সেই জলাধার । —নিজস্ব চিত্র।
চার বছর আগে মিলেছিল প্রকল্পের ছাড়পত্র। দু’বছর ধরে জলাধার নির্মাণের কাজ চলার পরে তা শেষ হয় সম্প্রতি। ইতিমধ্যে দেওয়া হয়ে গিয়েছে পাইপ লাইনের সংযোগও। ঠিক হয়েছিল বাংলা নববর্ষের দিন থেকে চুঁচুড়ার কোদালিয়া-১ পঞ্চায়েতের পাঁচটি মৌজায় বাড়ি বাড়ি পানীয় জল সরবরাহ করা হবে। কিন্তু প্রায় দেড় মাস পরেও প্রকল্পটি এখনও চালু হল না। ফলে, এই গরমেও জলের সঙ্কট থেকে মুক্তি পেলেন না এলাকাবাসী।
কোদালিয়া-১ পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের দেবাশিস চক্রবর্তী অবশ্য প্রকল্পটি চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ চালুর আশ্বাস দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘সব ঠিকঠাকই চলছিল। দু’টি পাম্প হাউস এবং জলাধার নির্মাণের কাজও প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তৃতীয় পাম্প হাউসটি তৈরির ক্ষেত্রে জমি নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। তার জন্য মাস চারেক প্রকল্পের কাজ বন্ধ ছিল। সম্প্রতি সেই সমস্যা মিটেছে। কাজ চলছে। প্রকল্পটি চালু হলে জলসঙ্কট দূর হবে।’’
ওই পঞ্চায়েতের অধীন উত্তর চন্দননগর, চুঁচুড়া ও ধরমপুর মৌজার একাংশ এবং শিমলা ও কুলিহান্ডা— এই পাঁচটি এলাকার বাসিন্দাদের পানীয় জলের জন্য গভীর নলকূপের উপরে নির্ভর করতে হয় এখনও। অনেক সময়েই নলকূপ খারাপ হয়ে গেলে বাসিন্দাদের দুর্ভোগ বাড়ে। পঞ্চায়েতের উদ্যোগে ওই সমস্যা মেটানোর জন্য আগেই পল্লিশ্রী এবং টালিখোলা এলাকায় পাম্প বসিয়ে গভীর নলকূপের মাধ্যমে জল তুলে ৩০০টি ট্যাপকলের সাহায্যে জল সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়। তাতেও সঙ্কট মেটেনি। একাধিকবার স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভের মুখে পড়েন পঞ্চায়েতের সদস্যেরা। আন্দোলনও হয়। সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য ভূগর্ভ থেকে জলাধারে জল তুলে তা সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেয় পঞ্চায়েত।
পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৮ সালে এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর প্রকল্প তৈরি করে রাজ্য সরকারের কাছে পাঠায়। ২০১১ সালে ছাড়পত্র মেলে। এ জন্য ওই বছরের নভেম্বরে ২ কোটি ৯৮ লক্ষ ৯৬ হাজার টাকা মঞ্জুর হয়। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে পল্লিশ্রী এলাকায় ৬০ ফুট উঁচু এবং দেড় লক্ষ গ্যালন জল ধারণের ক্ষমতা সম্পন্ন জলাধারটির নির্মাণ শুরু হয়। ময়নাডাঙা এবং দেবীপুর এলাকায় পাম্প হাউস তৈরি হয়। কিন্তু যুব সঙ্ঘের মাঠে পাম্প হাউস তৈরির জমি নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। সেই কারণেই নববর্ষের দিন থেকে জল সরবরাহ শুরু করা যায়নি বলে পঞ্চায়েতের দাবি। জল সরবরাহ চালু হলে উপকৃত হবেন পাঁচটি মৌজার ৩৮ হাজারেরও বেশি বাসিন্দা।
চুঁচুড়ার তৃণমূল বিধায়ক তপন মজুমদার বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরেই ওই পঞ্চায়েতে জলের বড় সমস্যা রয়েছে। মানুষকে ভূগর্ভস্থ জলের উপর নির্ভর করতে হয়। অনেকে নিজের উদ্যোগে খরচ করে জলের ব্যবস্থা করেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেই সমস্যা মোকাবিলায় উদ্যোগী হয়েছে। জমি নিয়ে সমস্যার জন্য প্রকল্পের কাজ শেষ হতে কিছুটা দেরি হল। যত শীঘ্র সম্ভব জল সরবরাহ চালু করার চেষ্টা হচ্ছে।’’
কিন্তু এই গরমেও জলের সমস্যার সমাধান না হওয়ায় এললাকাবাসীর ক্ষোভ যাচ্ছে না। কোদালিয়ার বৃদ্ধ পাঁচুগোপাল ধর বলেন, ‘‘সারা জীবনটাই জলের সমস্যায় ভুগলাম। রাস্তার কলে স্নান করে আর বোতলে জল ভরে নিয়ে এসে চালালাম। ভেবেছিলাম জীবনের শেষ পর্বে পঞ্চায়েতের দেওয়া জলে প্রাণটা জুড়োবে। কিন্তু জানি না কবে সেই জল পাব।’’ ময়নাডাঙার বাসিন্দা সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ বারেও যে জল সরবরাহ চালু হবে না বুঝতে পারিনি। ভেবেছিলাম রাস্তার কলে লাইন দিয়ে জল নেওয়ার কষ্ট দূর হবে। কিন্তু তা যে কবে হবে কে জানে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy