Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

একের পর এক চুরি-ছিনতাই বসিরহাটে, আতঙ্কিত মানুষ

একের পর এক চুরির পরে এ বার গৃহবধূর গলায় ধারালো অস্ত্র ধরে ডাকাতি করে পালাল দুষ্কৃতীরা। বুধবার সন্ধ্যায় বসিরহাটের অনন্তপুর গ্রামের এই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। পাশাপাশি পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ মানুষ। একই রাতে বসিরহাটের বড়কালীবাড়ি এলাকার একটি মন্দিরেও লুঠপাট চালিয়ে পালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। পুলিশের পক্ষে কেবল বলা হয়েছে, তদন্ত শুরু হয়েছে। খুব শীঘ্রই দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করা হবে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বসিরহাট শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৪ ০১:৫২
Share: Save:

একের পর এক চুরির পরে এ বার গৃহবধূর গলায় ধারালো অস্ত্র ধরে ডাকাতি করে পালাল দুষ্কৃতীরা। বুধবার সন্ধ্যায় বসিরহাটের অনন্তপুর গ্রামের এই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। পাশাপাশি পুলিশের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ মানুষ। একই রাতে বসিরহাটের বড়কালীবাড়ি এলাকার একটি মন্দিরেও লুঠপাট চালিয়ে পালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। পুলিশের পক্ষে কেবল বলা হয়েছে, তদন্ত শুরু হয়েছে। খুব শীঘ্রই দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করা হবে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুজোর আগে থেকেই বসিরহাট থানা এলাকাতে প্রায় দিনই কোনও না কোনও চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মোটর বাইকে আসা দুই যুবক জড়িত বলে অভিযোগ উঠলেও পুলিশ তাদের ধরতে পারছে না। বুধবারও দুই যুবক বসিরহাটের অনন্তপুর গ্রামে মাজেদ গাজির বাড়িতে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ। সম্প্রতি মাজেদ ও তাঁর স্ত্রী চিকিত্‌সার জন্য বেঙ্গালুরু গিয়েছেন। ছোট্ট জেসমিনাকে নিয়ে বাড়িতে আছেন মাজেদের বড় ছেলে জাফর এবং তাঁর স্ত্রী আম্বিয়া।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সন্ধে সাড়ে ৭টা নাগাদ সামনের দন্ডিরহাট বাজারে গিয়েছিলেন জাফর। মেয়েকে ঘরে রেখে বারান্দার গ্রিলের গেটে তালা দিয়ে বাথরুমে গিয়েছিলেন জেসমিনা। সে সময়ে বাইরে অপেক্ষা করে থাকা দুই দুষ্কৃতী ওই মহিলার গলায় ধারাল অস্ত্র ধরে। চিত্‌কার করলে খুন করে ফেলবে বলে হুমকি দিয়ে তালার চাবি কেড়ে নেয়। ঘর থেকে টাকা, গয়না ও বারান্দায় রাখা সাইকেল নিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা। জেসমিনা প্রতিবেশীদের ডাকাডাকি করায় তাঁরা আসেন। বেগতিক বুঝে সাইকেল ফেলে পালায় দুষ্কৃতীরা।

জাফর বলেন, “লিজে নেওয়া চাষের জমির টাকা শোধের জন্য বাবা ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা জোগাড় করে বাড়িতে রেখেছিলেন। হঠাত্‌ মা অসুস্থ হয়ে পড়ায় বেঙ্গালুরু যেতে হয়েছে। ওই টাকা ছাড়াও স্ত্রী এবং বোনের কয়েক ভরি গয়না ছিল। দুষ্কৃতীরা সর্বস্ব নিয়ে পালিয়েছে। কিন্তু এত টাকা কেন ঘরে রাখা হয়েছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন জাগায় তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

বুধবার রাতেই বসিরহাট থানার কাছে বড়কালীবাড়ি এলাকায় একটি কালী মন্দিরের গ্রিল ও দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে লুঠপাট চালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। মন্দির কর্তৃপক্ষের তরফে দীলিপ ঘোষ, দেবাশিস ঘোষরা পুলিশেক জানান, অষ্টধাতুর কালীমূর্তি-সহ প্রায় ৫ লক্ষ টাকার সোনা ও রুপোর গয়না, প্রণামীর নগদ টাকা নিয়ে পালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। এই নিয়ে গত কয়েক দিনে একের পর এক চুরির ঘটনায় বিরক্ত শহরবাসী।

গত শুক্রবার ইটিন্ডার কাজল সর্দারের বাড়ি থেকে দুষ্কৃতীরা নগদ ৩০ হাজার টাকা, সাড়ে ৪ ভরি অলঙ্কার এবং ৩টি মোবাইল ফোন লুঠ করে। শনিবার বসিরহাটের ভ্যাবলায় জগন্নাথ দাস এবং স্বপন বিশ্বাসের পাশাপাশি বাড়িতে দুষ্কৃতীরা দরজা-জানলা ভেঙে ঢুকে টাকা-গয়না এবং অন্যান্য জিনিস নিয়ে পালায়। রবিবার সন্ধ্যায় ভবাণীপুরের বাসিন্দা বিশ্বজিত্‌ দাসের বাড়ির দরজার তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে দুষ্কৃতীরা লক্ষাধিক টাকার সোনা-রুপোর অলঙ্কার, নগদ কয়েক হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালায়। একই ভাবে কয়েক দিন আগে মোটর বাইকে এসে বসিরহাট থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে ৭২ নম্বর বাসস্ট্যান্ডের কাছে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর দোকান থেকে লক্ষাধিক টাকা মূল্যের অলঙ্কার নিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। সাঁইপালার সোনপুকুর ধারে সন্দীপন সরকার, গৌতম কুণ্ডু, অমল দত্ত এবং তাপস কুণ্ডুর বাড়িতে দরজা এবং কোলাপসিবল গেটের তালা ভেঙে ঢুকে কয়েক লক্ষ টাকার গয়না, মোবাইল, ক্যামেরা-সহ জিনিসপত্র লুঠ হয়। নতুন বাজার, বড় জিরাফপুর, ভবাণীপুর, মৈত্রবাগান, মুন্সিবাগান এলাকার রাস্তায় পর পর কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়, দীপ সরকার, রত্না মণ্ডল, কমলা গিরিরা বলেন, “একের পর এক বাড়িতে হামলা চালিয়ে পালাচ্ছে মোটর বাইক আরোহী দুষ্কৃতীরা। তদন্ত করছে পুলিশ। কিন্তু দুষ্কৃতীরা ধরা পড়ছে না। ফলে তাদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে। জরুরি প্রয়োজন থাকলেও ভয়ে সন্ধের পরে বাড়ি ফাঁকা রেখে বিশেষ কেউ বেরোতে চাইছেন না।” দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবিতে পথে নামার পরিকল্পনা করছেন শহরবাসী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

basirhat theft southbengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE