কখনও তাঁদের ঘরের লকার ভাঙা, কখনও স্থায়ীকরণ-সহ নানা বিষয় নিয়ে শ্রীরামপুর কলেজের অধ্যক্ষ এবং উপাধ্যক্ষের সঙ্গে শিক্ষকদের বিরোধ চলছিলই। এ বার এক শিক্ষিকার প্রভিডেন্ড ফান্ডের চেক না পাওয়া নিয়েও সেই বিরোধ ফের সামনে এল।
শনিবার ছিল রত্না দত্ত নামে ওই শিক্ষিকার শেষ কাজের দিন। তাঁর অভিযোগ, নিয়ম অনুযায়ী এ দিনই তাঁর প্রভিডেন্ট ফান্ডের (পিএফ) চেক পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অধ্যক্ষ সই না করায় সেই চেক তিনি পাননি। এ ব্যাপারে অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন রত্নাদেবী। শুধু তাই নয়, আগেভাগে বলা সত্ত্বেও তাঁর বিদায়-সংবর্ধনা অনুষ্ঠানও করা হয়নি বলে শিক্ষকদের অভিযোগ। অথচ, এ দিনই অবসর নেওয়া এক শিক্ষাকর্মীকে বিদায়-সংবর্ধনা দেওয়া হয়। গোটা বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকদের অনেকেই ক্ষুব্ধ। শিক্ষাকর্মীদের একাংশও ক্ষোভ গোপন করছেন না।
অধ্যক্ষ লাল্টলুঅ্যাংগ্লিয়ানা খিয়াঙ্গটে অবশ্য অভিযোগ মানেননি। তিনি বলেন, ‘‘অবসরের পরের সব সুবিধাই রত্নাদেবী পাবেন। পিএফের চেকও তৈরি। উনি শুক্রবার কলেজে না-আসায় বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করা যায়নি। পরে করা হবে। এটা কলেজের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সামান্য কিছু ব্যাপার নিয়ে হইচই করা হচ্ছে। এতে কলেজের সুনাম নষ্ট হচ্ছে।’’
রত্নাদেবী এই কলেজে সাড়ে তিন দশক সংস্কৃত বিভাগে পড়িয়েছেন। একাধিকবার ওই বিভাগের প্রধান হওয়ার পাশাপাশি উপাধ্যক্ষের দায়িত্বও সামলেছেন। টিচার-ইন-চার্জ পদেও ছিলেন। কয়েক মাস ধরে তাঁর সঙ্গে কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরোধ বাধে। মাস দু’য়েক আগে রত্নাদেবী অভিযোগ করেন, তাঁকে কিছু না জানিয়ে টিচার্স রুমে তাঁর ব্যক্তিগত লকার ভাঙা হয়। উপাধ্যক্ষই ওই কাজ করেন। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অধ্যক্ষকে লিখিত অভিযোগ জানান তিনি। কিন্তু অধ্যক্ষ কোনও পদক্ষেপ করেননি বলে তাঁর অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত এ নিয়ে শ্রীরামপুর থানায় এফআইআর দায়ের করেন তিনি। পুলিশ কলেজে তদন্তে আসে। বিষয়টি নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়। উপাধ্যক্ষ সৌমিত্রশঙ্কর দাশগুপ্ত অভিযোগ মানেননি। এর পর থেকেই কলেজ কর্তৃপক্ষ নানা ভাবে হেনস্থা করতে থাকেন বলে রত্নাদেবীর অভিযোগ। মহিলা কমিশনেরও দ্বারস্থ হন তিনি।
এ বার তাঁর পিএফের চেক না পাওয়া নিয়ে রত্নাদেবী বলেন, ‘‘অধ্যক্ষ আমাকে জানিয়ে দেন, যে হেতু আমি আইনের সাহায্য নিয়েছি, তাই আমার অবসরকালীন সুবিধা দেওয়া হবে না। শুক্রবার অধ্যক্ষ কলেজে আসতে বলেছিলেন। অসুস্থ থাকায় আসতে পারিনি। এ জন্য আমাকে শোকজ করা হয়েছে। এত অপমানিত জীবনে হইনি।’’
কলেজের বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষক অরূপকুমার সেন বলেন, ‘‘রত্নাদেবীর সঙ্গে যা করা হয়েছে, তাতে শিক্ষক সমাজ অপমানিত। পিএফ আটকানো যায় না।’’ কলেজের পরিচালন সমিতির সদস্য শিক্ষক জিষ্ণু দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘রত্নাদির ব্যাপারটা জেনে শিক্ষক হিসেবে অপমানিত লাগছে। শিক্ষক সমিতি আন্দোলন করবে।’’ শনিবার ছাত্রছাত্রীদের তরফে অবশ্য কলেজের বাইরে একটি ভবনে রত্নাদেবীর বিদায়-সংবর্ধনার ব্যবস্থা করা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy