উৎকণ্ঠায় অদিতির মা।—নিজস্ব চিত্র।
বাড়ির কাছেই স্কুল। সোমবার একটু দেরি হয়েছিল বেরোতে। অটোর জন্য দাঁড়িয়ে না থেকে অদিতি উঠে পড়েন ভ্যানে। তারই মাসুল গুণতে কলকাতার নার্সিংহোমে এখন যমে-মানুষে টানাটানি চলছে তাঁকে নিয়ে।
কেমন আছেন হরিদাসপুরে আনন্দমার্গী প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা বছর একত্রিশের তরুণী অদিতি? কলকাতা থেকে বাবা মোহন অধিকারী টেলিফোনে জানালেন, পাঁজরের নীচে গুলি লেগেছে। বিভিন্ন রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। অস্ত্রোপচার করে গুলি বের করতে হবে। মঙ্গলবার সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন চিকিৎসকেরা। প্রবীণ মানুষটির আক্ষেপ, “শহরের এত কাছে গুলি চলল। পুরোপুরি প্রশাসনের ব্যর্থতা ছাড়া আর কী!”
বনগাঁর ট’বাজার এলাকায় বাড়ি অদিতিদের। বাবা হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক। তিন বোনের মধ্যে বড় অদিতি। ছোটবেলায় ঝাঁটার কাঠির খোঁচা লেগে ডান চোখের দৃষ্টি হারান। তবু নিজের জেদ ও অধ্যবসায়ের জোরে বিএ পাস করেছেন। চাকরি করছেন। আর কিছু দিন পরেই স্কুলে অদিতির দু’বছর পূর্ণ হবে। অল্প সময়ের মধ্যেই নরম ও শান্ত স্বভাবের মেয়েটি স্কুলের সকলের কাছেই প্রিয় হয়ে উঠেছেন। সোমবার খবরটা পৌঁছনোর পরে স্কুলের পরিবেশটাই বদলে যায়। এ দিন স্কুলে পরীক্ষা নেওয়ার কথা থাকলেও ছুটি ঘোষণা করে দেন কর্তৃপক্ষ। স্কুলের টিচার ইন চার্জ সবিতা অধিকারী (বিশ্বাস) বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে গিয়ে অদিতির সঙ্গে দেখা করার সময় পাননি। তার আগেই জখম তরুণীকে নিয়ে কলকাতার দিকে রওনা দিয়েছেন আত্মীয়-পরিজনেরা। সবিতাদেবী সোজা চলে যান অদিতির বাড়িতে। সেখানে ছিলেন মা ও ছোট বোন। তাদের কাছে বসেন সবিতাদেবী। অনেক জোরজার করে দুপুরে দু’জনকে একমুঠো ভাত খাইয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেছেন তিনি। বললেন, “সাধারণ মানুষের পক্ষে রাস্তাঘাটে যাতায়াত করা আর নিরাপদ নয় বলেই মনে হচ্ছে। এরপরে কোন সাহসে রাস্তায় বেরোব?” অদিতিদেবীর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, মা ও ছোট বোনকে ঘিরে রেখেছেন কয়েক জন প্রতিবেশী। মা তেমন কিছু বলতে চাইলেন না। শুধু বললেন, “আমাদের মনের অবস্থাটা একটু বোঝার চেষ্টা করুন। কিছু বলতে পারব না।”
এ দিন বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস কলকাতার নার্সিংহোমে গিয়ে মোহনবাবুর সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি বলেন, “স্কুলে যাওয়ার পথে দুষ্কৃতীদের ছোড়া গুলিতে শিক্ষিকার জখম হওয়ার ঘটনা খুবই দুঃখজনক। পুলিশকে বলেছি, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। আপনারা দ্রুত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিন।”
বনগাঁ হাইস্কুলের শিক্ষক তথা ওই এলাকার বাসিন্দা চন্দন ঘোষ বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। ভবিষ্যতে যাতে এমন না ঘটে, সে দিকে পুলিশ-প্রশাসনকে সজাগ থাকতে হবে।” তবে এলাকার বহু মানুষ জানালেন, এ সম্পর্কে কোনও রকম মন্তব্য করতেও তাঁরা সাহস পাচ্ছেন না। এলাকায় দুষ্কৃতীদের দাপাদাপি এতটাই বেড়ে গিয়েছে, সকলেই আতঙ্কিত। পুলিশ জানিয়েছে, ওই এলাকায় নিয়মিত রাতে টহলদারি চলে। কয়েক বার আগাম খবরের ভিত্তিতে দুষ্কৃতীদের তাড়া করায় তারা বাংলাদেশে পালায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy