পরিবারের লোকজন চেয়েছিলেন বছর চোদ্দোর মেয়ের এখনই বিয়ে দিতে। কিন্তু বিয়ে নয়, পড়াশোনা করতে চায় তাঁদের মেয়ে। বিয়ে হলে পড়াশোনা নষ্ট হবে, এই আশঙ্কায় দিন কয়েক আগে স্কুলের ক্লাসরুমে সে মনমরা হয়ে বসেছিল। নজর যায় শিক্ষিকার। এর পরে স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনের তৎপরতায় বন্ধ হল ওই ছাত্রীর বিয়ে।
পাঁচলার বনহরিশপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ওই ছাত্রীর বাড়ি জলা বিশ্বনাথপুরের তেঁতুলবেড়িয়ায়। গত সপ্তাহে তার বিয়ে পাকা হয় সাঁকরাইলের এক যুবকের সঙ্গে। আগামী ১০ ডিসেম্বর বিয়ে ঠিক হয়েছিল। সেই বিয়ে বন্ধ হওয়ায় খুশি ছাত্রীটি। তার কথায়, “বিয়ে করলে পড়াশোনা নষ্ট হত। এখন পড়াশোনা করব। নিজের পায়ে দাঁড়াব। তার পরে ও সব নিয়ে ভাবব।”
ছাত্রীর বাবা জরির কাজ করে সংসার চালান। ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের কাছ থেকে নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দেওয়া বেআইনি এবং তা দিলে কী কী সমস্যা হতে পারে তা বুঝতে পেরে পরে তিনি মত বদলান। তাঁর কথায়, “সামান্য রোজগার করি। ভাল ছেলে পেয়ে বিয়ে ঠিক করেছিলাম। এখন জানতে পেরেছি, এটা ঠিক নয়। চার বছর পরে মেয়ে সাবালিকা হলে তবেই বিয়ে দেব। এখন পড়াব।”
বিয়ের কথা পাকা হওয়ার পর থেকেই স্কুলে যাচ্ছিল না ছাত্রীটি। গত মঙ্গলবার সে স্কুলে যায়। ইংরেজির শিক্ষিকা তনুশ্রী সিংহ মেয়েটিকে মনমরা হয়ে বসে থাকতে দেখে তার সহপাঠীদের কাছ থেকে কারণ জানতে চান। এর পরে এখনই বিয়েতে নিজের অনিচ্ছার কথা জানিয়ে মেয়েটি কেঁদে ফেলে। তনুশ্রীদেবী প্রধান শিক্ষিকা পঞ্চতপা ভাদুড়িকে বিষয়টি জানান। এর পরে স্কুলের তরফ থেকে পুলিশ ও ব্লক প্রশাসনকেও বিষয়টি জানানো হয়।
ব্লক প্রশাসনের এক আধিকারিককেও মেয়েটি বিয়েতে অনিচ্ছার কথা জানায়। গত বুধবার ব্লক প্রশাসনের এক কর্তা, জলা বিশ্বনাথপুর পঞ্চায়েতের প্রধান সাবিনা বেগম শেখ, স্থানীয় তৃণমূল নেতা আক্রাম আলি ওই ছাত্রীর বাড়িতে যান। তাঁরা এখনই বিয়ে না দেওয়ার অনুরোধ জানালে ওই ছাত্রীর বাবা প্রথমে বেঁকে বসেন। পরে মত বদলান। প্রধানের কাছে মুচলেকা দিয়ে জানান, মেয়ের ১৮ বছর বয়স না হলে তিনি বিয়ে দেবেন না।
পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শেখ জলিল জানান, স্কুলের শিক্ষিকারা সচেতন না হলে এটা সম্ভব হত না। প্রশাসনও যে তৎপরতার সঙ্গে কাজ করেছে তা প্রশংসনীয়। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বলেন, “ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলেই ওর সমস্যার কথা জানতে পারি। ওকে বোঝাই। তার পরে প্রশাসনের সাহায্য নিই।”
বন্ধুকে নিজেদের মধ্যে ফিরে খুশি ওই ছাত্রীর সহপাঠীরাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy