Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

ছেলে নেপালে যাক, চান না লক্ষ্মীরানিদেবী

স্বজনদের কাছে ফিরে এসেছেন প্রায় এত সপ্তাহ হতে চলল। তবু ভূমিকম্প বিধ্বস্ত নেপাল থেকে কোনওক্রমে বেঁচে ফেরা ছেলের ভয়ঙ্কর স্মৃতিতে প্রলেপ দিতে ব্যর্থ বাবা-মা, আত্মীয়দের সাহচর্য। রোজকার মতোই সেদিন কাজে বেরিয়েছিলেন সন্দীপ। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে কাঠমান্ডুতে সোনা-রুপোর ব্যবসা হাওড়া পাঁচলার গঙ্গাধরপুরের বোধকপাড়ার বাসিন্দা সন্দীপ বোধকের।

চোখের সামনে দেখা ভূকম্পনের অভিজ্ঞতা শোনাচ্ছেন সন্দীপ।

চোখের সামনে দেখা ভূকম্পনের অভিজ্ঞতা শোনাচ্ছেন সন্দীপ।

রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়
পাঁচলা শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৫ ০১:২৭
Share: Save:

স্বজনদের কাছে ফিরে এসেছেন প্রায় এত সপ্তাহ হতে চলল। তবু ভূমিকম্প বিধ্বস্ত নেপাল থেকে কোনওক্রমে বেঁচে ফেরা ছেলের ভয়ঙ্কর স্মৃতিতে প্রলেপ দিতে ব্যর্থ বাবা-মা, আত্মীয়দের সাহচর্য। রোজকার মতোই সেদিন কাজে বেরিয়েছিলেন সন্দীপ। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে কাঠমান্ডুতে সোনা-রুপোর ব্যবসা হাওড়া পাঁচলার গঙ্গাধরপুরের বোধকপাড়ার বাসিন্দা সন্দীপ বোধকের। কাঠমান্ডুর একটি ১৮ তলা আবাসনের সাততলায় স্ত্রী অপর্ণা ও পাঁচ বছরের মেয়ে সৌমীকে নিয়ে থাকতেন তিনি। ২৫ এপ্রিল বেলা প্রায় ১টা নাগাদ প্রবল ভূমিকম্পের ফলে প্রকৃতির যে ধ্বংসলীলা নিজের চোখে দেখেছেন এ দিন তা বলতে গিয়ে বার বার শিউরে উঠছিলেন আর ঈশ্বরকে ধন্যবাগ দিচ্ছিলেন সপরিবার বেঁচে ফিরে আসার জন্য। জানালেন, সে দিন ঘটনার সময় ব্যবসার অর্ডার ধরতে বাইরে বেরিয়েছিলেন। স্ত্রী বাড়িতে রান্নার কাজে ব্যস্ত আর মেয়ে সৌমী টিভি-তে কার্টুন দেখছিল। অপর্ণাদেবীর কথায়, ‘‘হঠাৎ আমাদের ১৪ তলা ফ্ল্যাট বাড়িটা দুলতে লাগল। দেখলাম দেওয়ালে একের পর এক ফাটল ধরছে। খসে খসে পড়তে লাগল সিমেন্টের চাঙর। ভূমিকম্পের কথা ভেবে সঙ্গে সঙ্গে মেয়ে সৌমীকে নিয়ে ফ্লাট ছেডে় নীচে নমে আসি। ফ্ল্যাটের অন্য বাসিন্দারাও নীচে নেমে এসেছিল। চারপাশে তখন বহু বাড়ি ভেঙে পড়ার আওয়াজ আর সেই সঙ্গে চিৎকার-চেঁচামেচি, আর্তনাদ। মুহূর্তে মনে হল ওর কথা। কিছুক্ষণের মধ্যে ও চলে আসে। কী করব কেউ-ই বুঝে উঠতে পারছিলাম না।’’ সন্দীপের কথায়, ‘‘তার পর দু’দিন-দু’ রাত কেটেছে খোলা আকাশের নীচে ঠান্ডায়। খাবার বলতে স্রেফ মুড়ি আর জল। তারই মধ্যে যতটা পেরেছি আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছি। সহায়-সম্বল সবই গিয়েছে। এক সময় মনে হচ্ছিল আর বোধহয় বাবা-মায়ের কাছে ফেরা হবে না। শেষ পর্যন্ত কোনওক্রমে ২৯ এপ্রিল দেশের বাড়িতে ফিরে আসি।’’

ঘরের ছেলে ঘরে ফেরার পর থেকেই বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীদের ভিড় লেগেই রয়েছে। কিন্তু তার মধ্যেও থেকেই থেকেই ধ্বংসের স্মৃতি ভেসে ওঠায় এখনও আতঙ্কে সন্দীপবাবু। প্রকৃতির এই ধ্বংসলীলা থেকে ছেলে-বৌমা ও নাতনি ফিরে আসায় এ দিন লক্ষ্মীরানিদেবী বার বার কপালে হাত ঠেকিয়ে প্রণাম করছিলেন আর ধন্যবাদ দিচ্ছিলেন ঈশ্বরকে। বললেন, ‘‘ছেলেকে বলেছি, আর ওমুখো নয়। এখানেই যা হয় কিছু কর। সবার আগে তো জীবন, তাই না বলুন?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE