Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
হুগলিতে তলিয়ে গেলেন যুবক

আমতায় বন্যা প্রতিরোধে বৈঠক রাজীবের

বন্যাপ্রবণ হুগলির আরামবাগ মহকুমার পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আরামবাগ শহরের বেশির ভাগ ওয়ার্ড আগেই জলমগ্ন হয়েছিল। নতুন করে ডুবেছে গোঘাটের দু’টি ব্লকের বেশিরভাগ এলাকা।

বন্যা প্রতিরোধ নিয়ে আমতায় বৈঠক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের। নিজস্ব চিত্র

বন্যা প্রতিরোধ নিয়ে আমতায় বৈঠক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
চুঁচুড়া ও আমতা শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৭ ০৩:৩৫
Share: Save:

টানা বৃষ্টিতে নতুন করে ডুবল দুই জেলার বহু এলাকা। দুর্ভোগ বাড়ল সাধারণ মানুষের। হুগলিতে জলের তোড়ে তলিয়ে গেলেন এক যুবক। ক্ষতিগ্রস্ত হল বেশ কিছু কাঁচাবাড়ি। কয়েকটি এলাকা থেকে দুর্গতদের সরানোর কাজ শুরু করেছে প্রশাসন।

শুধু সাধারণ মানুষ নন, এই বৃষ্টি নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে রাজ্য সরকারও। সোমবার বিকেলে হাওড়া ও হুগলির বর্তমান পরিস্থিতি এবং বন্যা প্রতিরোধ নিয়ে প্রস্তুতি বৈঠক করতে আমতায় আসেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘জুলাই মাসে এক টানা এত বৃষ্টি বহু বছর দেখা যায়নি। এখনও রাজ্যের দু’একটি জায়গা ছাড়া কোথাও বন্যা পরিস্থিতি হয়নি। কিন্তু আগামী ৪৮ ঘণ্টা যদি এ ভাবে টানা বৃষ্টি হয়, তা হলে পরিস্থিতি প্রতিকূল হতে পারে।’’

বন্যাপ্রবণ হুগলির আরামবাগ মহকুমার পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আরামবাগ শহরের বেশির ভাগ ওয়ার্ড আগেই জলমগ্ন হয়েছিল। নতুন করে ডুবেছে গোঘাটের দু’টি ব্লকের বেশিরভাগ এলাকা। সোমবার শ্যামল সেনগুপ্ত নামে যে যুবক তলিয়ে যান, তিনি এই গোঘাটেরই কামারপুকুরের ইন্দিরা গ্রামের বাসিন্দা।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন দুপুর ১২টা নাগাদ গ্রামের হলদি খালের সেতুর উপরে বসেছিলেন শ্যামল। তাঁর মোবাইলটি হাত থেকে নীচে পড়ে যায়। ফোনটি তুলতে গিয়ে পা হড়কে তিনি ভরা খালে তলিয়ে যান। রাত পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়েও তাঁর খোঁজ পায়নি পুলিশ। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তৃণমূল বিধায়ক মানস মজুমদার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। শ্যামল এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রামপদ মালিক নামে এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‘ফোনটি হাত থেকে পড়ে যেতেই ওই যুবক লাফিয়ে নেমে তুলতে যান। তখনই তিনি পা হড়কান। আমরা সবাই তাঁর খোঁজ চালিয়েছিলাম। কিন্তু পাইনি।’’

প্রশাসন জানিয়েছে, টানা বৃষ্টিতে গোঘাটের বদনগঞ্জ এবং নকুণ্ডা এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। খানাকুলের কয়েকটি এলাকায় সাঁকো ভেঙেছে। আরামবাগ পুর এলাকার সতীতলা থেকে ৪০টি পরিবারকে এবং ডহরকুণ্ডু ও বসন্তবাটি থেকে ২০টি পরিবারকে সরানো হয়েছে। দুর্গত এলাকায় ত্রিপল পাঠানো হচ্ছে।

এ দিন সকালে পান্ডুয়ার সরাই-তিন্না পঞ্চায়েতের ছাতাপুর গ্রামের দু’টি কাঁচাবাড়ি ধসে যায়। সেখানকার কংক্রিটের রাস্তাও ধসে যাওয়ায় যাতায়াতে দুর্ভোগ বেড়েছে সাধারণ মানুষের। রাস্তা সারানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছেন পঞ্চায়েত প্রধান সিপিএমের নারায়ণ দেবনাথ। সব মিলিয়ে এই ব্লকের প্রায় ২৫০টি কাঁচাবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। জল জমেছে পাঁচগড়া, পোটবা, সরাই, সাতঘড়িয়া, বৈঁচিগ্রাম, খন্যান, পান্ডুয়া স্টেশন বাজারেও। বিধায়ক আমজাদ হোসেন জানান, ইতিমধ্যে তাঁরা ৫০০টি ত্রিপল বিলি করেছেন। আরও ত্রিপল প্রয়োজন।’’ বলাগড়েও প্রায় ৫০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রশাসন জানিয়েছে।

জল জমে যাওয়ায় দুর্ভোগ সইতে হচ্ছে হুগলির শিল্পাঞ্চলের মানুষকেও। ব্যান্ডেল, চুঁচুড়া, হুগলি, শেওড়াফুলি-সহ বিভিন্ন স্টেশনের গলাপুল এবং সংলগ্ন এলাকা জলমগ্ন। ফলে, স্টেশনে যাতায়াতের পথে নাকাল হচ্ছেন যাত্রীরা।

ডিভিসি যাতে বাড়তি জল না ছাড়ে তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী নিজে চিঠি লিখে তাদের সতর্ক করেছেন বলে এ দিন আমতার জানান সেচমন্ত্রী জানান। এক সপ্তাহের মধ্যে বিভিন্ন নদীর পাড়ের জবরদখলকারীকে সরানোর নির্দেশও দেন তিনি।

টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হাওড়া গ্রামীণ এলাকার জনজীবন। বাগনান গ্রামীণ হাসপাতালের অনেকাংশে কোমর জল দাঁড়িয়েছে। ফলে, রোগীদের নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বাগনানের এনডি ব্লক, বেড়িবেড়িয়া প্রভৃতি এলাকাতেও জল জমেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, নালাগুলি ঠিকমতো সাফ না করার ফলেই এমন অবস্থা। তবে বাগনান-১ পঞ্চায়েত সমিতির কর্তাদের অবশ্য সাফাই, নালা সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টির পরিমাণ এতটাই বেশি যে নালা থেকে সময়মতো জল বেরোতে পারছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE