Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

স্বামীর সামনেই ধর্ষণ তরুণীকে

রেল বাজেট পেশ করে রেলমন্ত্রী মহিলাদের নিরাপত্তায় বিশেষ জোর দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন বৃহস্পতিবারই। আর ওই রাতেই প্রমাণ হয়ে গেল যে রাতে ছোট স্টেশনগুলি কার্যত অরক্ষিত। ঘটনাস্থল দক্ষিণপূর্ব রেলের মৌড়িগ্রাম স্টেশন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:২৯
Share: Save:

রেল বাজেট পেশ করে রেলমন্ত্রী মহিলাদের নিরাপত্তায় বিশেষ জোর দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন বৃহস্পতিবারই। আর ওই রাতেই প্রমাণ হয়ে গেল যে রাতে ছোট স্টেশনগুলি কার্যত অরক্ষিত।

ঘটনাস্থল দক্ষিণপূর্ব রেলের মৌড়িগ্রাম স্টেশন। রাতের শেষ ট্রেন চলে যাওয়ায় স্টেশনের প্ল্যাটফর্মকে নিরাপদ আশ্রয় ভেবে ভোরের ট্রেনের অপেক্ষায় থেকে গিয়েছিলেন এক যুবক ও তাঁর তরুণী স্ত্রী। তাঁদের ভুল অবশ্য ভেঙেছিল কিছু ক্ষণ পরই। সম্পূর্ণ অরক্ষিত ওই স্টেশন থেকে তিন দুষ্কৃতী আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে তাঁদের জোর করে তুলে নিয়ে যায় স্টেশন থেকে কিছুটা দূরে ঝোপঝাড়ের মধ্যে। অভিযোগ, এর পর ওই যুবকের মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে তাঁর সামনেই স্ত্রীকে ধর্ষণ করে তিন দুষ্কৃতী।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ এই গণধর্ষণের ঘটনার পর অবশ্য নড়েচড়ে বসে রেল পুলিশ। সকালেই ঘটনাস্থলে চলে আসেন রেল পুলিশের পদস্থ কর্তারা। ধর্ষণের অভিযোগে তারা বাগ নামে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়। রেল পুলিশ জানায়, ধৃত স্থানীয় বাসিন্দা। বাকি দুই দুষ্কৃতীর খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, খুব শীঘ্রই বাকিরাও ধরা পড়ে যাবে।

রেল পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন রাত পৌনে ১২টায় হাওড়ামুখী শেষ ট্রেন চলে যাওয়ার পর মৌড়িগ্রাম স্টেশনে পৌঁছন পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ের বাসিন্দা ওই যুবক ও তাঁর স্ত্রী। যুবকটি হাওড়ার ধুলাগড়ের কাছে একটি হোটেলে চাকরি করায় স্ত্রীকে নিয়ে ওই এলাকায় ভাড়া থাকতেন। ওই দিন কলকাতায় স্ত্রীর এক আত্মীয়ের বাড়ি যাবেন বলে হোটেল থেকে বেরিয়ে স্ত্রীকে মোটরবাইকে চাপিয়ে চলে এসেছিলেন আলমপুরে। একটি গ্যারেজে মোটরবাইক রেখে ট্রেকারে চেপে এর পর পৌঁছেছিলেন মৌড়িগ্রাম স্টেশনে। কিন্তু ততক্ষণে হাওড়ামুখী শেষ ট্রেন চলে গিয়েছে।

শুক্রবার শালিমার রেল পুলিশ থানায় বসে ওই যুবক জানান, শেষ ট্রেন চলে যাওয়ার খবর পেয়ে তিনি ভাবেন এত রাতে আর ধুলাগড় ফিরে যাবেন না। রাতটুকু প্ল্যাটফর্মের বেঞ্চে কাটিয়ে ভোরের ট্রেনে হাওড়া যাবেন।

এ দিন যুবকটি বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম রেল স্টেশন অনেকটা নিরাপদ। পুলিশ পাহারা থাকবে। কিন্তু তা যে ভুল, বুঝলাম কিছু ক্ষণ পরই।” ওই যুবক জানান, রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ স্টেশনের দক্ষিণ দিক অর্থাৎ হাওড়া-প্রান্ত থেকে দুই যুবক এসে প্রথমে টিকিট দেখাতে বলে। টিকিট কাটা নেই বলে জানালে তারা চলে যায়। কিন্তু কিছুটা দূরে গিয়ে তাঁকে ফের ডেকে স্ত্রীর কাছ থেকে কিছুটা দূরে নিয়ে যায়। বলে ‘স্যার’ ডাকছে।

ওই যুবক বলেন, “যাব না বলতেই আমায় গালিগালাজ করে মারতে শুরু করে। এর মধ্যে স্ত্রী পিছন পিছন চলে এসেছিল। ও চিৎকার করে উঠতেই এক জন ওর মুখ চেপে ধরে। আর এক জন আমার মাথায় রিভলভার ঠেকায়।” যুবকটি বলেন, “এর পর টানতে টানতে একটা ঝিলের পাশে জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে যায়।” সেখানে তাঁর মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে রেখে তাঁর চোখের সামনে স্ত্রীকে ধর্ষণ করে তিন দুষ্কৃতী। যুবকটি জানান, দুষ্কৃতীরা পালালে তিনি স্ত্রীকে কাঁধে করে মৌড়িগ্রাম স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে নিয়ে যান। ভোরবেলা আরপিএফের জওয়ানরা আসলে তাঁদের ঘটনাটা জানান। এর পরেই রেল পুলিশের পদস্থ কর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।

রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সকাল সাতটার সময় আরপিএফের ওসি শালিমার রেল পুলিশ থানাকে খবর দেন। খড়গপুরের রেল পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস খবর পেয়ে আসেন। তিনি বলেন, “এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।” রেল পুলিশ সুপার বলেন, “ছোট স্টেশনগুলিতে শেষ ট্রেন চলে যাওয়ার পর সাধারণত যাত্রী থাকেন না। তাই পাহারাও থাকে না। রেল পুলিশের এত বড় পরিকাঠামো নেই যে প্রতিটি স্টেশনে রাত পাহারার ব্যবস্থা করা যাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

southbengal rape mourigram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE