নারায়ণ দত্ত
আমি গাইঘাটার ঠাকুরনগরে থাকি। এখন ৬৩ বছর বয়স। এলাকায় একটি কোচিং সেন্টার চালাই। গাইঘাটার টর্নে়ডোর ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৮৩ সালে ১২ এপ্রিল। সেই ভয়াবহ ঘটনা আমি আজও ভুলতে পারিনি। তখন আমরা ‘সঙ্কেত’ নামে একটি পত্রিকা বের করতাম। ওই পত্রিকা ছাপানোর কাজে আমি বনগাঁ এসেছিলাম। ফিরতে ফিরতে সন্ধে হয়ে গিয়েছিল। বনগাঁ স্টেশনে এসে ঠাকুরনগরে ট্রেন ধরে আমি বাড়ি ফিরব বলে দাঁড়িয়ে রয়েছি। আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। ঝড় বৃষ্টি আসবে বলে মনে হচ্ছিল। এ দিকে ট্রেনও আসছে না। বৃষ্টির ভয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরব বলে স্টেশন থেকে বেরিয়ে যশোর রোড ধরে ট্রাকে চেপে বাড়ি ফিরছিলাম। যখন চাঁদপাড়া বাজার এলাকায় পৌঁছলাম, দেখি আগুনের গোলার মতো কী একটা সামনে দিয়ে চলে গেল। কিছুটা এগোতেই দেখি জখম কিছু লোককে বনগাঁ হাসপাতালের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ঠাকুরনগরে ফিরে জানতে পারি, টর্নেডো এলাকা তছনছ করে দিয়েছে। চারিদিক ছড়ানো-ছিটানো। এক বৃদ্ধাকে ঝড়ে উড়িয়ে গাছের উপরে ফেলে দিয়েছে। বাঁশঝাড় উপড়ে গিয়েছে। পানীয় জলের কল উপরে দিয়েছে। বড় বড় গাছ ভেঙে দিয়েছে। বাড়ির ছাউনি বহু দূর নিয়ে গিয়ে ফেলেছে। বাড়ির দেওয়াল চাপা পড়ে আহত হয়েছেন বহু মানুষ। বাড়ির ছাদগুলি ভেঙে পড়েছে। চাপা পড়ে অনেকেই মারা গিয়েছেন। এখনও মনে পড়ে সারা রাত ধরে আমরা উদ্ধার কাজ চালিয়েছিলাম। সে সময়ে আমরা ‘সাংস্কৃতির পরিষদ’ নামে একটি সংস্থা চালাতাম।
ওই সংস্থার সদস্যেরা মিলে কলকাতার কিছু জুনিয়র চিকিৎসককে নিয়ে এসে এখানকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের চিকিৎসা ব্যবস্থা করেছিলাম। ঝড় হয়েছিল মাত্র ৩০ সেকেন্ড। কিন্তু ক্ষতি হয়েছিল প্রচুর। গাইঘাটা কলাসীমার একটি বিল থেকে ঝড় শুরু হয়েছিল। দক্ষিণ পশ্চিম থেকে ঝড় এসেছিল। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ আছড়ে পড়েছিল গাইঘাটায়। অশোকনগরের ঘটনা গাইঘাটার কথা মনে পড়ে গেল। দু’টির দৃশ্যই এক। ওই সময়েও আবহাওয়াবিদেরা ঝড়ের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy