Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ক্ষমতায় তৃণমূলই, কমল বিরোধীদের সঙ্গে ব্যবধান

টক্কর হয়েছিল প্রায় সমানে সমানে। ভোটের ফলেও প্রতিফলিত হল সেই লড়াইয়ের ছবি। উলুবেড়িয়া পুরসভায় তৃণমূল ক্ষমতা ধরে রাখলেও বিরোধীদের সঙ্গে ব্যবধান অনেকটাই মুছে গেল। গতবার ২৯ ওয়ার্ডের পুরসভায় কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে তৃণমূল পেয়েছিল ২২টি ওয়ার্ড। বামফ্রন্ট এবং বিজেপি পেয়েছিল যথাক্রমে ৪টি এবং ২টি আসন। এ বার ওয়ার্ডের সংখ্যা বেড়েছে।

ছবি: সুব্রত জানা।

ছবি: সুব্রত জানা।

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৫৮
Share: Save:

টক্কর হয়েছিল প্রায় সমানে সমানে।

ভোটের ফলেও প্রতিফলিত হল সেই লড়াইয়ের ছবি। উলুবেড়িয়া পুরসভায় তৃণমূল ক্ষমতা ধরে রাখলেও বিরোধীদের সঙ্গে ব্যবধান অনেকটাই মুছে গেল।

গতবার ২৯ ওয়ার্ডের পুরসভায় কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে তৃণমূল পেয়েছিল ২২টি ওয়ার্ড। বামফ্রন্ট এবং বিজেপি পেয়েছিল যথাক্রমে ৪টি এবং ২টি আসন। এ বার ওয়ার্ডের সংখ্যা বেড়েছে। ৩২টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছে ১৯টি। বিরোধীরা ১৩টি (বামফ্রন্ট ৬, বিজেপি ৪, কংগ্রেস ৩)। ফলে, এ বার পুরসভা চালাতে গিয়ে তৃণমূল বিরোধীদের সম্মিলিত শক্তির কাছে কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক শিবির।

ভোটের প্রচার পর্বে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের কেউ কেউ বিরোধীশূন্য পুরসভার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেছিলেন, রাজ্য যে হেতু তাঁরা ক্ষমতায় আছেন, তাই পুরসভাতেও তাঁরা ক্ষমতায় এলে উন্নয়নের কাজে সুবিধা হয়। উলুবেড়িয়ার তৃণমূল নেতৃত্ব এ বার প্রথম থেকেই সচেষ্ট ছিল একক ভাবে পুরবোর্ডের ক্ষমতা দখল করার জন্য। তা হলেও প্রত্যাশা যে পুরোপুরি পূরণ হয়নি, তা ঠারেঠোরে মানছেন অনেক নেতাই। জেলা তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘আমরা অন্তত ২৫টি আসন পাওয়ার প্রত্যাশা করেছিলাম। তা হল না।’’

তবে, উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক তথা দলের জেলা (গ্রামীণ) সভাপতি পুলক রায় প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বলে মানতে চাননি। তাঁর দাবি, ‘‘বিরোধীদের অপপ্রচার এবং কুৎসার বিরুদ্ধে আমাদের একক লড়াই করতে হয়েছে। অনেক জায়গায় আমাদের প্রার্থীদের হারাতে বিরোধীরা গোপনে এককাট্টা হয়েছিল, এমন খবরও আছে। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনের ফলে আমরা খুশি। আরও ভাল ভাবে মানুষের জন্য কাজ করব।’’

২০০৯ সালের পুরভোটে তৃণমূল একক ভাবে জেতেনি। কংগ্রেসের সঙ্গে তাদের জোট করতে হয়। দু’দলই ১১টি করে আসন পেয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনের পরেই জোট ভেঙে যায়। মাত্র ১১টি ওয়ার্ড নিয়ে এক বছর বোর্ড চালায় কংগ্রেস। পরে কংগ্রেস কাউন্সিলরদের একাংশকে এবং এক ফরওয়ার্ড ব্লক সদস্যকে দলে নিয়ে চার বছর বোর্ড চালায় তৃণমূল। এ বার তারা একাই লড়েছে। সেই হিসেবে একক ভাবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে তারা পুরবোর্ডের দখল পায় কিনা সেটা প্রমাণ করা ছিল তৃণমূলের কাছে চ্যালেঞ্জ। বলাই বাহুল্য, তারা উতরে গিয়েছে। গত বছরের লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে তৃণমূল ১৮টি ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল। পুরসভা নির্বাচনের ফলেও দেখা যাচ্ছে, তারা মোটামুটি ক্ষমতা একই ভাবে ধরে রেখেছে।

বিরোধীদের মধ্যে বিজেপি আসনসংখ্যার নিরিখে এ বার দু’টি বেশি আসন পেয়েছে। গতবার তাদের দখলে ছিল ২টি। তা সত্ত্বেও, এ বারের ফলকে সাফল্য বলে মানতে নারাজ বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ। তাঁদের যুক্তি, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এখানে বিজেপির উত্থান হয়। তখন বিজেপি এগিয়ে ছিল ৭টি ওয়ার্ডে। ৮টি ওয়ার্ডে তারা ছিল দ্বিতীয় স্থানে। এ বার আরও ভাল ফলের আশায় প্রচারে ঝড়ও তুলেছিল তারা। রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের রোড শো-তে বেশ সাড়া পড়ে। বিজেপি পুরসভা দখল করতে পারে বলে দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। কিন্তু তা হল না। এ জন্য তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগকেই হাতিয়ার করেছে তারা। কিন্তু রাজনৈতিক শিবিরের কেউ কেউ বলছেন, বিজেপি এখানে এখনও সাংগঠনিক ভাবে সেই শক্তি সঞ্চয় করতে পারেনি।

তবে, বামেরা আসন বাড়িয়েছে। ২০০৯ সালে তারা পেয়েছিল ৪টি। এ বার ৬টি (সিপিএম ৫, ফরওয়ার্ড ব্লক ১)। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে তারা এগিয়েছিল ৪টি ওয়ার্ডে। এ বার পুরসভায় কে প্রধান বিরোধী দল হবে, তা নিয়ে বিজেপির সঙ্গে বামেদের প্রতিদ্বন্দ্বিতাও দেখা গিয়েছিল। ফলাফলেই স্পষ্ট বিজেপিকে শুধু পিছনে ফেলে দেওয়াই নয়, প্রধান বিরোধী দলের তকমাও পেতে চলেছে বামেরা। সিপিএমের জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদারের দাবি, ‘‘সন্ত্রাস করে বেশ কয়েকটি আসন আমাদের থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। না-হলে আরও বেশি আসন পেতাম।’’

ভোটের ফলে কিছুটা অক্সিজেন পেয়েছে কংগ্রেসও। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলে দেখা যায় কংগ্রেস কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দলের অবস্থান যে ঠিক কোথায়, তা নিয়ে ধন্দে ছিলেন নেতারাই। মঙ্গলবার দেখা গেল, কংগ্রেস ৩টি ওয়ার্ডে জিতে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন আমতার দলীয় বিধায়ক অসিত মিত্র এবং জেলা কংগ্রেস সভাপতি কাজি আব্দুল রেজ্জাক। দু’জনরেই দাবি, ‘‘কংগ্রেসকে শেষ করা যাবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE