Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ইতিহাসে আগ্রহ গড়ছে গ্রামীণ সংগ্রহশালা

কোথাও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাত ধরে, কোথাও বা স্কুলের হাত ধরে, কোথাও আবার গ্রন্থাগারের সঙ্গে। এ ভাবে হাওড়ার বিভিন্ন গ্রামে একের পর গড়ে উঠছে সংগ্রহশালা। স্থানীয় ইতিহাস ও লোক সংস্কৃতির উপকরণ সংরক্ষণ করা হচ্ছে সংগ্রহশালায়। সম্প্রতি এমনই একটি দুই কামরার সংগ্রহশালার উদ্বোধন হয়ে গেল আমতার রসপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কলিকাতা গ্রামে। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে।

আমতার রসপুরের সংগ্রহশালা। ইনসেটে, সংগ্রশালায় ঠাঁই পাওয়া মূর্তি। ছবি: সুব্রত জানা।

আমতার রসপুরের সংগ্রহশালা। ইনসেটে, সংগ্রশালায় ঠাঁই পাওয়া মূর্তি। ছবি: সুব্রত জানা।

নুরুল আবসার
শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০১:৩১
Share: Save:

কোথাও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাত ধরে, কোথাও বা স্কুলের হাত ধরে, কোথাও আবার গ্রন্থাগারের সঙ্গে। এ ভাবে হাওড়ার বিভিন্ন গ্রামে একের পর গড়ে উঠছে সংগ্রহশালা। স্থানীয় ইতিহাস ও লোক সংস্কৃতির উপকরণ সংরক্ষণ করা হচ্ছে সংগ্রহশালায়।

সম্প্রতি এমনই একটি দুই কামরার সংগ্রহশালার উদ্বোধন হয়ে গেল আমতার রসপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কলিকাতা গ্রামে। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে। এখানে জায়গা করে নিয়েছে টেরাকোটার কাজ, নানা দেশের মুদ্রা, ডাক টিকিটের খোল, দেশলাই খোল, সুকুমার শিল্প, ভাস্কর্য, পিতল শিল্প, তামা শিল্প, পাট শিল্প, শোলা শিল্প, সামুদ্রিক জিনিস, দেশ-বিদেশের খেলনা, পুরনো দিনের ঘড়ি, রেডিও, গ্রামাফোন প্রভৃতি।

হাওড়া তো বটেই বিভিন্ন জেলা থেকে এইসব জিনিসপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানান সংস্থার কর্ণধার তপন মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘কাজের সূত্রের বিভিন্ন দেশ-বিদেশের নানা জায়গায় ঘুরেছি। প্রতিটি জায়গাতে সংগ্রহশালা দেখেছি। নিজের শিকড় খুঁজতে হলে প্রতিটি মানুষের একবার সংগ্রহশালা যাওয়া উচিত। আমাদের কলকাতায় জাদুঘর দেখার সামর্থ্য নেই। তাঁরা এই গ্রামে বসেই যেন জাদুঘরের ছোঁয়া পান সেই উদ্দেশ্য নিয়েই সংগ্রহশালাটি তৈরি করেছি।’’

সংগ্রহশালা গড়তে সরকার কিছুটা হলেও আর্থিক সহায়তা করেছে বলে তপনবাবুর দাবি। তিনি বলেছেন, ‘‘এখনও কাজ বাকি। যাঁর কাছে যা ইতিহাস বা সংস্কৃতির উপাদান আছে সেগুলি আমরা সংগ্রহশালার রাখব।’’

আমতারই খোড়প হাইস্কুলে এক বছর আগে চালু হয়েছে সংগ্রহশালা। স্কুলের একটি ঘরে এই সংগ্রহশালা। স্কুল পরিচালন সমিতি ও শিক্ষকেরা যৌথ ভাবে এই সংগ্রহশালা গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছেন। রাজ্যের নানা জায়গায় তাঁরা গিয়ে ইতিহাসের উপকরণ সংগ্রহ করে এনেছেন। ইতিমধ্যেই সংগ্রহশালা গড়তে খরচ হয়েছে লক্ষাধিক টাকা। সংগ্রহশালা দেখতে গ্রামের বহু মানুষ ভিড় করেন বলে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক অরুণকুমার মণ্ডল। সংগ্রহশালা গড়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন শিক্ষক অমিতাভ সরকার, বনমালী পাত্র। তাঁর জানান, কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের কাছে সহায়তার আবেদন করলেও একটি পয়সাও আসেনি। অমিতাভ বলেন, ‘‘ছাত্রদের ইতিহাস বইয়ের সিলেবাসের সঙ্গে হয়ত এই সংগ্রহশালায় রাখা উপকরণের মিল নেই। কিন্তু ছাত্রদের ইতিহাসের উপরে আগ্রহ তৈরির কাজটি করা যাচ্ছে এই সংগ্রহশালার মাধ্যমে।’’

বাগনানের মুগকল্যাণ পল্লিভারতী পাঠাগারের উদ্যোগে চলছে এই সংগ্রহশালা তৈরির কাজ। সংগ্রহ করা হয়েছে ঢেঁকি, চরকা, লাঙলের মত উপকরণ, যা একসময়ে ছিল মানুষের নিত্যপ্রয়োজনের বস্তু। পাঠাগারের সম্পাদক অরুণ ঘোষ বলেন, ‘‘এই সংগ্রহশালা গড়তে গিয়ে একটা নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে। বহু জায়গায় খবর পেয়ে উপকরণ আনতে যাচ্ছি। গিয়ে দেখছি সেগুলি অনেকে নষ্ট করে ফেলেছেন বা পুড়িয়ে ফেলেছেন। অনেক আগেই যদি আমরা এই কাজে নেমে পড়তাম তা হলে অমূল্য উপকরণগুলি এ ভাবে নষ্ট হত না।’’

দেরিতে হলেও সাধারণ মানুষের এই যে বোধোদয় হয়েছে তাকে স্বাগত জানিয়ে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার প্রাক্তন মহা অধীক্ষক গৌতম সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘উত্তরাধিকার হল সভ্যতার ধারাবাহিক একটি প্রক্রিয়া। উত্তরাধিকারকে রক্ষা করলে প্রক্রিয়া চালু থাকে। ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকানো পিতৃধন রক্ষাও বটে।’’

হাওড়ার বাগনানে আনন্দনিকেতন কীর্তিশালা নামে যে সংগ্রহশালাটি গড়ে ওঠে ১৯৬২ সালে, এখন তা মহীরূহে পরিণত। তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর এটিকে জেলা সংগ্রহশালার মর্যাদা দিয়েছে। সরকারই এটি চালায়। এই সব প্রাতিষ্ঠানিক গণ্ডির বাইরে গিয়ে মানুষের স্বতস্ফূর্ত চেষ্টার মাধ্যমে যে ভাবে একের পর এক গ্রামীণ সংগ্রহশালা তৈরি হচ্ছে তা প্রশংসার যোগ্য বলে মনে করেন গৌতমবাবু। তিনি বলেন, ‘‘এই সব সংগ্রহশালা চালানোর মধ্যে অগোছালো ভাব আছে। পেশাদারিত্বের অভাব আছে। কিন্তু গড়ার পিছনে যে আন্তরিকতা আছে তাকে কুর্নিস করতেই হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE