Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

খাল-নদী সংস্কার কবে হবে, প্রশ্ন

উন্নয়ন চোখে পড়ছে। গ্রামীণ পরিবেশ ছেড়ে শহরের আকার নিতে শুরু করেছে গোপালনগর। এলাকাটি বনগাঁ ব্লকের অন্তর্গত হলেও স্থানীয় মানুষ ইতিমধ্যেই দাবি তুলতে শুরু করেছেন, গোপালনগরকে পুরসভা হিসাবে ঘোষণা করার সময় এসেছে।

এখনও জল জমে পটল খেতে।

এখনও জল জমে পটল খেতে।

সীমান্ত মৈত্র
গোপালনগর শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০১:০৮
Share: Save:

উন্নয়ন চোখে পড়ছে। গ্রামীণ পরিবেশ ছেড়ে শহরের আকার নিতে শুরু করেছে গোপালনগর। এলাকাটি বনগাঁ ব্লকের অন্তর্গত হলেও স্থানীয় মানুষ ইতিমধ্যেই দাবি তুলতে শুরু করেছেন, গোপালনগরকে পুরসভা হিসাবে ঘোষণা করার সময় এসেছে। কিন্তু নাগরিক জীবনে কিছু সমস্যা এখনও ভোগাচ্ছে এখানকার বাসিন্দাদের।

গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, পানীয় জলের সমস্যা এখানে তীব্র। বহু মানুষকে জল কিনে খেতে হয়। গোপালনগর স্টেশনপাড়ার বাসিন্দা পেশায় স্কুল শিক্ষক দীপেন বসু বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগে আমাদের এখানে পাইপ লাইনের মাধ্যমে ট্যাপ ওয়াটার পরীক্ষামূলক ভাবে চালু হলেও ছ’মাস পরে তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। গভীর নলকূপ থাকলেও ওই জলে বেশি মাত্রায় আর্সেনিক থাকায় আমরা জল কিনে খাচ্ছি। কুড়ি লিটার জল কিনতে হচ্ছে ২৫ টাকায়।’’ গোপালনগর প্রাক্তন সৈনিক সংগঠনের সম্পাদক তথা স্থানীয় ঘোষপাড়ার বাসিন্দা প্রশান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘এলাকায় গভীর নলকূপ থাকলেও তাতে আয়রন থাকায় আমরাও জল কিনে খাই।’’ তবে গোপালনগর-১ পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিটি বুথে এক বা একাধিক গভীর নলকূপ বসা‌নো হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা তথা বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসের আবার দাবি করেছেন, ৈগোপালনগর-১ পঞ্চায়েত এলাকায় মোট ৭১টি গভীর নলকূপ রয়েছে। বেশির ভাগ মানুষ সেই জলই পানীয় হিসাবে ব্যবহার করেন। কিছু মানুষ মনে করেন, গভীর নলকূপের থেকে কেনা জ‌ল বেশি ভাল, সে কারণেই তাঁরা জল কিনে খাচ্ছেন।


অতিবৃষ্টিতে কিছু দিন আগে গোপালনগর বাওরে বাঁশের সাঁকো ডুবেছে। এখন ভরসা নৌকো।

স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষের সমস্যা ব্যাঙ্কিং পরিষেবা নিয়েও। তাঁদের অনেকের কথায়, ‘‘গোপালনগর বাজার এলাকায় একটি মাত্র ব্যাঙ্ক রয়েছে। ফলে টাকা জমা রাখা বা তুলতে গিয়ে ঘণ্টা তিনেক সময় লেগে যায়।’’ আরও ব্যাঙ্কের দাবি আছে। বিধায়ক দাবি করেছেন, ‘‘বাজার এলাকায় আর একটি ব্যাঙ্ক তৈরি হয়েছে। শীঘ্রই মানুষ সেখান থেকে পরিষেবা পাবেন।’’

ঝাঁ চকচক বনগাঁ-চাকদহ সড়ক তৈরি হলেও রাতে যাতায়াতের কিছুটা সমস্যা থেকেই গিয়েছে। বিশেষ করে, রাতে বনগাঁ শহর থেকে গোপালনগরে ফিরতে অসুবিধা হয়। বাসিন্দারা জানালেন, রাত ৮টা ৪০ মিনিটের পরে বনগাঁ থেকে আর গোপালনগরে ফেরার বাস পাওয়া যায় না। রাতে শেষ বাসের সময়সীমা বাড়ানো হলে সুবিধা হয়।

রবি এবং বৃহস্পতিবার এলাকায় হাট বসে। সড়কে যানজট তৈরি হয়। দূর-দুরান্ত থেকে চাষিরা গাড়ি বোঝাই করে খেতের ফসল নিয়ে হাটে আসেন। তাঁরা হাটে না ঢুকে বনগাঁ-চাকদহ সড়কের উপরে দাঁড়িয়েই ওই ফসল নামিয়ে পাইকারি বিক্রি করেন। ফলে সকাল ৭টা-১০টা পর্যন্ত তীব্র যানজট তৈরি হয়। চাষিরা জানালেন, হাটের মধ্যে মালপত্র নিয়ে গেলে ফড়েরা সেখানে গিয়ে তা কিনতে চান না। বাধ্য হয়েই রাস্তার উপরে গাড়ি দাঁড় করাতে হচ্ছে। গোপালনগর বাজারে আরও কিছু শৌচাগার প্রয়োজন বলে বাজারে আসা মানুষজন জানালেন। জায়গার অভাবে আরও কিছু শৌচাগার তৈরি করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বিধায়ক। ইছামতী নদীর উপরে শ্রীপল্লি-ব্যারাকপুরে একটি সেতু তৈরি হয়েছিল কয়েক বছর আগে। এখন সেতুটির হাল খারাপ। স্থানীয় গোপালনগর বাওরের উপরে একটি পাকা সেতুর দাবি এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের। এক দিকে, গোরা খালপাড়া অন্য দিকে, বালিয়াডাঙা। সেখানে এখন একটি বাঁশের সাঁকো আছে। কিন্তু সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টিতে সেটি ডুবে গিয়েছে। এখন নৌকোয় পারাপার হচ্ছে। বিশ্বজিৎবাবু জানিয়েছেন, পাকা সেতু তৈরির জন্য সেচ দফতরের পক্ষ থেকে সমীক্ষা করা হয়েছে। সেতু তৈরিও হবে।

সমস্যা রয়েছে নিকাশিরও। সাহিত্যিক লালমোহন বিশ্বাস বলেন, ‘‘ভারি বৃষ্টি হলেই পাল্লা রোডে জল দাঁড়িয়ে যায়। যাতায়াত করতে খুবই সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়।’’

এলাকাটি কৃষিপ্রধান। ইছামতী নদী এবং স্থানীয় কিছু খাল-বিল-নদী সংস্কার না হওয়ার ফলে ভারি বৃষ্টি হলেই বিস্তীর্ণ কৃষিজমি জলের তলায় জলে যায়। এ বারও বৃষ্টিতে তার ব্যতিক্রম হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা তথা বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক সিপিএমের পঙ্কজ ঘোষের দাবি, ‘‘ইছামতী নদীর সংস্কার ছাড়া গোপালনগরের চাষিদের বাঁচানো যাবে না। এখানকার অতীত ঐতিহ্যকে রক্ষা করতে হলেও নদী সংস্কারের প্রয়োজন। সেই কাজ আমরা শুরুও করেছিলাম।’’ বিধায়কের কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ইছামতী নদী সংস্কারের জন্য অর্থ বরাদ্দ ঘোষণা করেছেন। নদী সংস্কারের কাজ আমরা অবশ্যই শুরু করব।’’

এলাকায় ‘গুরুপদ দাতব্য চিকিৎসালয়’ নামে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র বহু বছর বন্ধ থাকার পরে কিছু দিন আগে ফের চালু হয়েছে জেলা পরিষদের উদ্যোগে। অতীতে এখানে সর্বক্ষণের চিকিৎসক থাকত। বাসিন্দারা জানালেন, এখন সপ্তাহে তিন দিন চিকিৎসক বহির্বিভাগে রোগী দেখছেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু হওয়ায় আমরা খুশি। তবে সপ্তাহে ছ’দিন চিকিৎসক বসলে ভাল।

২০১৩ সালে প্রথম বার গোপালনগর ১ পঞ্চায়েতটির ক্ষমতা পেয়েছে তৃণমূল। তার আগে পর্যন্ত ছিল সিপিএমের দখলে। তৃণমূলের দাবি, দু’বছর হল তারা পঞ্চায়েতের ক্ষমতা এসেই বেশ কিছু কাজ করেছে। ধীরে ধীরে বাসিন্দাদের অন্য সমস্যা ও দাবিগুলিও পূরণ করা হবে। পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূলের স্মরজিৎ বৈদ্য জানিয়েছেন, এলাকার সমস্যাগুলি হঠাৎ করে তৈরি হয়নি। বহু বছর ধরেই রয়েছে। ধীরে ধীরে সমাধান করা হবে।

ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

(শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE