Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রাজ্য থেকে পাততাড়ি গোটাচ্ছে মদের কারখানা, চুপ নেতারা

রাজ্যে নতুন শিল্পের দেখা নেই। শিল্পের বেহাল পরিকাঠামো নিয়ে প্রতিদিন বিরোধীরা বিঁধে চলেছে রাজ্যের শাসক দলকে। এই পরিস্থিতিতে হুগলির শ্রীরামপুরে মদ তৈরির একটি কারখানা কার্যত পাততাড়ি গুটিয়ে ফেলছে। বেশ কিছু দিন ধরে সেখানে কাজ বন্ধ। স্থায়ী শ্রমিকদের স্বেচ্ছা অবসর দেওয়া হচ্ছে। অন্য শ্রমিকদেরও পাওনাগণ্ডা মিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

শ্রীরামপুরের এই কারখানাই বন্ধ হতে বসেছে। —নিজস্ব চিত্র।

শ্রীরামপুরের এই কারখানাই বন্ধ হতে বসেছে। —নিজস্ব চিত্র।

প্রকাশ পাল
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৫ ০১:১৫
Share: Save:

রাজ্যে নতুন শিল্পের দেখা নেই। শিল্পের বেহাল পরিকাঠামো নিয়ে প্রতিদিন বিরোধীরা বিঁধে চলেছে রাজ্যের শাসক দলকে। এই পরিস্থিতিতে হুগলির শ্রীরামপুরে মদ তৈরির একটি কারখানা কার্যত পাততাড়ি গুটিয়ে ফেলছে। বেশ কিছু দিন ধরে সেখানে কাজ বন্ধ। স্থায়ী শ্রমিকদের স্বেচ্ছা অবসর দেওয়া হচ্ছে। অন্য শ্রমিকদেরও পাওনাগণ্ডা মিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

কারখানা সূত্রের দাবি, তাঁদের ব্যবসায় মন্দা চলছে। তা ছাড়া শ্রীরামপুরে ঘনবসতিপূর্ণ ওই এলাকায় কারখানা চালানোর মতো উপযুক্ত পরিকাঠামোও নেই। তবে, সূত্রের খবর, শাসক দলের নেতাদের বদান্যতায় ঠিকাশ্রমিক উদ্বৃত্ত হয়ে গিয়েছিল। নতুন করে লোক নেওয়ার জন্য চাপ বাড়ছিল। কারখানা বন্ধের পিছনে এটিও একটি কারণ বলে শ্রমিক মহলে জোর জল্পনা। শ্রম দফতরের দাবি, মালিকপক্ষ বা শ্রমিক সংগঠনের তরফে তাদের কিছুই জানানো হয়নি। তবে, শিল্পের বেহাল অবস্থায় ওই প্ল্যান্ট বন্ধের দিকে এগিয়ে যাওয়ায় প্রশাসন অস্তস্তিতে। স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক সুদীপ্ত রায় বলেন, “আমি ওই প্ল্যান্টের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। মন্দার কারণে ওরা প্ল্যান্ট বন্ধ করবেন বলে ঠিক করেছেন। বিষয়টি নিয়ে শ্রমমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।”

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন দশকেরও বেশি সময় আগে শ্রীরামপুরের জাননগর রোডে ওই প্ল্যান্ট তৈরি হয়। বন্ধ হওয়ার আগে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় দু’শো শ্রমিক ছিলেন। বছর কয়েক ধরে সমস্যা তৈরি হয় শাসক দলের স্থানীয় এক নেতার অতিরিক্ত লোক ঢোকানো নিয়ে। অভিযোগ, তাঁর চাপাচাপিতে গত তিন বছরে প্রায় পঞ্চাশ জন ঠিকা শ্রমিক নিতে বাধ্য হন কর্তৃপক্ষ। এই শহরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, জেলার এক তৃণমূল বিধায়কের সুপারিশেও লোক নিতে হয়। স্থানীয় আরও কিছু নেতার লোকজনও লোক ঢোকাতে তদ্বির শুরু করেন। অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়ে বছর দেড়েক ধরে কারখানা খোঁড়াতে থাকে। মাস দেড়েক আগে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সূত্রের খবর, ওই প্ল্যান্টটির মালিক ছিলেন বিজয় মাল্য। কিছু দিন আগে তাঁর থেকে সংস্থার অনেকটা শেয়ার কিনে নেয় বিদেশী একটি সংস্থা। শ্রমিকদের অভিযোগ, তারা ধাপে ধাপে কারখানা বন্ধ করার দিকে এগোতে থাকে। আইএনটিটিইউসি বা সিটু কেউই এ নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করেনি। উল্টে, তাদের সায় নিয়েই কর্তৃপক্ষ স্থায়ী শ্রমিকদের আগাম অবসরের কথা ঘোষণা করে। ক্ষতিপূরণ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। শ্রমিকদের বক্তব্য, “আমরা কাজ হারাচ্ছি। ইউনিয়নের নেতারাই তো বিষয়টি নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করবেন! কিন্তু তাঁদের ভূমিকা দেখলাম বিপরীতমুখী।” কাজ হারিয়ে শ্রমিকরা সংসার চালাতে সমস্যায় পড়েছেন। অনেকে ছোটখাটো কাজ বেছে নিয়েছেন। প্ল্যান্টের জমিতে প্রোমোটারি করার দূরভিষন্ধি রয়েছে কি না, সেই প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে এলাকায়। সিটু নেতা স্বরাজ ঘোষের দাবি, “কর্তৃপক্ষ লোকসানের কারণ দেখিয়ে কারখানা চালাতে চাইলেন না। কর্তৃপক্ষের লোকজনের সঙ্গে অসামাজিক কিছু লোকের গাঢ় সম্পর্ক রয়েছে। তাই সবাই ভীত।” তাঁর সংযোজন, “কারখানা বন্ধ হলেও স্থায়ী শ্রমিকদের খুব একটা সমস্যা হবে না। ওঁরা ক্ষতিপূরণ পেয়ে যাচ্ছেন।” শ্রমিকরা অবশ্য সে কথা মানেননি।

শ্রীরামপুরের উপ শ্রম কমিশনার অমল মজুমদার বলেন, “ওই প্ল্যান্টে কোনও সমস্যা আছে বলে তো আমরা জানি না! মালিক বা শ্রমিক পক্ষ এ ব্যাপারে কোনও কোনও নোটিস দেয়নি আমাদের। কোনও শ্রমিকও অভিযোগ জানাননি।” দফতরের অন্য এক অফিসার বলেন, “প্ল্যান্টটি বন্ধের প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে, শুনছি। কোনও শ্রমিক অভিযোগ করলেও তদন্ত করে দেখা যেত।”

আইএনটিটিইউসি নেতা মন্টু দত্তের দাবি, “ঠিকা শ্রমিক মোটেই বেশি ছিল না। মালিকই কারখানা চালাতে চান না। আমি চেয়েছিলাম এ ব্যাপারে সরকারের হস্তক্ষেপ চাইব। কিন্তু অনেকে বলল, সে ক্ষেত্রে শ্রমিকদেরই পাওনাগণ্ডা পেতে সমস্যা হতে পারে। তাই কিছু করিনি।”

মন্টুবাবুর কথায়, “বিজয় মাল্যের অধীনে কারখানা ভালই ছিল। নতুন মালিকপক্ষই সমস্যা তৈরি করলেন।” বিধায়ক সুদীপ্তবাবুর বক্তব্য, “ঠিকা শ্রমিক প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ছিল ঠিকই। কিন্তু প্ল্যান্ট বন্ধের কারণ সেটা নয়।”

বুধবার দুপুরে কারখানায় টেলিফোন করা হলে এক জন বলেন, “আমি এখানকার পিওন। কোনও অফিসার এখন নেই। কোনও শ্রমিকও নেই।” কারখানা বন্ধের তোড়জোড় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এ সব নিয়ে কিছু বলতে পারব না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

prakash pal serampore southbengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE