Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

শ্রীমানি বাড়িতে আড়াই কিলো চালের নৈবেদ্য পান দশভুজা

কথায় আছে বারো মাসে তেরো পার্বন। হুগলির গঙ্গাপাড়ের জনপদ রিষড়ার শ্রীমানী পরিবারেও বছরভর লেগে রয়েছে নানা পার্বনের ধুম। যার মাথায় রয়েছে দুর্গাপুজো। রিষড়ায় এই পরিবারের ঠিক কত পুরুষের বাস, পরিবারের সদস্যদের কাছেও তার সঠিক হিসাব নেই।

প্রকাশ পাল
রিষড়া শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:৫৭
Share: Save:

কথায় আছে বারো মাসে তেরো পার্বন। হুগলির গঙ্গাপাড়ের জনপদ রিষড়ার শ্রীমানী পরিবারেও বছরভর লেগে রয়েছে নানা পার্বনের ধুম। যার মাথায় রয়েছে দুর্গাপুজো। রিষড়ায় এই পরিবারের ঠিক কত পুরুষের বাস, পরিবারের সদস্যদের কাছেও তার সঠিক হিসাব নেই। তবে স্থানীয় ভাবে জানা গিয়েছে, আড়াইশো-তিনশো বছর আগে কৃষ্ণচন্দ্র শ্রীমানির আমলে বা তাঁর পিতার তত্ত্বাবধানে পরিবারে শুরু হয়েছিল দুর্গাপুজো।

তবে নিয়ম করে, যথাযথ প্রথা অনুসারে পুজো শুরু হয় কৃষ্ণচন্দ্রের স্ত্রীর হাত ধরে। সে সময় পর্দাপ্রথার বাড়াবাড়ি থাকলেও পুজোকে তা স্পর্শ করেনি। কৃষ্ণচন্দ্রের স্ত্রীর পিত্রালয়ের কুলদেবতা নারায়ণ অধিষ্ঠিত হন এই পরিবারে। আজও নৈবেদ্য, ভোগ-সহ তাঁর নিত্যপুজো হয়। পরিবারের জ্যেষ্ঠ গৌরীদেবী জানালেন, বাড়িতে দেবী দুর্গা পুজিত হন মেয়ে হিসেবে। জন্মাষ্টমীতে কাঠামো পুজোর পরে প্রতিমা তৈরি শুরু হয়। পঞ্চমীর বিকেলে দেবীর চক্ষুদান হয়। সারারাত ধরে দেবীকে সাজানো হয়। বাড়িতেই নানা ধরনের মিষ্টি, নারকেল নাড়ু তৈরি হয়। কর্মসূত্রে পরিবারের সবাই এক জায়গায় থাকতে পারেন না। কিন্তু পুজোর চারটে দিন সকলেরই ঠিকানা রিষড়ার বাড়ি। চার দিন ধরে দেদার আড্ডা, ভুরিভোজ সাবেক দালানে।

পরিবারের সদস্যদের বিশ্বাস, বেলগাছের নীচে বোধনতলায় মহাদেব চার দিন অপেক্ষা করে থাকেন। পরিবারের বর্তমান সদস্য মৌমিতা শ্রীমানি জানান, প্রতিদিন মা দুর্গার পুজোর আগে বোধন ঘরে শঙ্খ, ঘণ্টা, বাদ্য সহযোগে শিবের পুজো করা হয়। সপ্তমীর সকালে বড় পিতলের ঘট বসে। প্রতিদিন আড়াই কিলোগ্রাম চালের নৈবেদ্য দেওয়া হয় দেবীকে। জলখাবার থেকে ফলাহার কিংবা সকালের দাঁতন বা মুখ ধোওয়ার পরে পান, মা দুর্গার জন্য সব কিছুরই পরিপাটি আয়োজন থাকে শ্রীমানি বাড়িতে। হোম, ধুনো পোড়ানো, কুমারি পুজোরও রেওয়াজ রয়েছে।

দশমীর সকালে বিষাদের মধ্যেই নির্দিষ্ট পাত্রে রাখা জলে মায়ের প্রতিবিম্ব দেখে আশীর্বাদ নেন পরিবারের সদস্যরা। তারপর কাঠামোর দু’পাশে বাঁশ বেঁধে পালকির কায়দায় পরিবারের পুরুষ সদস্যরা মাকে নিয়ে যান গঙ্গায়। সকলেরই পরনে থাকে পাটভাঙা সাদা ধুতি। পূর্বপুরুষের প্রতিষ্ঠিত পরিবারের নামাঙ্কিত ঘাট থেকে সপরিবারে মাকে নৌকোয় তোলা হয়। দু’টি নৌকোর মাঝে কাঠের পাটাতনে থাকেন দেবী। মাঝগঙ্গায় নিয়ে গিয়ে পাটাতনগুলি সরিয়ে বিসর্জিত হন দেবী।

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE