কেন্দ্র অনিয়মিত টাকা পাঠানোয় বকেয়া হয়েছে প্রায় দু’কোটি টাকা। তাই কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে হাওড়ায় কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় শিশু শ্রমিক প্রকল্পের থাকা স্কুলগুলি। অভিযোগ, টাকার অভাবে ৩০ মাস সাম্মানিক ভাতা পাননি ১৬৫ জন শিক্ষক। বন্ধ পড়ুয়াদের মাসিক ১৫০ টাকা ভাতা, মিড-ডে মিলও। ফলে জেলায় এই স্কুলের সংখ্যা ৪০ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৩৩-এ।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ২০০৮ সালে জাতীয় শিশুশ্রমিক প্রকল্পে এ রাজ্যে শিশু শ্রমিকদের নিখরচায় পড়ার জন্য ৯৮৫টি স্কুল তৈরি হয়। হাওড়ায় তৈরি হয় ৪০টি স্কুল। জেলাশাসকদের নেতৃত্বে জেলার বিশিষ্ট মানুষদের নিয়ে তৈরি হয় শিশুশ্রমিক কল্যাণ সমিতি। স্কুলপিছু নিয়োগ করা হয় পাঁচ জন করে শিক্ষক। প্রকল্পের নিয়মে পড়ুয়ারা পায় খাবার থেকে হাতখরচের টাকা, বই-খাতা থেকে পেন-পেনসিল। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পড়ুয়াদের জন্য খুলে দেওয়া হয় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট।
হাওড়া জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, স্কুলগুলি চালাতে যেখানে প্রতি বছর ১ কোটি টাকা দেওয়া প্রয়োজন, ২০১২ থেকে সেখানে টাকা বরাদ্দ করা হয় কয়েক মাসের। কখনও আবার বছরভর টাকা পাঠানোই বন্ধ করে দেয় কেন্দ্র। হাওড়ায় প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা ডিরেক্টর সোমনাথ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘২০১২-১৩ আর্থিক বছরে টাকাই মেলেনি। ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে মাত্র ৩৯ লক্ষ টাকা, ২০১৪-১৫ সালে এসেছে ৫৭ লক্ষ ৪২ হাজার, ৭০০ টাকা। আর ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে মিলেছে মাত্র ২৩ লক্ষ।’’
সোমনাথবাবু জানান, নিয়মিত টাকা না পাঠানোয় বকেয়া হয়েছে ২ কোটি টাকার বেশি। কেন্দ্রীয় শ্রম এবং শিশু শ্রমিক মন্ত্রককে বারবার চিঠি দিয়েও অর্থ নামঞ্জুরের সঠিক কারণ জানা যায়নি। তিনি বলেন, ‘‘আমি এক বার দিল্লি গিয়ে তদ্বিরও করি। বছর দুয়েকের হিসেবও দেখাই। সব দেখে টাকা পাঠানোর আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল ।’’
এ দিকে, কেন্দ্র টাকা না পাঠানোয় সব চেয়ে সমস্যায় প্রকল্পে যুক্ত ১৬৫ জন শিক্ষক। শালিমারের কাছে একটি শিশু শ্রমিক স্কুলের শিক্ষিকা (নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ‘‘আমাদের উভয় সঙ্কট। এক দিকে ভাতা ও মিড-ডে মিল না পেয়ে স্কুলে আসার আগ্রহ কমে গিয়েছে। অন্য দিকে, প্রায় ৩০ মাস বেতন না পেলেও আমাদের স্কুল খোলা রাখতে হচ্ছে। কত দিন পারব, জানি না।’’ ওই শিক্ষিকা জানান, জেলা প্রশাসনের থেকে বেতনের আশ্বাস না পেয়ে তাঁরা কয়েক জন দেখা করেছিলেন রাজ্যের শিশুশ্রম দফতরের দায়িত্বে থাকা ডেপুটি লেবার কমিশনার মনীষা ভট্টাচার্যের সঙ্গে। মনীষাদেবীও কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি বলে জানান ওই শিক্ষিকা।
এ ব্যাপারে মনীষাদেবী বলেন, ‘‘ওঁরা দেখা করেছেন ঠিকই। নিয়মানুযায়ী কেন্দ্র সরাসরি জেলাশাসকদের টাকা পাঠায়। কোন খাতে তাঁরা খরচ করছেন, তার হিসেব দেয় আমাদের জেলাগুলি। কিন্তু কেন কেন্দ্র টাকা পাঠাচ্ছে না, তা তো জেলাশাসকদেরই দেখতে হবে।’’
শিশুশ্রম দফতরের ভারপ্রাপ্ত হাওড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) শম্পা ধর বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিচ্ছি। কেন্দ্র কেন অনিয়মিত টাকা দিচ্ছে, তা আমাদের কাছেও স্পষ্ট নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy