তখন চলছে অবরোধ।-নিজস্ব চিত্র।
হাইকোর্টের নির্দেশে রাস্তার দখল উচ্ছেদ করতে গিয়েও স্থানীয় বাসিন্দাদের বাধায় ফিরতে হল পুলিশ-প্রশাসনকে। মঙ্গলবার ঘটনার জেরে কয়েক ঘণ্টা অবরোধ করা হয় হাবরা-মগরা (গৌড়বঙ্গ) সড়ক। এ দিন বিক্ষোভের সামনের সারিতে দেখা গিয়েছে তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বকে। যা দেখে বিরোধীদের কটাক্ষ, কুম্ভীরাশ্রু ঝরাচ্ছেন শাসক দলের নেতারা। যদিও উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “আমাদের সরকার ও দলের অবস্থান হল, জোর করে উচ্ছেদ করা যাবে না। আমাদের নেতারা স্থানীয় মানুষকে তা বোঝাতে গিয়েছিলেন।” কবে ফের তাঁরা অভিযানে যাবেন, তা আলোচনার মাধ্যমে ঠিক হবে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের এক কর্তা।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হাবরা থেকে বসিরহাট যাওয়ার ওই রাস্তায় হাবরা ২ নম্বর রেলগেটের দিক থেকে সাড়ে ৬ কিলোমিটার অংশে রাস্তার দু’ধারে ১০ মিটার করে চওড়া করার কথা। সে জন্য দু’পাশের দখল হঠানোর নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। সমস্যা দীর্ঘ দিনের। স্থানীয় এক বাসিন্দা তাঁর বাড়ির সামনে জবরদখল হঠানোর আবেদন জানিয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন। যার প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ওই দখল সরানোর নির্দেশও দেয়। তাতে জনা কয়েক জবরদখলকারী হাইকোর্টে পাল্টা মামলা করে দাবি জানান, তাঁদের যদি সরতে হয়, তবে বাকি জবরদখলকারীদেরও সরানো হোক। সেই মর্মেই কিছু দিন আগে হাইকোর্ট রাস্তা জবরদখলমুক্ত করে চওড়া করার নির্দেশ দেয়। প্রাথমিক ভাবে ৫ কিলোমিটার রাস্তা দখলমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। সেই মতো গত ১৭ অক্টোবর থেকে প্রশাসনের তরফে এলাকায় মাইক নিয়ে প্রচারও চলছিল। জবরদখল হঠানোর জন্য আবেদন জানানো হয়। প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, মঙ্গলবার যে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করা হবে, তা ঘোষণা করা হয়েছিল আগেই।
এ দিন সকাল ৯টার পর থেকে রাস্তায় হাজার হাজার লোক ভিড় করতে শুরু করেন। ও দিকে, পুলিশ, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, পূর্ত (সড়ক) দফতরের কর্তারাও হাজির হন। বুলডোজার-সহ অন্যান্য যন্ত্রপাতিও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা প্রশাসনের ভূমিকার প্রতিবাদে পথ অবরোধ শুরু করেন। হাতে তাঁদের প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন ছিল। বিক্ষোভকারীদের দাবি, প্রশাসন আগে উপযুক্ত পুনর্বাসন, ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করুক। উচ্ছেদ হবে পরে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, উৎসবের মরসুমে তাঁরা হাইকোর্টে এ নিয়ে আবেদন জানানোর সুযোগ পাননি। কিছু দিনের মধ্যেই আদালতের দ্বারস্থ হবেন তাঁরা। এ দিন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দাবিপত্র দেন আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলনের সামনের সারিতে দেখা গিয়েছে হাবরা পুরসভার উপ পুরপ্রধান নীলিমেশ দাস, কাউন্সিলর নাড়ু সাহা, তারক দাস, হাবরা ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি জাকির হোসেন-সহ অনেককে। নাড়ুবাবুকে মাইকে বলতে শোনা গেল, “আপনাদের পাশে আছি, পাশেই থাকব। প্ররোচনায় পা দেবেন না। আপনাদের কাউকে ঘর-বাড়ি ছাড়তে হবে না। উন্নয়ন হবে, কিন্তু তা মানুষের উপরে বুলডোজার চালিয়ে নয়।” কিন্তু এলাকাবাসীর অনেকে কিছু প্রশ্ন তুলেছেন, যা নিয়ে মুখ খুলছেন বিরোধীরাও। তাঁদের বক্তব্য, উচ্ছেদ যে হবে তা জানত পুরসভা। তৃণমূল নেতারাও বিলক্ষণ জানেন, হাইকোর্টের নির্দেশ থাকলে উপযুক্ত পদক্ষেপ করতেই হবে। তারপরেও তাঁরা আন্দোলনে সামিল হয়ে আসলে সস্তার রাজনীতি করছেন। ব্যবসায়ীদের কাছে ভাল সাজার চেষ্টা করছেন। জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব হালদার বলেন, “গোটাটাই প্রশাসনের সঙ্গে তৃণমূলের বোঝাপড়া। ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীকে পাশে থাকার নামে ভাঁতা দিচ্ছে তৃণমূল।”
যদিও জ্যোতিপ্রিয়বাবুর বক্তব্য, “দলের সিদ্ধান্ত, জোর করে জমি নেওয়া বা উচ্ছেদ করা যাবে না। যাঁরা স্বেচ্ছায় জমি দেবেন, সেই জমি সরকার কিনে নেবে।” তাঁর বক্তব্য, “রাস্তা চওড়া হোক, আমরাও চাই। কিন্তু লাঠি-গুলি চালানো যাবে না। সরকার ও দল এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে।” তৃণমূল নেতৃত্ব এ দিন আন্দোলন করতে নয়, বাসিন্দাদের এ সব কথা বোঝাতেই গিয়েছিলেন বলে তাঁর দাবি। পূর্ত দফতরের হাবরা হাইওয়ে সাব ডিভিশনের সহকারী বাস্তুকার গৌতম পাল বলেন, “আন্দোলনকারীরা পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের দাবি তুলেছেন। আমাদের আপাতত ৫ কিলোমিটার রাস্তায় মাপজোক হয়ে আছে। হাইকোর্টের নির্দেশে শ’দুয়েক জবরদখল চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু এ দিন আমরা কাজ করতে পারিনি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy