম নয় চুঁচুড়াও।

হুগলির থানা, ফাঁড়ি বা ব্যক্তিগত স্তরে কোনও অভিযোগ এলেই পুলিশ তটস্থ। প্রথমেই তদন্ত হয় অভিযুক্ত ব্যক্তির রাজনীতির রঙ নিয়ে। তা না হলেও নিস্তার নেই। কোনও অভিযোগের সাপেক্ষে পুলিশ কাউকে তুলে নিয়ে এলেই অবধারিতভাবে বেজে ওঠে ফোন। নানা অনুরোধের মোড়কে নির্দেশ পৌঁছে যায় ছোট, বড় অথবা কোনও মেজ নেতার। তারপর সেই অনুরোধের সাপেক্ষে পুরো ঘটনা থানার বড়বাবুর কানে তুলে শুরু হয়ে যায় অপরাধের ‘চুল চেরা বিচার’।

প্রশাসনের এই দোলাচলের আবর্তেই হুগলির চুঁচুড়া ও বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে মস্তানরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কেন না, তাঁরা জেনে গিয়েছে নেতাদের ফোন থানায় গেলেই সাত খুন মাপ। আর তাই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এলাকায় অপরাধমূলক কাজকর্ম। বাইরের বাহুবলীরা এসে ভিড় করছে এলাকায় বাড়ছে মহিলাদের উপর অপরাধের প্রবণতা।

চুঁচুড়ায় জমি বাড়ির দালালি থেকে ঠিকাদারি, অটোর লাইসেন্স, টোটোর পথ চলা সবই ঠিক করে এই সব বাহুবলীরা। ভুক্তভোগী চুঁচুড়ার এক প্রবীণ বাসিন্দার কথায়, “সম্প্রতি ছেলের অটোর লাইসেন্স নিয়ে একটু সমস্যা হয়। ছেলে সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরে গেলেও কোনও ফল হয়নি। বলা হয় ‘অমুকের’ সঙ্গে কথা বলতে। তারপর উত্তর ২৪ পরগনা থেকে আসা সেই যুবকের অঙ্গুলি হেলনেই নির্দিষ্ট নজরানা দিলে বিষয়টির মীমাংসা হয়।”

ছেলের ওই ঘটনার পর প্রবীণের ‘অবুঝ’ প্রশ্ন, ‘‘আমাদের মতো গরিবেরা তাহলে যাবে কোথায়”

জেলা সদরের বৃত্ত ছাড়িয়ে সর্বত্রই এখন এই প্রশ্ন। অবশ্যই জানা নেই উত্তর। যদিও জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তার সাফাই, “সবকিছু ঠিকঠাক চলছে। জনসংখ্যা বাড়লে ক্রাইম রেট তো কিছুটা বাড়বেই। অথচ পুলিশের সংখ্যা তো হাতেগোনা।”

(শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

southbengal chinsurah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE