Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সরকারি হস্তক্ষেপে অচলাবস্থা কাটল দুই মিলে

শ্রমিকদের আন্দোলনের জেরে ফের কাজ বন্ধ হল শ্রীরামপুরের ইন্ডিয়া জুটমিলের স্পিনিং বিভাগে। সমস্ত শ্রমিককে কাজে নেওয়ার দাবিতে বুধবার সকাল থেকে কাজ বন্ধ করে দেন ওই বিভাগের শ্রমিকরা। পরিস্থিতি আঁচ করে মিলের শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষ আলোচনায় বসেন। একইভাবে ভদ্রেশ্বরের অ্যাঙ্গাস জুটমিলের তাঁতঘরে গত দু’দিন কাজ বন্ধ করে দেন শ্রমিকেরা। সেখানে বসিয়ে দেওয়া শ্রমিকদের কাজে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিতেই কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন শ্রমিকেরা। দুটি মিলেই অবশ্য এদিন দুপুরের পর কাজে ফিরেছেন শ্রমিকেরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৪ ০১:৩৯
Share: Save:

শ্রমিকদের আন্দোলনের জেরে ফের কাজ বন্ধ হল শ্রীরামপুরের ইন্ডিয়া জুটমিলের স্পিনিং বিভাগে। সমস্ত শ্রমিককে কাজে নেওয়ার দাবিতে বুধবার সকাল থেকে কাজ বন্ধ করে দেন ওই বিভাগের শ্রমিকরা। পরিস্থিতি আঁচ করে মিলের শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে কর্তৃপক্ষ আলোচনায় বসেন। একইভাবে ভদ্রেশ্বরের অ্যাঙ্গাস জুটমিলের তাঁতঘরে গত দু’দিন কাজ বন্ধ করে দেন শ্রমিকেরা। সেখানে বসিয়ে দেওয়া শ্রমিকদের কাজে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিতেই কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন শ্রমিকেরা। দুটি মিলেই অবশ্য এদিন দুপুরের পর কাজে ফিরেছেন শ্রমিকেরা।

প্রসঙ্গত, অ্যাঙ্গাসের ৮ শ্রমিককে সম্প্রতি বসিয়ে দেন কর্তৃপক্ষ। তাঁদের কাজে নেওয়ার দাবিতে দু’দিন ধরে অচলাবস্থা চলছিল ভদ্রেশ্বরের ওই জুটমিলের তাঁতঘর বিভাগে। বুধবার অবশ্য ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে বসিয়ে দেওয়া শ্রমিকদের কাজে নিতে সম্মত হন কর্তৃপক্ষ। ফলে সেখানে সমস্যা মিটে যায়।

কিছুদিন আগেও ইন্ডিয়া জুটমিলের শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করায় ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’ ঘোষণা করেছিলেন কর্তৃপক্ষ। গত ১০ অগস্ট সরকারের মধ্যস্থতায় আলোচনার মাধ্যমে মিল খোলে। ফের একই পরিস্থিতি তৈরি হবে কি না, তা নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যদিও বুধবার অবশ্য পরিস্থিতি আপাতত সামাল দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

উৎপাদন আছে অথচ চাহিদা নেই, মূলত এই কারণেই রাজ্যের চটকলগুলিতে অচলাবস্থা চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। হুগলি শিল্পাঞ্চলের সবক’টি চটকলেই একই পরিস্থিতি মোটের উপর ভাল নয়। ইন্ডিয়া জুটমিলে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার শ্রমিক কাজ করেন।

শ্রমিকদের অভিযোগ, বেশ কিছু দিন ধরেই কর্তৃপক্ষ তাঁদের অনেক কম কাজ দিচ্ছেন। এমনকী সপ্তাহে প্রতিদিন কাজ দেওয়া হচ্ছে না। এ নিয়ে মিলে শ্রমিক বিক্ষোভ লেগেই আছে। স্পিনিং বিভাগের শ্রমিককেরা জানান, কয়েকশো শ্রমিককে বাইরে রেখেই কারখানা খোলা হয়েছে। সকলকে কাজে নেওয়ার দাবিতেই ওই বিভাগে শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করেন। পরে কিছু শ্রমিক কাজে যোগ দেন।

কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, অর্ডার কমে যাওয়ায় সাময়িক ভাবে উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে তাঁরা বাধ্য হয়েছেন। সেই কারণেই এই পরিস্থিতি। যদিও জেলা আইএনটিটিইউসি নেতা অন্বয় চট্টোপাধ্যায় কর্তৃপক্ষের ওই বক্তব্যের বিরোধীতা করেন। তিনি বলেন, “ইচ্ছে করেই অনেককে কাজ দেওয়া হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষের তুঘলকি আচরণের জন্য শ্রমিকদের বাড়িতে হাঁড়ি চড়ছে না। অবিলম্বে সবাইকে কাজ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি আমরা।” মিলের সিপিআইয়ের শ্রমিক সংগঠন এআইটিইউসি নেতা লাল সিংহ বলেন,“সব শ্রমিকের স্বার্থেই কাজ বন্ধ রাখা হয়েছিল। সুষ্ঠুভাবে সবাইকে কাজে নিয়ে মিল চালানো হোক।”

প্রশাসন সূত্রের খবর, সম্প্রতি অ্যাঙ্গাস জুটমিলে তাঁতঘর বিভাগের ৮ শ্রমিককে বসিয়ে দেওয়া হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে মিলের মধ্যে ‘আচরণ সংক্রান্ত’ নানা অভিযোগ ছিল। যদিও অন্য শ্রমিকেরা জেদ ধরেন অবিলম্বে ওইসব বসিয়ে দেওয়া শ্রমিকদের কাজে নিতে হবে। নেওয়ার দাবিতে গত রবিবার থেকে ওই বিভাগের শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে দেন। বুধবার ভদ্রেশ্বর পুরসভার মিটিং হলে ওই কারখানার বিষয়টি নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের পরিষদীয় সচিব তপন দাশগুপ্ত, চন্দননগরের ডেপুটি শ্রম কমিশনার তীর্থঙ্কর সেনগুপ্ত। শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি এবং মালিকপক্ষের অফিসাররাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বসিয়ে দেওয়া ওই ৮ শ্রমিককে ফের কাজে বহাল করা হবে। তপনবাবু বলেন, “অ্যাঙ্গাস এবং ইন্ডিয়া জুট, দু’জায়গাতেই একটা সমস্যা তৈরি হয়েছিল। পুজোর মুখে মিল বন্ধ হলে শ্রমিকরা সমস্যায় পড়তেন। প্রশসনিক মধ্যস্থতায় সেই সমস্যা মিটে গিয়েছে।”

শ্রমিক সংগঠনগুলির অভিযোগ, জুটমিলে সমস্যা রয়েছে এটা ঘটনা। তাতে শ্রমিকেরা বিভ্রান্ত রয়েছেন। আর্থিক দিক দিয়ে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কিন্তু একশ্রেণীর মিল মালিকেরা এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে পুজোর মুখে শ্রমিকদের বোনাস এবং অন্যান্য আর্থিক সুবিধা যাতে না দিতে হয় সেই জন্য সামান্য সমস্যা হলেই শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। তার ফলে মিলগুলির পরিস্থিতি আরও ঘোরাল হচ্ছে। এই পরিস্থিতি কাম্য নয়।

হুগলি শিল্পাঞ্চলে মিল কর্তৃপক্ষের অবশ্য পাল্টা বক্তব্য, “শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কেউই বিনা কারণে ব্যবস্থা নেন না। সম্প্রতি হুগলিতেই প্রাণ দিতে হয়েছে এক মিল কর্তাকে। বাধ্য হয়ে ব্যবস্থা নিতে হয়। ”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

southbengal chinsurah india jute mill serampore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE