Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

দেবের সিনেমা দেখেছ, প্রশ্ন শুনে খেপেই উঠল কিশোরী

ভিড়টা জমতে শুরু করেছিল বেলা ১টার পর থেকেই। দুপুরের খাওয়া-দাওয়া সেরে রাস্তার দু’ধারে সার দিয়ে দাঁড়াতে শুরু করেছিলেন অনেকে। অধৈর্য পায়ে বাড়ির ছাদে ওঠা-নামা করতে দেখা গেল কাউকে কাউকে। পাকা খবর যখন পৌঁছল, গোটা ভিড়টা নেমে পড়ল রাস্তায়। সব মিলিয়ে বিকেল পৌনে ৫টা নাগাদ হরিশপুর থেকে হুডখোলা জিপে যখন চড়ে বসলেন দেব, তখন তাঁর গাড়ি এগোবে আর কী করে!

এই ভিড় ঠেলেই এগিয়েছে দেবের গাড়ি। ছবি: নির্মল বসু।

এই ভিড় ঠেলেই এগিয়েছে দেবের গাড়ি। ছবি: নির্মল বসু।

নির্মল বসু
বসিরহাট শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:৫২
Share: Save:

ভিড়টা জমতে শুরু করেছিল বেলা ১টার পর থেকেই। দুপুরের খাওয়া-দাওয়া সেরে রাস্তার দু’ধারে সার দিয়ে দাঁড়াতে শুরু করেছিলেন অনেকে। অধৈর্য পায়ে বাড়ির ছাদে ওঠা-নামা করতে দেখা গেল কাউকে কাউকে। পাকা খবর যখন পৌঁছল, গোটা ভিড়টা নেমে পড়ল রাস্তায়। সব মিলিয়ে বিকেল পৌনে ৫টা নাগাদ হরিশপুর থেকে হুডখোলা জিপে যখন চড়ে বসলেন দেব, তখন তাঁর গাড়ি এগোবে আর কী করে!

বুধবার বিকেলে বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী দীপেন্দু বিশ্বাসের সমর্থনে রোড শো করে গেলেন দলের এক সাংসদ দীপক অধিকারী। তবে এটুকুতে তাঁর পরিচিতি সীমাবদ্ধ নয়। অভিনেতা দেব হিসাবেই তাঁকে চেনে গোটা বাংলা। এমনিতেই বসিরহাটের ভোট এ বার তারকাখচিত প্রচার দেখেছে। তৃণমূলের এক ঝাঁক অভিনেতা-অভিনেত্রী-গায়ক-নায়কেরা ঘুরে গিয়েছে। “কিন্তু দেবের ব্যাপারটাই আলাদা” রাস্তার ধারে দেবের পোস্টার হাতে দাঁড়িয়ে বলতে শোনা গেল এক কিশোরীকে। দেবের ছবি দেখেছ একটাও? প্রশ্ন শুনে এমন তাকাল, যেন মহা অপরাধ হয়ে গিয়েছে।

দেব-ভক্ত বসিরহাট এ দিন যে জনজোয়ারে ভাসল, তেমনটা এ বার কেন, অতীতেও বসিরহাটের ভোটে হয়েছে বলে মনে করতে পারলেন না প্রবীন নাগরিকেরা। সাগর কর্মকার বললেন, “সত্যি বলতে নতুন ছবি তেমন দেখা হয় না। কিন্তু দেবের যা জনপ্রিয়তা, মনে হচ্ছে ভুল করে ফেলেছি। এ বার ভাবছি সিডি এনে ওঁর এক-আধটা ছবি না দেখলেই নয়।”

এ দিন দেবের সঙ্গেই গাড়িতে ছিলেন প্রার্থী দীপেন্দু, সাংসদ ইদ্রিশ আলি, জেলা তৃণমূল পর্যবেক্ষক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, স্থানীয় নেতা নারায়ণ গোস্বামী প্রমুখ। কিন্তু বলাইবাহুল্য এ দিন জলপ্লাবনটা ছিল দেবকে ঘিরেই। বিশেষত, তরুণ-তরুণীদের ভিড় ছিল দেখার মতো। সঙ্গে তাদের কান-ফাটানো চিৎকার। ‘দেব দেব দেব’, এই চিৎকারটার সঙ্গে এদ্দিনে দিব্যি মানিয়ে নিয়েছেন তরুণ সাংসদ।

তাঁর নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র ঘাটালেও লোকসভা ভোটে এই ছবিটাই দেখা গিয়েছে বার বার। এ ছাড়াও অন্য কেন্দ্রে যখনই প্রচারে গিয়েছেন, তখন তাঁকে ঘিরে উন্মাদনার এই চিত্রের সাক্ষী রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। দেব অকাতরে হাসি বিলোলেন এ দিন। হাত নাড়লেন। মাঝে মধ্যে ছুড়ে দিলেন ফুল। আর তা-ই নিয়েই কি না হুড়োহুড়ি।

রাস্তায় গাড়ি এগোনোই ছিল মুশকিল। জনজোয়ার বললেও কম বলা হয়। বাড়ির ছাদে, দোকানের মাথায়, গাছের ডালে— কোথায় না নেই দেবের ভক্তেরা। এক সদ্য বিবাহিতা তরুণী লাজুক হেসে বলেই ফেললেন, “স্বপ্নেও ভাবিনি দেবের সঙ্গে হাত মেলাব কখনও। আজ আনন্দে দু’চোখের পাতা এক করতে পারব না রাতে!”

বসিরহাট কলেজের সামনে ফুটবল খেলছিল এক দল যুবক। দেবের গাড়ি দাঁড়াল সেখানে। প্রার্থী নিজে যেখানে ফুটবলার, তাঁরই অনুরোধে হবে। ঘর্মাক্ত কলেবরে, কাদা মেখে লাফাতে লাফাতে গাড়ির সামনে হাজির ছেলের দল। ভিজে প্যান্টে হাত মুছে দেবের দিকে বাড়িয়ে দিলেন হাত।

বিন্দুমাত্র অপ্রস্তুত না হয়ে সেই হাতের আগলেই নিজের হাত মিলিয়ে দিলেন দেব। বললেন, “তোমরাই তো দীপেন্দুর শক্তি। মাঠে যে ভাবে লড়াই করে ও দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে, এ বারে ভোটের ময়দানেও করবে। তোমরা পাশে থেকো। দীপেন্দুর হাত ধরেই বসিরহাটে উন্নয়নের গতি আসবে।”

এ দিকে, রোড-শো চলাকালীন অবশ্য অসুস্থ হয়ে পড়েন দেব। মাঝপথ থেকেই ফিরতে হয় তাঁকে। বাকি রাস্তায় বদরতলা পর্যন্ত যাঁরা অপেক্ষা করছিলেন, তাঁদের মধ্যে তা নিয়ে কিছুটা ক্ষোভও ছড়িয়েছে। তাঁদের কথা ভেবেই আজ, বৃহস্পতিবার ময়লাখোলা থেকে বদরতলা পর্যন্ত তৃণমূলের আর এক অভিনেত্রী-সাংসদ শতাব্দী রায়ের রোড-শো হবে বলে জানিয়েছেন জ্যোতিপ্রিয়বাবু। সাধারণ মানুষের কাছে এ জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন এই তৃণমূল নেতা।

এ দিন টাকিতে সভা করেন বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। সারদা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, “কেবল মিথ্যার উপরে বেঁচে আছে ওরা। মমতা ঘাবড়ে গিয়েছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

nirmal basu basirhat dev southbengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE