নেই নজর কাড়া থিমের দাপট। নেই চমকে দেওয়া লাইটিং। তবু মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বিভিন্ন বাড়ির পুজো। জমিদার বাড়ি বা পারিবারিক পুজোর ঐতিহ্য ও পরম্পরা এখনও মানুষের কাছে সমান আগ্রহের বিষয়।
বনগাঁ মহকুমার প্রাচীন বাড়ির পুজোগুলোর মধ্যে অন্যতম বন্দ্যোপাধ্যায়, দত্ত, সিংহ, দাঁ, চৌধুরী বাড়ির পুজো। এ ছাড়া, গোবরডাঙার জমিদার বাড়ির পুজো যথেষ্ট ঐতিহ্যবাহী। অশোকনগরের ধর বাড়ির পুজোও জনপ্রিয়। গাইঘাটার ইছাপুরের চৌধুরীদের জমিদারি এখন আর নেই। আর্থিক অনটনের সঙ্গে লড়াই করেই ইছাপুরের জমিদারদের উত্তরসূরিরা এখনও ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছেন। এক সময়ে বেশ ঘটা করেই পুজো হত। এখন এর জৌলুস কমে গিয়েছে। কিন্তু প্রায় ৪০০ বছরের বেশি এই পুজোকে ঘিরে মানুষের উত্সাহ একফোঁটাও কমেনি। তবে এখনও এই এলাকার মানুষের কাছে দুর্গা পুজো বলতে চৌধুরী বাড়ির পুজোকেই বোঝায়। বৈষ্ণব ধর্মশাস্ত্রের বিশিষ্ট পণ্ডিত রাঘব সিদ্ধান্তবাগীশ ছিলেন চৌধুরী বংশের প্রতিষ্ঠাতা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, ‘চৌধুরী’ পদবিটি তাঁরা পেয়েছিলেন মুঘল সম্রাট আকবরের কাছ থেকে। রাঘবের পৌত্র রঘুনাথ চৌধুরী আনুমানিক ১৬০০ সালে ইছাপুরে দুর্গা পুজো শুরু করেন। তারপর থেকে তা বংশ পরম্পরায় চলে আসছে। মহালয়ার পরদিন থেকেই শুরু হয়ে যায় পুজো। প্রথমে ঘট পুজো। যষ্ঠীতে দেবীর বোধন। দশমীতে দেবীর বিসর্জন হয়। যমুনা নদীতে প্রথমে মোষ বলি দেওয়া হত। শোনা যায় তারপরে একটা সময় ১০১টি পাঁঠা বলি দেওয়া হত। এখন অবশ্য সে সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
বাঁ দিকে, দাঁ বাড়ির পুজো। ডান দিকে, রাখালদাসের বাড়ির প্রতিমা। বনগাঁয় তোলা নিজস্ব চিত্র।
৩০০ বছরেরও আগে স্বপ্ন পেয়েছিলেন গৌরহরি বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বপ্নে দেখা মূর্তির আদলেই গড়ে উঠেছিল দেবীর মূর্তি। বনগাঁর ছয়ঘরিয়া এলাকার মানুষের কাছে বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির পুজো বেশ আকর্ষণের। একচালার দেবী প্রতিমা পুজো করা হয়। ঠাকুরের দু’টি হাত মানুষের মতো হলেও বাকি আটটি হাত কিন্তু বিড়ালের থাবার মতো দেখতে হয়। প্রতিপদে দেবীর ঘট বসে। ষষ্ঠীতে বাড়ির ভিতরে থাকা জোড়া শিব মন্দির। তার নীচে থাকা বেলতলায় দেবীর বোধন পুজো হয়। পুজোর দিনগুলিতে চলে চণ্ডীপাঠ। অতীতে গ্রামের মানুষকে পুজোয় খাওয়ানোর প্রথাও ছিল। দশমীর দিন আকাশে প্রথম সন্ধ্যা তারা উঠলেই নাওভাঙা নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। ঐতিহাসিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির পুজো নামে পরিচিত।
গোবরডাঙার মুখোপাধ্যায় বাড়ির দুর্গা পুজোও প্রায় তিনশো বছরেরও বেশি পুরনো। যা এলাকার মানুষের কাছে জমিদার বাড়ির দুর্গা পুজো হিসাবেই পরিচিত। এই বিশাল জমিদার বাড়িটি আজও উজ্জ্বল। এত থিম পুজোর সংখ্যা বাড়লেও এখনও এলাকার মানুষ কিন্তু একটি দিন এই বাড়ির পুজো দেখার জন্য বরাদ্দ রাখেন। ওই পরিবারের পূর্বপুরুষেরা প্রায় সাড়ে চারশো বছরেরও বেশি সময় আগে লখনউ থেকে এসে বাংলাদেশের সারষার সাগরদাঁড়িতে বসবাস শুরু করেন। সেখানেই প্রথম পুজোর সূচনা হয়। পরিবারের সদস্য শ্যামরাম গোবরডাঙার ইছাপুরে আসেন। সেখানকার চৌধুরী পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করেন। সেই সূত্র তিনি জমিদারির একাংশ পেয়েছিলেন। তারপর তার ছেলে খেলারাম ব্রিটিশদের তৈরি জমিদার বাড়িটি কিনে নেন। সেখানেই প্রথম দুর্গাপুজো শুরু হয়। এই বাড়ির দুর্গা প্রসন্নাময়ী দুর্গা নামে খ্যাত। কারণ, খেলারাম বাড়ির পাশেই প্রসন্নাময়ী কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিপদে ওই কালীমন্দিরে ঘট বসে। সপ্তমীর দিন ওই ঘট আনা হয় জমিদার বাড়িতে। অতীতে যষ্ঠীর দিন জমিদার বাড়িতে কামান দাগা হত। এলাকার মানুষ বুঝতে পারতেন পুজো শুরু হল। অতীতে বিসর্জনের শোভাযাত্রায় হাতিও থাকত বলে শোনা যায়।
মহিষাসুর ছাড়াই পুজো। অষ্টমীতে দেবী দুর্গার সামনেই কালী ঠাকুরের পুজো হয়। দেবীর হাতে কোনও অস্ত্র থাকে না। এখানে দেবীর দু’টি হাত। কোলে গণেশ, সঙ্গে থাকে দুই মেয়ে। কার্তিক এই পুজোতে গরহাজির। এ ভাবেই প্রায় আড়াইশো বছর ধরে এই পুজো হয়ে আসছে। জমিদার কাশীনাথ ধর এই পুজোর সূচনা করেছিলেন। ষষ্ঠীতে পঁুথি পুজো দিয়ে উত্সব শুরু হয় বলে পরিবার সূত্রের খবর।
বনগাঁ শহরে ট’বাজার এলাকায় দাঁ বাড়ির দুর্গা পুজোতে দেখা যাবে কমলে কামিনী দুর্গা। কথিত আছে জাহাজে চড়ে বাণিজ্য করতে গিয়েছিলেন শ্রীমন্ত নামে এক ব্যক্তি। প্রবল ঝড় বৃষ্টিতে জাহাজ জলে ডুবে যায়। ডুবে যাচ্ছিলেন শ্রীমন্তও। সেই সময়ে মা কমলে কামিনী হাত ধরে তাঁকে টেনে তুলেছিলেন। দাঁ বাড়িতে দেবী কমলে কামিনী অভয়া দুর্গা। প্রায় দু’শো বছরেরও আগে হুগলীর বৈঁচিতে এই পুজোর সূচনা হয়। পরবর্তী কালে কৃষ্ণচন্দ্র দাঁ গোপালনগরে এই পুজো শুরু করেন। প্রতি বছর উল্টো রথের দিন মায়ের কাঠামোতে সিঁদুর দিয়ে শুরু হয় প্রতিমা গড়ার কাজ। বিসর্জনের আগে বাড়ির প্রধান ফটকের সামনে দেবীকে সাতবার দোলানো হয়। সেই সময়ে বাড়ির সকলে প্রতিমা লক্ষ্য করে গুড় ও চাল ছোড়েন। ইছামতীতে বিসর্জনের আগে পাত্রে জল রেখে দর্পণে মায়ের চরণ দর্শন করা হয়।
বনগাঁর দত্তপাড়ায় দত্তবাড়ির পুজো আড়াইশো বছর ছাড়িয়েছে। প্রফুল্ল দত্ত ও তাঁর ছেলে সুনীল দত্তের সময়ে এই পুজো শুরু হয়েছিল। বছর চল্লিশ আগে দত্তরা এখান থেকে চলে যান। তখন থেকে ঘোষেরা এই পুজো করছেন। অতীতে প্রতিমা বিসর্জনের আগে নীলকন্ঠ পাখি ওড়ানো এবং বন্দুক ছোড়ার প্রথা ছিল। অতীতে দেবী একবার স্বপ্নে আদেশ দেন হাতের ভার আর তিনি বহন করতে পারছেন না। তারপর থেকে দু’টি বড় হাতের সঙ্গে ছোট আটটি হাত করা হয়। যা দর্শনার্থীরা দেখতে পারবেন না। চুল ও অলংঙ্কার দিয়ে সেই হাত ঢাকা থাকে।
বনগাঁর সিংহ বাড়ির তিনশো বছরেরও আগেকার পুজো। গিরীশচন্দ্র সিংহ ওই পুজোর সূচনা করেন। অতীতে পশু বলি দেওয়ার রেওয়াজ থাকলেও একশো বছর আগে থেকে পশু বলি বন্ধ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চাকচিক্য ও গরিমা কমেছে অনেক পারিবারিক পুজোর। কিন্তু ঐতিহ্যতে তারা এখনও ভাস্বর।
নদী থেকে উদ্ধার বস্তাবন্দি দেহ
মাছ চুরির অভিযোগে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে মেরে বস্তাবন্দি করে ভাসিয়ে দেওয়া হল নদীর জলে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম হাঁসা সর্দার (৪৫)। দেগঙ্গার ঘোষালের আবাদ গ্রামের সর্দার পাড়ার বাসিন্দা তিনি। সোমবার বেলিয়াঘাটা এলাকার বিদ্যাধরী নদীর জল থেকে তাঁর বস্তাবন্দি দেহ উদ্ধার করা হয়। মারে গুরুতর জখম তাঁর আর এক সঙ্গী হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। খুনের অভিযোগে গোলাম বৈদ্য নামে মেছোভেড়ির ব্যবসায়ীকে ধরেছে পুলিশ। হাঁসার পরিবারের দাবি, ভোরে কাজে যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিলেন তিনি। মিথ্যা অভিযোগে মারা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy