Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

তরতরিয়ে বেড়ে চলেছে জমির দর

লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে জমির দর। কয়েক বছরের মধ্যে নাকি দাম আরও কয়েক গুণ বাড়বে, বাতাসে ভাসছে এমনই সব কথা। জমির দাম এই এলাকায় বাড়তে শুরু করে ২০১০ সাল থেকে। সে বারই প্রথম দক্ষিণ ভারতের দুর্গাপত্তনম এবং গঙ্গাসাগরে গভীর সমুদ্র বন্দর গড়ার ঘোষণা হয়। যদিও পরে তা কিছু দিনের জন্য ধামাচাপা পড়ে। কিন্তু কিছু অর্থলগ্নি সংস্থা গঙ্গাসাগরে জমি কেনা শুরু করে দেয়।

এই এলাকা থেকে কচুবেড়িয়ার দিকেই মূলত বাড়ছে জমির দাম।

এই এলাকা থেকে কচুবেড়িয়ার দিকেই মূলত বাড়ছে জমির দাম।

শান্তশ্রী মজুমদার
সাগর শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৩০
Share: Save:

লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে জমির দর। কয়েক বছরের মধ্যে নাকি দাম আরও কয়েক গুণ বাড়বে, বাতাসে ভাসছে এমনই সব কথা।

জমির দাম এই এলাকায় বাড়তে শুরু করে ২০১০ সাল থেকে। সে বারই প্রথম দক্ষিণ ভারতের দুর্গাপত্তনম এবং গঙ্গাসাগরে গভীর সমুদ্র বন্দর গড়ার ঘোষণা হয়। যদিও পরে তা কিছু দিনের জন্য ধামাচাপা পড়ে। কিন্তু কিছু অর্থলগ্নি সংস্থা গঙ্গাসাগরে জমি কেনা শুরু করে দেয়। ফলে ক্রমেই বাড়তে থাকে জমির দাম। কেন্দ্রীয় জাহাজ ও ভূতল পরিবহণ মন্ত্রী নীতিন গডকরির সমুদ্র বন্দর গড়ার সাম্প্রতিক ঘোষণার পর থেকে নতুন করে হোটেল এবং রিসর্ট গড়ার জন্যও জমির খোঁজ শুরু হয়েছে। গঙ্গাসাগর গ্রাম পঞ্চায়েতে কপিল মুনির আশ্রমে যাওয়ার ৫ নম্বর রাস্তা থেকে শ্রীধাম বাসস্টপ পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকার মধ্যে এখনও দু’টি প্লট রয়েছে দুই অর্থলগ্নী সংস্থার। বাকিগুলি বিকিয়ে গিয়েছে। কপিল মুনির আশ্রম থেকে দু’তিন কিলোমিটার এলাকার মধ্যে এই অঞ্চলেই জমির কারবার সব থেকে বেশি। শোনা গেল, রাস্তার দু’ধারে খড়ের চালওয়ালা বাড়ি দেখলেই কেউ না কেউ এসে দর হাঁকছে জমি কিনে নেওয়ার জন্য।

গঙ্গাসাগর গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব নতুন ঘেরি পাড়ার কৃষক বরেন দাস এলাকার দীর্ঘদিনের বাসিন্দা। তিন ভাইয়ের বাড়ির প্রায় ৬ বিঘে জমির সঙ্গে লাগোয়া দু’বিঘে জমিতে চাষবাস করেন তাঁরা। তা ছাড়াও, টুকটাক অন্য কাজও আছে। বরেনবাবু বললেন, “প্রায় তিন-চার বছর ধরেই জমি কিনতে চেয়ে যোগাযোগ করছেন বিভিন্ন মানুষ। সকলেই এলাকার বাইরের মুখ। স্থানীয় কাউকে দেখিনি। তবে আমরা জানিয়ে দিয়েছি, ঠিকঠাক দর না পেলে আমরা জমি বিক্রি করব না” তা ছাড়াও, একলপ্তে এতটা জমি সঠিক দাম দিয়ে কেনার মতো খরিদ্দার তাঁরা এখনও পাননি বলেও জানিয়েছেন।

কপিল মুনি আশ্রম ট্রাস্টের কেয়ারটেকার সত্যনারায়ণ চৌধুরী জানালেন, বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, আশ্রম, ধর্মীয় সংগঠনের প্রতিনিধিরা এসে মন্দির বা ধর্মশালা তৈরি করার জন্য জমির খোঁজ করে বলে শুনি।” যেহেতু মন্দিরে যাওয়ার ৫ নম্বর রাস্তার পর ওপারে সমুদ্র সৈকতের দিকে আর শালি বা রায়ত জমি নেই, তাই বেচেকনার হিড়িক বেশি ওই রাস্তার এ পারে।

এলাকার জমির কারবারি গয়ারাম প্রধান জানালেন, অনেকটা করে জমি চাইছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু যে হারে দর বেড়ে গিয়েছে, তাতে জমি কেনাবেচার চেষ্টা করলেও বিশাল দাম শুনে অনেকেই চলে যাচ্ছেন। জানা গিয়েছে, ওই এলাকায় এখন রাস্তার ধারের জমি প্রতি বিঘা ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দর হাঁকছেন বিক্রেতারা। যা চার বছর আগেও ৭-১০ লক্ষ টাকার মধ্যে ছিল। গঙ্গাসাগরের মূল কেন্দ্র থেকে একটু সরে লক্ষ্মীবাজার, কালীবাজার, হাতিপিটিয়া-মহিশামারির দিকে ৬০-৬৫ হাজার টাকা বিঘে হিসেবে রয়েছে জমির দর।

জমি বেচাকেনার এই নতুন দৌড়ে ‘ল্যান্ড মাফিয়া’ তৈরি না হলেও প্রচুর দালাল কাজ শুরু করছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেল। জমির দর দিন দিন বেড়ে যাওয়ার পিছনে এদেরও একটা বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছেন ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিকেরা। তবে জমি কেনাবেচার যে হার, সেই তুলনায় কিন্তু নির্মাণ ব্যবসা বাড়ছে না। কিছু কিছু খরিদ্দার এলাকায় জমি কিনে কেবলমাত্র ফেলে রাখতেই পছন্দ করছেন। এলাকার এক নির্মাণ ব্যবসায়ী বলেন, “জমি কেনাবেচা হচ্ছে। হোটেল এবং রিসর্ট গড়ার জন্য কাজ শুরু হয়েছে বলে শুনছি। কিন্তু সেই তুলনায় আমাদের ইট-বালি-সিমেন্টের বাজার বাড়েনি।”

আশ্রমে যাওয়ার ৫ নম্বর রাস্তা থেকে কচুবেড়িয়া যাওয়ার রাস্তা বরাবর শ্রীধাম পর্যন্ত হাঁটলে চোখে পড়বে, রাস্তার দু’পাশে একের পর এক প্লট বিক্রি হয়ে গিয়েছে। কোনওটা কংক্রিটের পিলার আর তারকাঁটা দিয়ে ঘেরা। কোনওটার চারপাশে প্রাচীর তুলে ডেভেলপ করার চেষ্টা চলছে।

কেবল গঙ্গাসাগরই নয়, জায়গা-জমির বেচাকেনা বেড়েছে সাগর ব্লকের মূলকেন্দ্র রুদ্রনগরেও। এখানে মূলত জমির খরিদ্দার দু’ধরনের। সমুদ্র-লাগোয়া যে সমস্ত এলাকার গ্রাম ভাঙনের কবলে পড়ে গিয়েছে, সেখানকার স্থানীয় মানুষ রাস্তার ধারে এগিয়ে আসতে চাইছেন। বসতবাড়ি গড়ে মাথা গোঁজার জন্য এবং একফালি জায়গা কিনে ছোট দোকান বা ওই রকম কিছু ব্যবসা করার তাগিদ আছে তাঁদের।

সে সব ভেবেই রুদ্রনগর গ্রাম পঞ্চায়েতে রাস্তার ধারে সম্প্রতি তিন শতক জমি ৩ লক্ষ টাকায় কিনেছেন স্থানীয় বাসিন্দা দীপঙ্কর মাইতি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাইরের কিছু ব্যবসায়ী এবং কলকাতা, যাদবপুর, গড়িয়া, সোনারপুর এমনকী সল্টলেকের কিছু বাসিন্দাও জমি কিনছেন এই এলাকায়। তবে সেগুলি নিজেরা কিছু করার জন্য নয় বলে মনে করেন স্থানীয় মানুষ। জমির দাম বাড়তে শুরু করায় অল্প দামে কেনা জমি বেশি টাকায় হাতবদল করতে চান তাঁরা। এলাকার জমির কারবারিরাও তাই মনে করেন। জমির এখন দাম চড়া রুদ্রনগর গ্রাম পঞ্চায়েতেও। পঞ্চায়েতের রুদ্রনগর, কমলপুর, চৌরঙ্গী, ছয়ের ঘেরি, মনসাদ্বীপ এলাকায় রাস্তার ধারের জমির দর প্রায় ১ লক্ষ টাকা শতক ছুঁয়েছে। বিঘে প্রতি হিসেব ধরলে এক এক বিঘের জন্য ২০-২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দর উঠছে। একটু ভেতরের দিকে রাধাকৃষ্ণপুর, কীর্তনখালি, কমলপুর এলাকায় ৩৫-৩৬ হাজার টাকা শতক দরে জমি বিক্রি হচ্ছে। ২০১০ সাল বা তার আগে দাম প্রায় ৮-১০ গুণ কম ছিল বলে জানালেন এলাকার পুরনো বাসিন্দারা।

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE