জলের প্রতীক্ষা। বুধবার, হাওড়ায়।—নিজস্ব চিত্র।
দুর্ভোগ কাটল না হাওড়ার। বিনা নোটিসে গোটা শহর নির্জলা করে দেওয়ার ৩৬ ঘণ্টা পরে বুধবারও জল সরবরাহ স্বাভাবিক করতে পারল না হাওড়া পুরসভা। রাতভর কাজ করে পুর-ইঞ্জিনিয়ারেরা ফাটা পাইপলাইনের মেরামতি করেন। এর পরে বুধবার দুপুর থেকে জল সরবরাহ করা শুরু হয়। কিন্তু পুরসভার অধিকাংশ ওয়ার্ডে সেই জল পৌঁছয়নি। পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, পাইপলাইনে হাওয়া ঢুকে যাওয়ায় সমস্যা তৈরি হয়েছে। সরবরাহ স্বাভাবিক হতে আরও কয়েক দিন লাগবে।
উত্তর হাওড়ার ধর্মতলা লেনে একটি ১২ ইঞ্চি পাইপলাইনে ফাটল মেরামত করার সময় মঙ্গলবার আচমকা গোটা শহরে জল সরবরাহ বন্ধ করে দেয় পুরসভা। এর জেরে বটানিক্যাল গার্ডেন থেকে হাওড়া পুরসভার সীমানা লিলুয়া পর্যন্ত দিনভর জলের জন্য হাহাকার পড়ে যায়। বেশি দাম দিয়ে জল কিনে খেতে হয় সাধারণ মানুষকে। জলের দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়ে পথ অবরোধ করেন সালকিয়ার ধর্মতলা এলাকার বাসিন্দারা।
একটা পাইপের ফাটল সারাইয়ের জন্য গোটা শহর নির্জলা করে দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে পুরকর্তারা জানিয়েছেন, যে জায়গায় পাইপে ফাটল, তার ৭ ফুট উপরে বড় নর্দমা। সরবরাহ করা হলে পানীয় জলের সঙ্গে নর্দমার জল মিশে জল দূষিত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ওই জল খেয়ে বহু মানুষ অসুস্থ হতে পারেন ভেবেই গোটা শহরে জল সরবরাহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
পুরসভা সূত্রে খবর, ইঞ্জিনিয়ারেরা রাতভর খেটে বুধবার সকালের মধ্যে পাইপলাইন সারিয়ে ফেলেন। একটি ভাল্ভও লাগানো হয়। যাতে ফের ওই জায়গায় ফাটল হলে ভাল্ভ ঘুরিয়ে শুধুমাত্র ওই অংশটুকুর জল সরবরাহ বন্ধ করা যায়। এক ইঞ্জিনিয়ার জানান, ফের একটা পাইপ মেরামতি করতে যাতে গোটা শহরে সরবরাহ বন্ধ করতে না হয় তাই এ বছর শীতে পদ্মপুকুর জলপ্রকল্পের পাইপলাইনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ভাল্ভ বসানো করা হবে।
এ দিকে সালকিয়ার ধর্মতলা এলাকায় পাইপ মেরামত করে ভাল্ভ বসানোর পরে দুপুর ১২টা থেকে জল সরবরাহ শুরু হয়। কিন্তু অভিযোগ, যে জল সরবরাহ করা হয় তা অধিকাংশ ওয়ার্ডে পৌঁছয়নি। বহু জায়গায় জল পড়েছে সরু সুতোর মতো। তবে সেই জল নিতেই হাওড়ার বিভিন্ন জায়গায় বুধবার লম্বা লাইন পড়ে যায়। জল না পাওয়ায় সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়েন সংযুক্ত এলাকার মানুষ। পরিস্থিতি সামাল দিতে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নিজেই জলের গাড়ি নিয়ে মানুষকে জল দিতে শুরু করেন।
কেন এ দিন সব জায়গায় জল সরবরাহ করা গেল না?
জল দফতরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ অরুণ রায়চৌধুরী বলেন, “প্রকল্প থেকে জল সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার পরে পাইপলাইনে যতটা জল ছিল তা কিছু অসাধু ব্যক্তি পাম্প করে টেনে নিয়েছিলেন। ফলে পাইপ লাইনে হাওয়া ঢুকে গিয়েছিল। পরে যখন বুধবার দুপুরে জল ছাড়া হয় তখন পাইপে হাওয়া থাকায় তার চাপে জল সব এলাকায় যেতে পারেনি।” অরুণবাবু জানান, পুরো হাওয়া বেরোতে আর দু’তিন দিন লাগবে। তখন সব এলাকায় জল সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, মঙ্গলবার বিনা নোটিসে কেন দিনভর জল বন্ধ করল পুরসভা? মেয়র পারিষদ বলেন, “মাটির সাত ফুট নীচে থাকা ওই পাইপ খুঁড়ে বার করতে দীর্ঘ সময় লেগে গিয়েছিল। জল বন্ধের নোটিস দেওয়ার থেকে ওই কাজটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছিলাম। তাই কোনও নোটিস দিইনি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy