Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

রমেশের জোড়া মেয়ের বিয়ে, জেগে রইল পুলিশ

সদ্য জেল থেকে বেরিয়েছেন তিনি। বেরিয়ে আর দেরি করেননি। সদ্য সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন মিলেছে। কিন্তু পুলিশের ভাবগতিক ভাল নয়। কে জানে, কবে আবার ধরে ঢুকিয়ে দেয়? তড়িঘড়ি তাই একই সন্ধেতে দুই মেয়ের বিয়ে দিলেন রমেশ মাহাতো লিলুয়া থেকে শ্রীরামপুর-ডানকুনি পর্যন্ত তামাম এলাকার জমি কেনাবেচা আর প্রোমোটারি ব্যবসার ‘ডন’।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৫ ০৩:৩৮
Share: Save:

সদ্য জেল থেকে বেরিয়েছেন তিনি। বেরিয়ে আর দেরি করেননি।

সদ্য সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন মিলেছে। কিন্তু পুলিশের ভাবগতিক ভাল নয়। কে জানে, কবে আবার ধরে ঢুকিয়ে দেয়?

তড়িঘড়ি তাই একই সন্ধেতে দুই মেয়ের বিয়ে দিলেন রমেশ মাহাতো লিলুয়া থেকে শ্রীরামপুর-ডানকুনি পর্যন্ত তামাম এলাকার জমি কেনাবেচা আর প্রোমোটারি ব্যবসার ‘ডন’।

বালি নিশ্চিন্দায় তরুণ সঙ্ঘের মাঠে বিপুল খানাপিনার আয়োজন। উড়ে-উড়ে ছবি তুলছে ড্রোন। চেনামুখ তৃণমূল কাউন্সিলর থেকে মার্কামারা গুন্ডা, সব এক ঘাটে ‘জল’ খেল, উড়িয়ে গেল মুরগি-মটন। কখন কী ঘটে যায় ভেবে শুধু তল্লাটের রাস্তায় রাত জেগে মশা মেরে গেল পুলিশ!

পুলিশের আর গতিই বা কী?

বেনারস থেকে এসে মৌরসী পাট্টা গেঁড়ে বসা রমেশ তো আর যে-সে লোক নন। এককালে কোন্নগরের হুব্বা শ্যামলের ডান হাত, পরে হুব্বা খুনে অভিযুক্ত হয়েও সাক্ষীর অভাবে বেকসুর খালাস। পঞ্চাশ ছুঁই-ছুঁই বয়স, বরফ-ঠান্ডা মাথা, তাঁর সঙ্গে ঝামেলা করে হাওড়া-হুগলির বিস্তীর্ণ এলাকায় জমি-বাড়ির কারবার করা কার্যত অসম্ভব। অনেক নেতার সঙ্গেও তাঁর যথেষ্ট দহরম-মহরম। গত বিধানসভা ভোটে নিজে দাঁড়ানোর তোড়জোড়ও করেছিলেন, পুলিশের বাধায় হয়নি।

এ হেন রমেশের মেয়ের বিয়েতে যে বেনারসি বাপি, নেপুয়া, হুলো-কেলোর মতো দাগিরা (আপাতত জেলের বাইরে) আসবে, পুলিশ তা জানত। নেমন্তন্ন থাকলেও শম্ভু রায় খুনে সদ্য জেলে ঢোকায় আফজল বা হুব্বা শ্যামলের ভাই বাচ্চু আসতে পারেনি। শ্রীরামপুর, রিষড়া, কোন্নগর, বালি, উত্তরপাড়ার কিছু তৃণমূল নেতা-কাউন্সিলর হাজির, ছিলেন সিপিএম নেতা মায় প্রাক্তন কাউন্সিলরেরাও।

সন্ধে নামতেই মাইক হাতে নিয়েছেন বার-গায়িকারা। সঙ্গে নাচ। ‘এক বার লুঙ্গি ডান্স হয়ে যাক’ আওয়াজ উঠেছে ভিড় থেকে। শুরুতে মহিলা ও শিশুদের জন্য নরম পানীয়। পরে দোস্তদের জন্য নামী-দামি ব্র্যান্ডের বোতল উপুড় হয়েছে। ঘুরে-ঘুরে হাতজোড় করে জনে-জনে রমেশের প্রশ্ন, “খাওয়া হয়েছে তো? অসুবিধা হয়নি তো?” বাঙালিদের বাংলায়, অবাঙালিদের চোস্ত হিন্দিতে। বিয়ের কার্ডও হয় হিন্দি আর ইংরেজিতে।

উত্তরপাড়া, বালি ও নিশ্চিন্দা এই তিন থানার পুলিশ শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত তটস্থ থেকেছে। যদি উৎসাহের চোটে কোনও অনর্থ ঘটে? বা রমেশের বিরুদ্ধ গোষ্ঠী নিয়ে হামলা চালায়? হাওড়া কমিশনারেটের এক পুলিশকর্তা বলেন, “রমেশকে টক্করের মতো বুকের পাটা এখন কারও নেই।”

বসন্তরাত জেগে পুলিশ শুধু মাছি আসতে, মাছি উড়ে যেতে দেখেছে। আর বাতাস শুঁকেছে। খানাপিনা না জুটুক, অন্তত একটা চেনামুখের লিস্টি যদি তৈরি করে ফেলা যায়, পরে কাজেও তো লেগে যেতে পারে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ramesh mahato gautam bandyopadhyay chinsura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE