গড়চুমুক পর্যটনকেন্দ্র।
দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতা এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের পর্যটনের উন্নতিতে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। এ নিয়ে নানা পদক্ষেপও করার পাশাপাশি বিভিন্ন জেলার পর্যটনকেন্দ্রের পরিকাঠামোর উন্নতিতে ব্যবস্থা নিয়েছেন। অথচ কলকাতা লাগোয়া হাওড়া জেলার গুরুত্বপূর্ণ পর্যটনকেন্দ্র গড়চুমুকে গিয়ে তা বোঝা গেল না।
বাতাসে ইতিমধ্যে শিরশিরে ভাব। দরজায় কড়া নাড়ছে শীত। কয়েকদিনের মধ্যে শুরু হতে চলেছে পর্যটনের মরসুম। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে গড়চুমুক পর্যটনকেন্দ্রের অবস্থা একেবারেই শোচনীয়। কোথায় সেই কেয়ারি করা ঝোপ! দেখভালের অভাবে রাস্তার উপরেই চলে এসেছে জঙ্গল। পিকনিক করতে আসা লোকজন বা বেড়াতে আসা পর্যটকদের সুবিধার্থে বসানো নলকূপগুলি থেকে জল পড়ে না। অথচ এই পর্যটনকেন্দ্রকে জেলার অন্যতম সেরা বলেই প্রচার করে হাওড়া জেলা পরিষদ।
উলুবেড়িয়া শ্যামপুর রোডের দু’দিকেই দু’হাত অন্তর লাগানো রয়েছে গড়চুমুক পর্যটনকেন্দ্রের নামে বিজ্ঞাপন বোর্ড। ভাগীরথী ও দামোদরের তীরে অবস্থানের দিক থেকে এই পর্যটনকেন্দ্র খুবই মনোরম ও আকর্ষণীয়। এখানে ভাগীরথী থেকে দামোদরে জল ঢোকানোর জন্য সেচ দফতর দুটি নদীর সঙ্গমস্থলে ৫৮টি স্লুইস গেট তৈরি করেছে। সেই কারণে এই জায়গাটি ৫৮ গেট নামেও পরিচিত।
এখানে বন দফতরের তৈরি একটি মিনি চিড়িয়াখানা রয়েছে। সেখানে রয়েছে হরিণ, সজারু, ময়ূর বিভিন্ন রকমের পাখি এবং একটি কুমির। বাকি জায়গাটিকে পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলেছে জেলা পরিষদ। বেড়াতে আসা পর্যটকদের থাকার জন্য কটেজও রয়েছে। চিড়িয়াখানা বা কটেজ সারা বছর খোলা থাকলেও শীতের মরশুমে পর্যটকদের ভিড়ে এখানে পা ফেলাই মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। সেই সঙ্গে চড়ুইভাতি করতে আসা লোকজনের ভিড় তো রয়েইছে। একইসঙ্গে চলে চিড়িয়াখানা দর্শন।
আগাছায় ঢেকেছে চারদিক।
কিন্তু এ বার শীতের মরসুম শুরু হতে চললেও এখনও পর্যটকদের জন্য প্রস্তুত নয় গড়চুমুক। পার্কে ঘুরে দেখা গেল আগাছা এবং জঙ্গলে ভরে গিয়েছে পুরো এলাকা। পার্কের ভিতরে যাতায়াত করার জন্য যে সব রাস্তা রয়েছে ঝোপঝাড় চলে এসেছে তার উপরে। পর্যটকদের জন্য থাকা একাধিক নলকূপের বেশিরভাগই শুকনো। ছোটদের জন্য রয়েছে একটি পার্ক। পরিচর্যার অভাবে সেটির অবস্থাও শোচনীয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গড়চুমুকের একাধিক নিরাপত্তা রক্ষী জানালেন, নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার না করার ফলে এখানে সাপের উপদ্রব বেড়েছে।
এই পর্যটনকেন্দ্রের জন্য প্রবেশমূল্য নেয় জেলা পরিষদ। তা হলে এর নিয়মিত পরিচর্যায় ঘাটতি থাকবে কেন? ঘুরতে আসা কয়েকজন পর্যটকের মুখে শোনা গেল এমনই প্রশ্ন। এই পর্যটনকেন্দ্রে শুধু হাওড়া নয়, পাশের জেলা হুগলি এবং কলকাতা থেকেও অনেকে আসেন চড়ুইভাতি করতে, বেড়াতে। নদীর ধারে গড়চুমুকের একটা আলাদা আকর্ষণও রয়েছে তাঁদের কাছে। জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, বছরে লক্ষাধিক পর্যটক গড়চুমুকে আসেন। তবে কয়েক বছর হল গড়চুমুকে পর্যটকদের ভিড়ের কারণে আটান্ন গেটের উল্টো দিকে একটি নতুন পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তুলেছে জেলা পরিষদ। এখানে বেশ কিছু পরিকাঠামোগত উন্নয়ন করেছে তারা। এখানে যাঁরা চড়ুইভাতি করতে আসবেন তাঁদের রান্নার জন্য একটি শেডও তৈরি করে দিয়ে জেলা পরিষদ। আবর্জনা ফেলার জন্য দুটি ভ্যাটও করে দেওয়া হয়েছে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে। নতুন পর্যটনকেন্দ্রটি উন্মুক্ত। এখানকার জন্য কোনও প্রবেশমূল্য নেই।
অকো়জো নলকূপ
পুরনো পর্যটনকেন্দ্রটি যে আগাছা এবং জঙ্গলে ঢেকে গিয়েছে তা স্বীকার করেছেন জেলা পরিষদের বন ও ভূমি সংক্রান্ত কর্মাধ্যক্ষ মানস বসু। তিনি বলেন, ‘‘আমরা জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে শ্যামপুর ১ ব্লকের বেলাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতকে বলেছি ১০০ দিনের প্রকল্পে আগাছা সাফ করতে। আগাছা সাফ করার সময়েই সাপ তাড়াতে কার্বলিক অ্যাসিড দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।’’ তবে নলকূপগুলিতে জল না থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন মানসবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘নলকূপগুলিতে পূর্ত দফতরের পাম্প থেকে জল সরবরাহ করা হয়। তবে এখন যেহেতু খুব বেশি পর্যটক নেই, তাই হয়তো জল সরবরাহ করা হচ্ছে না।’’
পরিস্থিতি ঠাই হোক, পর্যটনের ভরা মরসুম শুরু হওয়ার আগে গড়চুমুক তার সৌন্দর্য ফিরে পায় কিনা সেটাই দেখার।
ছবি: সুব্রত জানা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy