Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সক্রিয় হাইকোর্ট, শোনা হল বিচারকের কথা

প্রায় তিন সপ্তাহ কেটে যাওয়ার পরে শ্রীরামপুর আদালতের অচলাবস্থা কাটাতে অবশেষে হস্তক্ষেপ করল কলকাতা হাইকোর্ট। গত ৭ জানুয়ারি থেকে শ্রীরামপুর আদালতে বিচারক মন্দাক্রান্তা সাহার এজলাস বয়কট করছেন আইনজীবীরা। ওই এজলাসের সব কাজকর্ম অচল হয়ে রয়েছে। বিচারপ্রার্থীরা রোজই ফিরে যাচ্ছেন এজলাস থেকে। কলকাতা হাইকোর্টকে বিষয়টি জানানো সত্ত্বেও গত তিন সপ্তাহ ধরে কী ভাবে এমন অচলাবস্থা বজায় থাকল, তা নিয়ে আইনজীবী মহলেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল।

হাইকোর্ট চত্বরে বিচারক মন্দাক্রান্তা সাহা।— নিজস্ব চিত্র।

হাইকোর্ট চত্বরে বিচারক মন্দাক্রান্তা সাহা।— নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা ও শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৪৬
Share: Save:

প্রায় তিন সপ্তাহ কেটে যাওয়ার পরে শ্রীরামপুর আদালতের অচলাবস্থা কাটাতে অবশেষে হস্তক্ষেপ করল কলকাতা হাইকোর্ট।

গত ৭ জানুয়ারি থেকে শ্রীরামপুর আদালতে বিচারক মন্দাক্রান্তা সাহার এজলাস বয়কট করছেন আইনজীবীরা। ওই এজলাসের সব কাজকর্ম অচল হয়ে রয়েছে। বিচারপ্রার্থীরা রোজই ফিরে যাচ্ছেন এজলাস থেকে। কলকাতা হাইকোর্টকে বিষয়টি জানানো সত্ত্বেও গত তিন সপ্তাহ ধরে কী ভাবে এমন অচলাবস্থা বজায় থাকল, তা নিয়ে আইনজীবী মহলেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। বুধবার বিচারকদের একটি প্রতিনিধি দল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরের কাছে গিয়ে তাঁর হস্তক্ষেপ চান। তার পরেই এ দিন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি নিশীথা মাত্রে ডেকে পাঠান বিচারক মন্দাক্রান্তা সাহাকে। পুরো বিষয়টি শোনেন তাঁর কাছ থেকে।

তিন সপ্তাহ ধরে একটি এজলাসের সব কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। বিচারকের ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, গোটা বিষয়টি কলকাতা হাইকোর্টকেও জানানো হয়েছে। তবু এত দিন কেন হস্তক্ষেপ করেনি হাইকোর্ট? হাইকোর্ট সূত্রের খবর, আদালত অবমাননার অভিযোগ জানিয়ে মন্দাক্রান্তাদেবী আইনজীবী-সহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে এর আগে অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগ জেলা জজের দফতর হয়ে বিধিবদ্ধ ভাবে হাইকোর্টে পাঠানো নিয়ম। কিন্তু সেই সংক্রান্ত নথি এ দিন পর্যন্ত পাঠানো হয়নি বলে জানা গিয়েছে। তার জেরে মন্দাক্রান্তাদেবীর আদালত অবমাননার মামলার পুরো প্রক্রিয়াই বিলম্বিত হয়েছে। কেন ওই জরুরি নথি চুঁচুড়ার জেলা জজের দফতর থেকে কলকাতায় এল না, সে বিষয়ে অবশ্য জেলা জজের দফতর মুখে কুলুপ এঁটেছে।

কেন এমনটা হল?

পশ্চিমবঙ্গ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি শুভেন্দু ভট্টাচার্য বলছেন, “এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিচারক আমাদের জানালে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।” তবে সংগঠনের একটি সূত্র বলছে, ওই বিচারক তাঁর অভিযোগ জেলা বিচারকের মাধ্যমে হাইকোর্টে পাঠাতে চেয়েছিলেন কি না, সেটাও দেখতে হবে। তিনি জেলা বিচারককে জানানো সত্ত্বেও যদি তা হাইকোর্টে পাঠানো না হয়, তবে এই বিলম্বের দায়ভার ওই জেলা বিচারককেই নিতে হবে।

হাইকোর্ট সূত্রের খবর, কলকাতা হাইকোর্টের প্রবীণ বিচারপতিদের মধ্যে কে কোন জেলার আদালতের কাজকর্ম দেখবেন, তা ভাগ করা থাকে। হুগলি জেলার দায়িত্বে রয়েছেন বিচারপতি নিশীথা মাত্রে। তাই তিনিই শ্রীরামপুর আদালতের ঘটনাটি খতিয়ে দেখছেন। প্রয়োজনে জেলা জজের সঙ্গেও বিচারপতি মাত্রে কথা বলতে পারেন বলে হাইকোর্ট সূত্রের খবর।

বিচারক মন্দাক্রান্তা সাহার বক্তব্য শোনার জন্য কলকাতা হাইকোর্ট যে তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছে, তা বৃহস্পতিবার সকালেই জানতে পারেন শ্রীরামপুর আদালতের আন্দোলনকারী আইনজীবীরা। কিন্তু তা সত্ত্বেও কোনও আইনজীবীই এ দিন বিচারক সাহার এজলাসে মামলা লড়তে যাননি।

এ দিন সকাল ১০টার পর বিচারক মন্দাক্রান্তা সাহা তাঁর এজলাসে ওঠেন। কিন্তু দুপুরে কলকাতার উদ্দেশে বেরিয়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত কোনও আইনজীবীই তাঁর এজলাসে যাননি।

শুধু মন্দাক্রান্তাদেবীই নন, এ দিন কলকাতায় রাজ্য বার কাউন্সিলের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন শ্রীরামপুর আদালতের বিক্ষোভরত আইনজীবীদের একটি প্রতিনিধি দল। সূত্রের খবর, রাজ্য বার কাউন্সিলের কর্তাদের কাছে তাঁদের বক্তব্য জানান তাঁরা। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে রাজ্য জুডিশিয়াল সার্ভিসের একটি প্রতিনিধি দলের আজ, শুক্রবার শ্রীরামপুর আদালতে যাওয়ার কথা। প্রয়োজনে ওই প্রতিনিধি দল জেলা জজের সঙ্গেও দেখা করতে পারে বলে সূত্রের খবর। বিক্ষোভরত আইনজীবীদের যৌথ সংগ্রাম কমিটির মুখপাত্র রঞ্জন সরকার বলেন, “কলকাতা বার কাউন্সিলের সদস্যদের বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু ওই বিচারককে না সরানো পর্যন্ত আমাদের বয়কটের সিদ্ধান্ত বিবেচনার কোনও জায়গা নেই।” কিন্তু দিনের পর দিন মামলা না হওয়ায় বিচারপ্রার্থীরা যে ফিরে যাচ্ছেন, তাঁদের কথা কেন বিবেচনা করবেন না আন্দোলনকারীরা? রঞ্জনবাবুর জবাব, “আমাদের সম্মান ফিরে পেলে তবেই আমরা ওই এজলাসে ফিরব!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mandakranta saha southbengal high court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE