বিতর্ক: টলটলে এই দিঘি নিয়েই চলছে গোলমাল। ফাইল চিত্র
রাগ বাড়ছে ভাবাদিঘির মানুষের। সঙ্গে জেদও!
রাগ রাজ্যের শাসকদল এবং পুলিশের ‘আচরণে’। জেদ দিঘি বাঁচানোর। গ্রামবাসীরা পাশে চাইছেন সিপিএম নেতা বিকাশ ভট্টাচার্যকে। পাশে চাইছেন ‘সেভ ডেমোক্রেসি’কেও। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি দেখলেই তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘ওঁরা আবার কবে আসবেন বলতে পারেন? এখানে আসতে গিয়ে ওঁদের মার খেতে হয়েছে, এটা আমরা মানতে পারছি না। ওই ঘটনায় আমাদের দিঘি বাঁচানোর জেদ আরও বেড়ে গিয়েছে।’’
জেদ বেড়েছে বিকাশবাবু এবং ‘সেভ ডেমোক্রেসি’রও। ওই সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক চঞ্চল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা ভাবাদিঘির মানুষের পাশে আছি। শীঘ্রই আমরা ওই এলাকায় যাব।’’ বিকাশবাবুও বলেন, ‘‘আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে আমিও ভাবাদিঘি যাব।’’
গোঘাটের ৫২ একরের ভাবাদিঘিকে (দিঘির নামেই গ্রামের নাম) ঘিরেই জট পাকিয়েছে তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর রেল প্রকল্পে। রেল ওই দিঘির একাংশ বুজিয়ে রেললাইন পাততে চায়। কিন্তু গ্রামবাসীরা নারাজ। তাঁদের দাবি, দিঘি না বুজিয়ে উত্তর পাড়ের জমির উপর দিয়ে রেললাইন পাতা হোক। এতে পরিবেশ এবং বাস্তুতন্ত্র যেমন রক্ষা হবে, তেমনই ঘর-গেরস্থালির কাজে তাঁরা দিঘি ব্যবহার করতে পারবেন। যাঁরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন, তাঁরাও সঙ্কটে পড়বেন না।
দু’পক্ষের এই টানাপড়েনের জেরেই থমকে রয়েছে রেল প্রকল্পের কাজ। কিছুদিন আগেই রেলের তরফে দিঘির একাংশে মাটি ফেলা শুরু হতেই শ’তিনেক মহিলা রণংদেহি মূর্তিতে প্রতিবাদ জানান। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলার জন্য গত শনিবার সিপিএমের আইনজীবী নেতা বিকাশবাবুকে নিয়ে ভাবাদিঘি যাচ্ছিলেন ‘সেভ ডেমোক্রেসি’র প্রতিনিধিরা। কিন্তু গোঘাটের উল্লাসপুরে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা তাঁদের পথ আটকে মারধর করে বলে অভিযোগ ওঠে। বিকাশবাবুরা ফিরে যান।
সে দিনের ওই হামলা টিভিতে দেখার পর থেকেই ফুঁসছেন আন্দোলনকারীরা। ‘দিঘি বাঁচাও কমিটি’র পক্ষে প্রসাদ রায় বলেন, ‘‘আমাদের মারধর করে কিংবা মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে কিছু করা যাচ্ছে না। তাই যাঁরা আমাদের পাশে থাকতে চান, তাঁদের মারধর করে আমাদের থেকে দূরে সরাতে তৃণমূল এবং পুলিশ ষড়যন্ত্র করছে।” বাসন্তী মালিক নামে এক গৃহবধূ বলেন, “সে দিন টিভিতে ওই ঘটনা দেখে আমাদের খুব কষ্ট হয়েছিল।” রাগ ঠিকরে বেরোচ্ছিল বিমল মালিক নামে এক বৃদ্ধ আন্দোলনকারীর কথায়, ‘‘মিহির সর্দারের নাম শুনেছেন? বহু যুগ আগে বাংলার দুর্ধর্ষ ডাকাতদের এক জন ছিলেন তিনি। এই ভাবাদিঘিরই মানুষ। গরিবদের বাঁচাতেন। দিঘি বাঁচাতে আমরা এক এক জন এখন মিহির সর্দার।’’
দিঘিটি ঘিরে ২৫০টি পরিবারের বাস। গ্রামবাসীদের অধিকংশই দিনমজুর বা খেতমজুর। বেশিরভাগই দিঘি বাঁচানোর পক্ষে। যাঁরা ক্ষতিপূরণের চেক নিয়েছেন, তাঁদের ভুল বুঝিয়ে তা বিলি করা হয়েছে বলে দাবি ‘দিঘি বাঁচাও কমিটি’র। স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের অবশ্য দাবি, ওই এলাকায় কয়েকটি পরিবারই গোলমাল পাকাচ্ছে। বহিরাগত কিছু সংগঠন অশান্তির চেষ্টা করছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy