Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
বাঁশবেড়িয়া-শ্রীরামপুর-চন্দননগর

পুরভোটের হুগলিতে বিক্ষিপ্ত হিংসা অব্যাহত

পুরভোটকে ঘিরে হুগলির নানা এলাকায় বিক্ষিপ্ত হিংসা অব্যাহত। কোথাও বিরোধী দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দাবি তুলে তাঁদের বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠছে শাসক দলের বিরুদ্ধে, কোথাও বা দেওয়াল-লিখন নিয়ে দু’পক্ষের মারামারিতে তপ্ত হচ্ছে এলাকা।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৫ ০১:৪১
Share: Save:

পুরভোটকে ঘিরে হুগলির নানা এলাকায় বিক্ষিপ্ত হিংসা অব্যাহত।

কোথাও বিরোধী দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দাবি তুলে তাঁদের বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠছে শাসক দলের বিরুদ্ধে, কোথাও বা দেওয়াল-লিখন নিয়ে দু’পক্ষের মারামারিতে তপ্ত হচ্ছে এলাকা।

কয়েক দিন ধরেই জেলায় গোলমাল মূলত হচ্ছে বাঁশবেড়িয়ায়। বৃহস্পতিবার রাতে সেখানে বিরোধী দলের তিন প্রার্থী এবং দুই নেতার বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি।

পুলিশ সূত্রে খবর, ওই দিন রাত ১টা নাগাদ বাঁশবেড়িয়ার বোড়োপুকুর ধারের বাসিন্দা, ২২ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী অজিত মালোর বাড়ির পাঁচিল এবং জানলার কাচ ভেঙে দেয় মোটরবাইকে আসা এক দল যুবক। ভাঙা হয় দরজা। অজিতবাবু বাড়িতে ছিলেন না। অভিযোগ, হামলাকারীরা তৃণমূল সমর্থক। মনোনয়ন প্রত্যাহার করা না হলে তারা অজিতবাবুর প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে চলে যায়। ওই রাতে একই ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী বিশ্বজিত্‌ মালোর বাড়িতেও একই কায়দায় হামলা চালায় কিছু দুষ্কৃতী। একই ভাবে এখানেও হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। সিপিএমের বাঁশবেড়িয়া লোকাল কমিটির সদস্য সুভাষ পাল এবং দেবব্রত পালের বাড়িতেও হামলা হয়।

বাঁশবেড়িয়ার কোঁচাটি এলাকার বৈকুণ্ঠপুরের বাসিন্দা, বিশ্বজিত্‌ দাস ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর থেকেই তৃণমূলের ছেলেরা তা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিচ্ছিল। বৃহস্পতিবার রাতেও তারা বিশ্বজিত্‌বাবুর বাড়িতে হামলা চালায়। জিনিসপত্র ভাঙে। গয়না ও নগদ টাকা লুঠ করে। বিশ্বজিত্‌বাবু বাড়িতে ছিলেন না। তাঁর শাশুড়ি সুমিত্রাদেবীকে মারধর করা হয়। তাঁকে নিয়ে যাতে কেউ হাসপাতালে যেতে না পারেন, তার জন্য হামলাকারীরা বাইরে টহল দিতে থাকে বলে অভিযোগ। শুক্রবার সকালে অবশ্য সুমিত্রাদেবীকে চুঁচুড়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

এলাকায় রাজনৈতিক হানাহানি বেড়ে যাওয়ায় ক’দিন আগেই রাতে পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি করেন জেলা পুলিশের কর্তারা। শুক্রবার রাত পর্যন্ত হামলার ঘটনাতেই কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘সব ঘটনার অভিযোগ হয়েছে। মামলা শুরু হয়েছে। তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

বাঁশবেড়িয়ায় বিরোধীদের উপর ধারাবাহিক হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার জেলা বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি দেওয়া হয় জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে। জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘শাসক দলের গুন্ডাবাহিনী রাজ্য জুড়ে যে ভাবে সন্ত্রাস করছে, একই কায়দায় এখানে দলীয় কর্মীদের উপর হামলা চালিয়ে বিরোধী পক্ষের অস্তিত্ব মুছে দিতে চাইছে।” একই সুরে বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি স্বপন পাল বলেন, ‘‘শাসক দলের পায়ের তলার মাটি ক্রমশ সরে যাচ্ছে। সেই আতঙ্কে ওরা এখন হামলা চালিয়ে বিরোধীশূন্য এলাকা গড়তে চাইছে।’’

অভিযোগ উড়িয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্তর দাবি, ‘‘বাঁশবেড়িয়ায় বিরোধীদের প্রার্থিপদ নিয়ে নিজেদের মধ্যেই দ্বন্দ্ব চলছে। তার জেরেই ওই সব ঘটনা। আমাদের দলের বিরুদ্ধে ওরা কুত্‌সা রটাচ্ছে।’’

তবে, শুধু বাঁশবেড়িয়াই নয়, গোলমাল হয়েছে অন্যত্রও। বৃহস্পতিবার রাতে তৃণমূল এবং সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় মারামারিতে তপ্ত হয়ে ওঠে শ্রীরামপুরের টিনবাজার এবং সংলগ্ন এলাকা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ লালবাহাদুর শাস্ত্রী রোডে দু’দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বচসা বাধে। সিপিএমের অভিযোগ, দুই তৃণমূল প্রার্থী রাজেশ শা ওরফে কুকুয়া এবং সন্তোষ ওরফে পাপ্পু সিংহের দলবল সঞ্জয় সেনগুপ্ত নামে এক সিপিএম কর্মীকে মারধর করে। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে এলাকার কয়েকজন যুবকও মার খান। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, ঘটনাস্থলের কাছেই একটি দোকানে মদের ঠেক চলে। সঞ্জয় তার প্রতিবাদ করতেন। তা নিয়ে কিছু লোকের আক্রোশ ছিল সঞ্জয়ের উপর। তার দেরেই ওই হামলা। সঞ্জয়ের দাদা, মনোবিদ মোহিত রণদীপ বলেন, “মদের আড্ডার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই ভাইকে মার খেতে হল।”

গোলমালের খবর ছড়াতেই সিপিএমের ছেলেরা ঘটনাস্থলে আসে। তৃণমূলেরও কয়েকশো লোক আসে। দফায় দফায় মারপিট হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে গোলমালকারীদের সরিয়ে দেয়। স্থানীয় সিপিএম নেতা তথা প্রার্থী সুমঙ্গল সিংহ-সহ ওই দলের তিন জনকে নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়।

তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ মানেনি। তাঁদের পাল্টা অভিযোগ, পাপ্পু এবং রাজেশ ওই এলাকা দিয়ে মোটরবাইকে চেপে যাচ্ছিলেন। বচসা দেখে তাঁরা দাড়িয়ে পড়েন। তখন সিপিএমের ছেলেরা ওই দু’জনকেই মারধর করে। আহত অবস্থায় রাজেশকে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তৃণমূল নেতা উত্তম রায়ের দাবি, “ওই এলাকায় তৃণমূল করা যাবে না বলে সিপিএমের কিছু লোক হুমকি দিচ্ছিল। পাপ্পু এবং রাজেশ প্রতিবাদ করায় ওঁদের মারধর করা হয়।”

অন্য দিকে, শুক্রবার চন্দননগরে বিলকুলি কাঠুরিপাড়ায় দেওয়াল-লিখনকে কেন্দ্র করে বিজেপি এবং তৃণমূল সমর্থকদের হাতাহতিতে দু’পক্ষের তিন জন আহত হন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE