Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

রিভলভার ‘ভিজবে’ বলে পুলিশ ডাঙায়, জলে নেমে পালাল চোর

কোমরে গোঁজা রয়েছে রিভলভার। তবুও গঙ্গার পাড়ে দাঁড়িয়ে হাপিত্যেশ করছেন চার গোয়েন্দা পুলিশ। কেন? যুক্তি, জলে ঝাঁপ দিলে বন্দুক ভেসে যেতে পারে। আর সেই সুযোগে সাঁতরে পগাড়পার হয়ে গেল তিন চোর!

অঙ্কন: সুমিত্র বসাক।

অঙ্কন: সুমিত্র বসাক।

শান্তনু ঘোষ
শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৪ ০১:৪০
Share: Save:

কোমরে গোঁজা রয়েছে রিভলভার। তবুও গঙ্গার পাড়ে দাঁড়িয়ে হাপিত্যেশ করছেন চার গোয়েন্দা পুলিশ। কেন? যুক্তি, জলে ঝাঁপ দিলে বন্দুক ভেসে যেতে পারে। আর সেই সুযোগে সাঁতরে পগাড়পার হয়ে গেল তিন চোর!

হাত থেকে চোর ফসকে গেল ঠিকই, তবে গোয়েন্দাদের তাড়া খেয়ে জলে ঝাঁপ দেওয়ার আগে চোরাই মালপত্র তারা ফেলে রেখে যায়। তাই গোয়েন্দাদের দাবি, চোর ধরা না পড়লেও মালপত্র-সহ আস্ত একটি অটো তো উদ্ধার হয়েছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে বালিতে ঘটনাটি ঘটে।

গত ক’মাস ধরেই বালি জুড়ে চুরির ঘটনা বেড়েছে। বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে রাতের অন্ধকারে সাফ হয়ে যাচ্ছে দু’তিন তলা বাড়ি। চুরির পাশাপাশি ফ্রিজ খুলে আম, দুধ, ডিম খেয়ে এসি চালিয়ে আরামও করছে চোরেরা। একের পর এক চুরির ঘটনার কিনারা না হওয়ায় যথেষ্ট বিড়ম্বনায় পড়েছেন হাওড়া সিটি পুলিশের কর্তারা। এক কর্তার কথায়, “এই চোরগুলো একটাও এলাকার নয়। সব বাইরের, অন্য জেলার। সন্ধ্যে হতেই বালিতে চলে আসছে। আর রাতে হাতসাফাই করছে।”

বালি জুড়ে চুরি আটকাতে এ বার সারা রাত রাস্তায় গোয়েন্দাদের টহল দিতে নামিয়েছেন পুলিশকর্তারা। মোটরবাইকে চড়ে সাধারণ যুবকদের মতো তাঁরাও চষে বেড়াচ্ছেন মেন রাস্তা থেকে তস্য গলি। মঙ্গলবার রাতে এই টহলদারির সময়েই লালবাবা কলেজের সামনে তিন চোরের মুখোমুখি হন তাঁরা।

গোয়েন্দারা দেখেন কলেজের সামনের একটি দোকানের শাটার অল্প ফাঁক করে তার তলা দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে বেরোচ্ছে তিন যুবক। এই দৃশ্য দেখে দুঁদে গোয়েন্দাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না যে ওই তিন জন আসলে চোর। তবে ওই তিন যুবকও পাকা চোর। অদূরে দু’টি মোটরবাইকে বসে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকা চার জনকে দেখে চোরেরাও বুঝে যায় পিছনে পুলিশ পড়েছে। তড়িঘড়ি অটোয় উঠে ফাঁকা জিটি রোড ধরে উর্দ্ধশ্বাসে বেলুড় মঠের দিকে পালাতে থাকে চোরের দল। ছাড়ার পাত্র নন চার গোয়েন্দাও। তাঁরাও মোটরবাইক নিয়ে তাড়া করেন অটোটিকে। গোয়েন্দাদের একটি মোটরবাইক অটোর পাশে এসে চালককে লাথি মারতে থাকেন। কিন্তু মরিয়া হয়ে অটো নিয়ে পালাতে পালাতে হেমপাল লেন গলিতে ঢুকে যায় চোরেরা। ঘিঞ্জি গলির মধ্যে ধাওয়া করতে গিয়ে অটোর পিছনে চলে যায় গোয়েন্দাদের মোটরবাইক। বেলুড় মঠ ফাঁড়ির সামনে পৌঁছে অটো থেকে কোনও মতে নেমেই বেলুড় মঠ জল প্রকল্পের পাঁচিল টপকে ভিতরে ঢুকে যায় তিন চোর। গোয়েন্দারাও তাদের ধাওয়া করে পাঁচিল টপকে ভিতরে ঢোকেন। পুলিশকে পাঁচিল টপকাতে দেখে আর ঝুঁকি নেয়নি তিন চোর। কোনও দিকে না ছুটে সোজা রেলিং টপকে গঙ্গায় ঝাঁপ দেয় তারা। আর এখানেই আটকে যান গোয়েন্দারা। কোমড়ে গোঁজা পিস্তল হারিয়ে যেতে পারে এই আশঙ্কায় তাঁরা আর জলে ঝাঁপানোর ঝুঁকি নেননি।

এর পরে অবশ্য গঙ্গার বিভিন্ন ঘাটে তল্লাশি করেও ওই চোরেদের সন্ধান মেলেনি। তবে অটো থেকে উদ্ধার হয় জামকাপড়, মোবাইল-সহ নগদ কয়েক হাজার টাকা এবং তালা ভাঙার লোহার রড। পুলিশ জেনেছে, লালবাবা কলেজের সামনের দোকানের ভিতরে ঘুমোচ্ছিলেন কর্মীরা। শাটার তুলে ভিতরে ঢুকে তাঁদের বেহুশ করেই হাতসাফাই করেছিল তিন চোর। তার আগে বেলুড় এলাকা থেকেই অটোটিও চুরি করেছিল।

হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, এক বার পালিয়েছে, বার বার পারবেনা। আমরা খুব তাড়াতাড়ি চোরের দলকে ধরে ফেলব।” আপাতত অবশ্য ‘চোরের সাত দিন গৃহস্থের এক দিন’ এই প্রবাদেই ভরসা রাখছেন হাওড়ার সিটি পুলিশের কর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE