Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

শিল্পে ফেলে আসা সুদিন ফিরুক, চায় বাঁশবেড়িয়া

ইতিহাস আশ্রিত গঙ্গাপারের এই শহরের এক সময় শিল্পেও যথেষ্ট নামডাক ছিল। ছিল সমৃদ্ধি। এই সমৃদ্ধির অন্যতম কাণ্ডারী ছিল ডানলপ কারখানা। দেশের মধ্যে রবার ইন্ডাস্ট্রিতে এক সময়কার গর্ব হুগলির সাহাগঞ্জের এই কারখানা কয়েক হাজার মানুষের জীবিকার নিশ্চিত এবং নিরাপদ ঠিকানা ছিল। শুধু দেশের ভিতরেই নয়, ডানলপের রবারজাত পণ্যের খ্যাতি ছড়িয়েছিল দেশের বাইরেও। দেশের অন্য কারখানায় রবারজাত যে সব জিনিসপত্র উৎপাদন হত না, তাই হত ডানলপে। এখানকার দক্ষ শ্রমিক আর কাজের পরিবেশ উদাহরণ ছিল অন্যদের কাছে।

বন্ধ ডানলপ

বন্ধ ডানলপ

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:০৩
Share: Save:

ইতিহাস আশ্রিত গঙ্গাপারের এই শহরের এক সময় শিল্পেও যথেষ্ট নামডাক ছিল। ছিল সমৃদ্ধি।

এই সমৃদ্ধির অন্যতম কাণ্ডারী ছিল ডানলপ কারখানা। দেশের মধ্যে রবার ইন্ডাস্ট্রিতে এক সময়কার গর্ব হুগলির সাহাগঞ্জের এই কারখানা কয়েক হাজার মানুষের জীবিকার নিশ্চিত এবং নিরাপদ ঠিকানা ছিল। শুধু দেশের ভিতরেই নয়, ডানলপের রবারজাত পণ্যের খ্যাতি ছড়িয়েছিল দেশের বাইরেও। দেশের অন্য কারখানায় রবারজাত যে সব জিনিসপত্র উৎপাদন হত না, তাই হত ডানলপে। এখানকার দক্ষ শ্রমিক আর কাজের পরিবেশ উদাহরণ ছিল অন্যদের কাছে। প্রতিযোগিতার বাজারে ধারে এবং ভারে ডানলপের কাছাকাছিও কেউ ছিল না। যুদ্ধে ব্যবহৃত প্লেনের এ্যারোটায়ার দেশের মধ্যে একমাত্র সাহাগঞ্জের এই কারখানাতেই তৈরি হত।

তবে শুধু ডানলপ নয়, বাঁশবেড়িয়া এবং লাগোয়া বিস্তীর্ণ এলাকা একসময় রীতিমত সম্ভ্রান্ত ছিল অন্যান্য শিল্পে। শুধু জেলা বা রাজ্যের নয়, দেশের শিল্প মানচিত্রেও উল্লেখযোগ্য স্থান ছিল বাঁশবেড়িয়ার। আর্থিক দিক দিয়ে সে সময় এলাকার মানুষজন রীতিমত সম্পদশালী ছিলেন।

জেলার প্রাচীন মিলগুলির মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য এখানকার গ্যাঞ্জেস জুটমিল। এখনও সেখানে কম করেও অন্তত দশ হাজার শ্রমিক কাজ করেন সেখানে। কিন্তু বর্তমানে সারা রাজ্যেই জুটমিলের উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা খুব খারাপ অবস্থায়। তার জেরে সঙ্কটে পড়েছে এই শিল্প। আগে মিলগুলিতে পুরো সপ্তাহেই যেখানে কাজ হত এখন সেখানকার শ্রমিকেরা পাঁচদিন কাজ পাচ্ছেন মিলে।

রাজ্যের মতো বাঁশবেড়িয়া শিল্পাঞ্চলের সেই সুদিনও এখন অতীত। বন্ধ হয়ে যাওয়া ডানলপের শ্রমিকেরা আজও পাওনাগন্ডার জন্য সরকারের পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে। বস্তুত শুধু ডানলপ নয়, ওই কারখানা লাগোয়া সংলগ্ন এলাকায় বেশ কিছু কারখানা ছিল। যে সব কারখানাগুলো এলাকার মানুষের স্থায়ী রোজগারের ঠিকানা ছিল। কিন্তু তার বেশিরভাগেরই দরজা এখন বন্ধ।

বাঁশবেড়িয়ার মিঠাপুকুর এলাকায় ইর্স্টান পেপার মিলস্ এক সময় খুবই চালু কারখানা ছিল। এই কারখানায় উৎপাদিত কাগজের খুবই সুনাম ছিল বাজারে। অন্তত তিন হাজার মানুষের রুটিরুজির সংস্থান করত ওই কারখানা। প্রায় দু’দশক আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া সেই কারখানার শ্রমিকেরা পাননি বকেয়া পাওনা। মেলেনি গ্র্যাচুইটির টাকাও। তবে অতি সম্প্রতি তাঁদের পি এফের টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। যদিও আজও বহু শ্রমিক অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। কেশোরাম স্পান পাইপ কারখানায় অন্তত দু’হাজার শ্রমিক কর্মরত ছিলেন। দশ থেকে বারো বছর আগে বিড়লা গোষ্ঠীর এই কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। আজ পর্যন্ত কর্মীরা তাঁদের বকেয়া পাননি। পাওনাগণ্ডা থেকে বঞ্চিত ওই শ্রমিকেরা আজও কারখানা খোলার আশায় দিন গোনেন। যদিও আপাতত কারখানার দরজা খোলার কোনও পরিস্থিতিই নেই বলে ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা।

বাঁশবেড়িয়ারই মিঠাপুকুর এলাকায় এক সময় রমরম করে চলত ইউরো গ্লাস। কারখানায় কাজ করতেন বারোশো শ্রমিক। বছর আটেক আগে বন্ধ হয়ে যায় কারখানার ঝাঁপ। কবে ফের কারখানায় কাজে ফিরতে পারবেন বা আদৌ ফিরতে পারবেন কি না জানেন না শ্রমিকেরা।

বস্তুত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাঁশবেড়িয়া অঞ্চলে শিল্পের অতীত গরিমা ক্রমশ ফিকে হতে হতে বর্তমানে প্রায় অদৃশ্য হতে বসেছে। পুরসভার নানা উন্নয়নমূলক কাজের মধ্যে যা এলাকার আর্থিক উন্নতির চেহারায় একটা কালো দাগ ফেলে দিয়েছে। যদিও এলাকায় শিল্পের পরিস্থিতি যে একেবারেই খারাপ তা মানতে নারাজ পুর কর্তৃপক্ষ। তাঁদের মতে এখনও গ্যাঞ্জেস জুটমিলের মতো শিল্প চালু রয়েছে। রয়েছে ত্রিবেণী টিসুর মতো কারখানা। তা ছাড়া রাজ্য সরকার রাজ্যে শিল্প টানতে যে ভাবে উদ্যোগী হয়েছেন তাতে আগামী দিনে এখানে শিল্পের পরিস্থিতি আরও ভাল হবে বলে তাঁদের ধারণা।

প্রশাসনের এ হেন দাবির পরেও শিল্প সমৃদ্ধির ইতিহাস ঘাঁটতে গিয়ে আজও ডানলপের মৃতপ্রায় চেহারা দেখে অনেকেরই চোখ ভিজে ওঠে।

(শেষ)

ছবি: তাপস ঘোষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

gautam bandyopadhayay southbengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE