গঙ্গার পাড়ে নিরিবিলি, নিরুপদ্রব বসবাসের জন্য এ তল্লাটের এক সময় সুনাম ছিল। ভিড়ভাট্টা, কোলাহল, খুচরো ঝামেলা বলতে প্রায় কিছুই ছিল না। ফলে বসবাসের স্বাভাবিক পছন্দের তালিকায় চুঁচুড়ার নাম প্রথমেই উঠে আসত।
কিন্তু এখন সে সবের অনেকটাই হারিয়ে গিয়েছে। শহরকে এখন নিরিবিলি তো বলাই যায় না, উল্টে ভিড়, কোলাহল এবং নিত্য নতুন ঝামেলার উপদ্রব রোজকার ঘটনা। সবুজ অদৃশ্য হচ্ছে রোজই। বুজে যাচ্ছে পুকুর, জলাভূমি। বদলে আকাশমুখী নিত্যনতুন আবাসনের রমরমা। শহরের এক প্রবীণ বাসিন্দার কথায়, “মানুষের মাথা গোঁজার জায়গার চাহিদায় আবাসন বাড়বে, এটা অনিবার্য। কিন্তু তার তো মাত্রা থাকবে? শ’য়ে শ’য়ে নতুন বাসিন্দা। কিন্তু শুধু তো মানুষ বাস করলেই হবে না, চাই নিকাশির উন্নতি, পানীয় জলের সুষ্ঠু জোগান। কিন্তু সে সব কোথায়?” তাঁর আক্ষেপ, আধুনিক নগর সভ্যতায় ‘ল্যান্ড-ম্যান রেশিও’ বলে একটা শব্দ আছে। না হলে পুরো ব্যবস্থাটাই এক সময় ভেঙে পড়বে। কিন্তু প্রশাসনের সেদিকে নজর দেওয়ার সময় কোথায়!
শহরে আবাসন ও জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনিবার্য ভাবেই বেড়েছে অপরাধমূলক কাজকর্ম। চুঁচুড়া স্টেশন রোডে নানা অপরাধমূলক কাজ নিয়ে বাড়ছে মানুষে ক্ষোভ। জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা জানান, জমির দালালির সঙ্গে বহু ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে সমাজবিরোধীরা জড়িয়ে রয়েছে। কোনওক্ষেত্রে গোলমাল বাধলেই তারা স্বমূর্তি ধরছে। আর এ সবের জন্য শহরে বেআইনি অস্ত্রও বাড়ছে। ঘটছে নানা ঘটনা। তা যে মিথ্যে নয় তার প্রমাণ, কিছুদিন আগেই হুগলি স্টেশন রোডে ভরসন্ধ্যায় গুলি চালিয়ে একজনকে খুন করে দুষ্কৃতীরা। এর মাস কয়েক আগে একই ভাবে দুষ্কৃতীরা ভরা বাজারে তাণ্ডব চালায়। গুলিতে এক স্কুলছাত্রী আহত হয়।
শহরে দীর্ঘদিন ধরে যাঁদের বাস, শহরের এ হেন পরিবর্তনে তাঁরা দুষছেন শহরে থাবা বসানো প্রোমোটার চক্রকে। তাঁদের অভিযোগ, অনেকেই বেআইনি নির্মাণে এ সব সমাজবিরোধীদের মদত দিচ্ছেন। শহরে আবাসনের রমরমা নিয়ে শাসকদলের এক প্রবীণ কাউন্সিলরের অবশ্য দাবি, পুরনো বাড়ি এখন রক্ষণাবেক্ষণে প্রচুর খরচ। মানুষ পারছেন না সামাল দিতে। মানুষ যদি নিজের প্রয়োজনে পুরনো বাড়ি বেচে দেন, তা হলে পুরসভার হাতে কোন আইন নেই তা রোখার। শহরের বাসিন্দা বিজেপি নেতা ও আইনজীবী স্বপন পালের অবশ্য বক্তব্য, “শাসকদলের নেতাদের তো প্রোমোটারদের সমর্থনে বলতে হবে। কেন না ওঁদের দলের অনেকেই এখন বকলমে প্রোমোটারি করছেন। কিন্তু এই প্রবণতা বাড়ায় শহরের কী চেহারা হবে তা ওদের ভাবতে অনুরোধ করছি।” (শেষ)
রাজনৈতিক এই চাপানউতোরের মধ্যেই ফের আরও একটা নির্বাচন এসে গিয়েছে। শহরে প্রোমোটার চক্রের রমরমার জন্য শাসকদলকে দুষছে বিরোধীরা। দায় এড়াতে ব্যস্ত শাসকদলও। কিন্তু ভোটের পর কী হবে? আপাতত সেদিকেই তাকিয়ে চুঁচুড়ার মানুষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy