উত্তম কুণ্ডু (বাঁ দিকে) ও স্বপন সামন্তকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী। ছবি: মোহন দাস।
পুরভোটে আরামবাগ ছাড়া হুগলির যে পুরসভায় তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল, সেটি তারকেশ্বর। কিন্তু ১৩টি পুরসভার মধ্যে এই তারকেশ্বরেই শপথ অনুষ্ঠান হল সব ক’টির শেষে, বৃহস্পতিবার। কারণ, পুরপ্রধান পদ নিয়ে গোষ্ঠী-কোন্দল যে জায়গায় পৌঁছেছিল, তাতে কার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে তা নিয়ে জল্পনা চলছিল নানা মহলে। শেষ পর্যন্ত দুই পদে বহাল রইলেন আগের বোর্ডের দুই নেতাই। পুরপ্রধান হলেন স্বপন সামন্ত। উপ-পুরপ্রধান উত্তম কুণ্ডু। কিন্তু দুই নেতার কোন্দলে আগামী দিনে উন্নয়নের কাজ কতটা মসৃণ হবে, তা নিয়ে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেই উদ্বেগ রয়ে গেল।
এ দিন শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে দুই নেতাকে কথা বলতে দেখা যায়নি। পরে সেখানে যান দলের মহাসচিব তথা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। স্বপনবাবু-সহ ১৩ জন কাউন্সিলর শুরু থেকে মঞ্চে ছিলেন। কিন্তু উত্তমবাবু তাঁর অনুগামী এক কাউন্সিলরকে নিয়ে বসে থাকেন দর্শকাসনে। শপথবাক্য পাঠ করানোর আগে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সুজয় সাধু উত্তমবাবুকে মঞ্চে ডাকেন। তৃণমূল নেতারাও উত্তমবাবুকে একই অনুরোধ করেন। কিন্তু উত্তমবাবু জানিয়ে দেন, তিনি যাবেন না। শুধু নিজে শপথ গ্রহণের সময় মঞ্চে ওঠেন।
পার্থবাবু মঞ্চে বলেন, ‘‘নতুন করে কোনও চিন্তাভাবনা করা হয়নি। আগে যা ছিল তা-ই হল। স্বপন ও উত্তম এঁরাই থাকল। পুরসভার যে সব কাজ এখনও হয়নি, তা যেন করা হয়।’’ দ্বন্দ্ব নিয়ে প্রশ্ন করা হলে স্বপনবাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশিত পথেই তারকেশ্বরের উন্নয়ন করতে চাই আমরা। সবাই একজোট হয়েই সেই কাজ করব।’’ কিন্তু উত্তমবাবুর ক্ষোভ গোপন থাকেনি। তিনি বলেন, ‘‘আশা করেছিলাম পুরপ্রধান হব।’’
১৫ আসনের ওই পুরসভায় এ বারও নির্বাচনের গোড়া থেকে তৃণমূলের অন্দরে নাটক কম হয়নি। দলের কাছে নানা অভিযোগ থাকায় উত্তমবাবুকে টিকিট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরিবর্তে তাঁর স্ত্রী কুহেলির নাম ঘোষণা করা হয় প্রার্থী হিসেবে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য দলেরই একাংশের চাপে উত্তমবাবুকে দল টিকিট দেয়। কুহেলিদেবীর নাম প্রত্যাহার করা হয়। কুহেলিদেবী নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ান। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের পরেই তৃণমূলের অন্দরে পুরপ্রধান, উপ-পুরপ্রধান পদ নিয়ে বিস্তর জল্পনা হয়। তৃণমূলের সূত্রে খবর, যাঁর টিকিট পাওয়াই অনিশ্চিত ছিল, সেই উত্তমবাবুকে পুরপ্রধান করতে মাঠে নামেন দলের এক সাংসদ এবং এক মন্ত্রী। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, পুরপ্রধান হিসেবে এক মহিলা কাউন্সিলরের নাম প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলা হয়। দিন কয়েক আগে সব কাউন্সিলরকে কলকাতায় ডেকে পাঠান দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সেখানে সকলেই লিখিত ভাবে জানান, দলীয় সিদ্ধান্ত তাঁরা মেনে নেবেন।
এ দিন শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক রচপাল সিংহ, দলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত, যুব সভাপতি তথা উত্তরপাড়ার পুরপ্রধান দিলীপ যাদব প্রমুখ। দলীয় হুইপ অনুযায়ী স্বপনবাবুর নাম পুরপ্রধান হিসেবে মেনে নেন কাউন্সিলররা। রচপাল ঘোষণা করেন, উত্তমই উপ- পুরপ্রধান হবেন। কিন্তু আগের বোর্ডের উদাহরণ টেনে এ দিনই দলের নেতাকর্মীদের কয়েক জনকে বলতে শোনা যায়, আগের বার দুই নেতার কোন্দলে নানা প্রকল্প যথা সময়ে শেষ করা যায়নি। এ বারও যে তেমন ঘটনা ঘটবে না, আশ্বাস মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy