Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

লোকসভায় বিরোধীদের ফলে অস্বস্তিতে তৃণমূল

২০১০ সাল থেকে এককভাবে পুরসভায় ক্ষমতায়। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখেও পুরসভার ৩২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৮টিতেই তারা এগিয়ে। তবুও উলুবেড়িয়া পুরসভা নির্বাচনে জয় নিয়ে অস্বস্তি এড়াতে পারছে না তৃণমূল। ২০০৯ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে পুরনির্বাচনে লড়েছিল তৃণমূল। উভয়েই পেয়েছিল ১১টি করে আসন। তবে সেই জোট ভেঙে যায় নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরেই। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের ফলে দেখা যায় কংগ্রেসের অস্তিত্ব কার্যত মুছে গিয়েছে।

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১৬
Share: Save:

২০১০ সাল থেকে এককভাবে পুরসভায় ক্ষমতায়। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখেও পুরসভার ৩২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৮টিতেই তারা এগিয়ে। তবুও উলুবেড়িয়া পুরসভা নির্বাচনে জয় নিয়ে অস্বস্তি এড়াতে পারছে না তৃণমূল।

২০০৯ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে পুরনির্বাচনে লড়েছিল তৃণমূল। উভয়েই পেয়েছিল ১১টি করে আসন। তবে সেই জোট ভেঙে যায় নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরেই। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের ফলে দেখা যায় কংগ্রেসের অস্তিত্ব কার্যত মুছে গিয়েছে। তবুও এ বার পুরনির্বাচনে ৩২টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছে তারা। ভোটের প্রচারে নিজেদের ক্ষমতা জাহির করতে চেষ্টার কসুর নেই কংগ্রেস নেতাদের। এই অবস্থায় আপাত ‘অদৃশ্য’ কংগ্রেসকে পুরনির্বাচনে উলুবেড়িয়া থেকে পুরোপুরি মুছে ফেলা যাবে কিনা তার উপরেই তৃণমূলের সাফল্য অনেকটা নির্ভর করছে বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত।

পাশাপাশি বিজেপির উত্থানও কপালে ভাঁজ ফেলেছে তৃণমূলের। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তাদের ফল কংগ্রেস বা বামফ্রন্টের চেয়ে অনেক ভাল। পুরভোটে যে তারা তৃণমূলকে বেগ দিতে পারে তা নিয়ে সন্দেহ নেই তৃণমূলের একাংশের। যদিও কেউই এ নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে যতগুলি আসনে তৃণমূল এগিয়ে ছিল তার অনেকটাই তারা বাড়িয়ে নিতে চাইছে এই নির্বাচনে।

২০০৯ সালে কংগ্রেস যে ১১টি ওয়ার্ডে জিতেছিল সেগুলি হল ১, ৮, ১০, ১৩, ১৪, ১৭, ১৮, ১৯, ২৩, ২৫ এবং ২৯ । এর মধ্যে ২৯ এবং ১৩ নম্বর ওয়ার্ড ছাড়া বাকি ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলরেরা চলে যান তৃণমূলে। কিন্তু লোকসভা ভোটের নিরিখে এই ১১টি আসনেই কংগ্রেসের অবস্থা ভাল নয়। ১, ১০, ১৪,১৯, ২৩, এবং ২৫, নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেস রয়েছে চতুর্থ স্থানে এবং ৮, ১৩, ১৭, ১৮ এবং ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে তাদের স্থান তৃতীয়। তবে এ সব ধর্তব্যে আনতে রাজি নন তাঁরা। আমতার বিধায়ক ও কংগ্রেস নেতা অসিত মিত্র বলেন, ‘‘এটা ঠিকই, যে ১১টি ওয়ার্ডে আমরা জিতেছিলাম, পরবর্তীকালে তার অনেক ওয়ার্ডেই দলের অবস্থা ভাল নয়। কিন্তু বহু ওয়ার্ড আছে যেখানে আমরা চেষ্টা করলে ভাল ফল করতে পারব। আশা করছি পুরবোর্ড দখল করব আমরা।’’

অসিতবাবু এমন দাবি করলেও, জেলার নেতাদের একাংশ স্বীকার করেছেন, ১০টির বেশি আসনে তাঁরা জেতার আশা দেখছেন না। তবে সেটুকু হলেও তাঁদের উদ্দেশ্য সফল হবে বলে মনে করছেন তাঁরা। তাঁদের যুক্তি, কংগ্রেস ১০টি আসন পাওয়ার অর্থ তৃণমূলের আসন কমে যাওয়া। ফলে তারা কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচন পরবর্তী জোট করতে বাধ্য হবে। সেটাই বড় প্রাপ্তি হবে কংগ্রেসের কাছে। না হলে প্রধান বিরোধী দলের তকমা তো পাওয়া যাবে!

২০০৯ সালে পুরনির্বাচনে বিজেপি ২টি আসন পেয়েছিল। অথচ ২০১৪-র লোকসভার ফলে তারা পুরনো ৮, ৯, ১১, ১২, ১৩, ২৬ ও ১৬ এই সাতটি ওয়ার্ডে প্রথম স্থানে। অন্যদিকে পুরোন ৫, ৬, ৭, ১৪, ২৩, ২৪, ২৫, এবং ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে তারা দ্বিতীয় স্থানে। এই অবস্থায় ক্ষমতা দখলের স্বাভাবিক স্বপ্ন দেখতছ তারাও। দলের হাওড়া জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) গৌতম রায় বলেন, ‘‘মানুষের কাছে যাচ্ছি। অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি। পুরসভায় ক্ষমতা দখলের ব্যাপারে আমরা আত্মবিশ্বাসী।’’

তৃণমূল-বিজেপির দ্বৈরথ থেকে অবশ্য অনেকটাই পিছিয়ে বামফ্রন্ট। তবে ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে কংগ্রেসের চেয়ে তারা ভাল অবস্থায়। ২০০৯ সালের পুরনির্বাচনে বামেরা পেয়েছিল চারটি আসন। তার মধ্যে সিপিএম পেয়েছিল ২টি এবং ফরওয়ার্ড ব্লক দু’টি। ২০১৪-র লোকসভা ভোটের ফলে চারটির মধ্যে তিনটি আসন ধরে রাখতে পেরেছে তারা। এ ছাড়া পুরনো ১, ৩, ৪, ১০, ১৭, ১৮, ২০, ২২, ২৮, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে তারা দ্বিতীয় স্থানে। এখানে তাদের লড়াই মূলত তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে তারা প্রথম স্থানে রয়েছে। ক্ষমতায় যদি নাই-ই আসা যায়, সেক্ষেত্রে প্রধান বিরোধীদলের তকমা নিতে ঝাঁপাচ্ছে তারাও।

লোকসভার নিরিখে বাম-কংগ্রেস ও বিজেপি-র অবস্থানকে গুরুত্ব দিতে নারাজ উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক তথা দলের জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) পুলক রায়। তিনি বলেন, ‘‘৩৪ বছর রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট। ২৭ বছর এই পুরসভায় ক্ষমতায় ছিল তারা। দু’টি ক্ষেত্রেই মানুষ দেখেছেন কোনও উন্নয়ন হয়নি। তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে চার বছর। এই পুরসভাতেও এককভাবে তৃণমূল ক্ষমতায় রয়েছে চার বছর। এই সময়ে রাজ্যে এবং পুরসভায় উন্নয়নের জোয়ার মানুষ দেখেছেন। বিরোধীদের কুৎসা ও অপপ্রচারের জবাব দেবেন তাঁরাই।’’ একই সুর উলুবেড়িয়ার তৃণমূল সাংসদ সুলতান আহমেদেরও।

বিরোধীরা অবশ্য আশঙ্কা, ভোটে জিততে লাগামছাড়া সন্ত্রাস করবে তৃণমূল। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘অবাধ নির্বাচন হলে আমরাই ক্ষমতায় আসব। তবে আশঙ্কা, তৃণমূল সন্ত্রাস করবে। আমরা মহকুমাশাসককে সন্ত্রাসমুক্ত নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য একাধিকবার স্মারকলিপি দিয়েছি।’’

অসিতবাবুর দাবি, ‘‘‘গণতান্ত্রিক পরিবেশে অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করুক নির্বাচন।’’ একই দাবি বামেদেরও।

বিরোধীদের সন্ত্রাসের অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের দাবি, মানুষ তাঁদের সঙ্গেই আছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE