Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নিম্নচাপ কপালে ভাঁজ ফেলেছে শিল্পী ও পুজো উদ্যোক্তাদের

পুজোর ঠিক মুখে ঝড়-জলের দাপটে দুশ্চিন্তায় পড়েছে পুজো কমিটিগুলি। এই আবহাওয়ায় উত্তর দক্ষিণ ২৪ পরগনার বড় পুজো কমিটির কর্মকর্তাদের মনে এখন নানারকম প্রশ্নের ছায়া। আজ মহালয়ার পর থেকে আর দম ফেলার সময় থাকবে না পুজো উদ্যোক্তাদের। কিন্তু এই শেষ প্রস্তুতিতেও বাধা হয়ে আসছে নিম্নচাপ। মঙ্গলবার মেঘ কাটলেও সোমবার পর্যন্ত গত কয়েক দিনের আবহাওয়ায় তাদের কপালে ভাঁজ পড়েছে। পুজোর মুখে ফের বৃষ্টি নামলে কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে, তা নিয়ে শঙ্কিত সকলেই। সমস্যায় পড়েছে মৃৎ শিল্পীরাও।

প্লাস্টিকের আড়ালে ঠাঁই হয়েছে দেবীর। ছবি: নির্মল বসু।

প্লাস্টিকের আড়ালে ঠাঁই হয়েছে দেবীর। ছবি: নির্মল বসু।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:০৯
Share: Save:

পুজোর ঠিক মুখে ঝড়-জলের দাপটে দুশ্চিন্তায় পড়েছে পুজো কমিটিগুলি। এই আবহাওয়ায় উত্তর দক্ষিণ ২৪ পরগনার বড় পুজো কমিটির কর্মকর্তাদের মনে এখন নানারকম প্রশ্নের ছায়া। আজ মহালয়ার পর থেকে আর দম ফেলার সময় থাকবে না পুজো উদ্যোক্তাদের। কিন্তু এই শেষ প্রস্তুতিতেও বাধা হয়ে আসছে নিম্নচাপ। মঙ্গলবার মেঘ কাটলেও সোমবার পর্যন্ত গত কয়েক দিনের আবহাওয়ায় তাদের কপালে ভাঁজ পড়েছে। পুজোর মুখে ফের বৃষ্টি নামলে কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে, তা নিয়ে শঙ্কিত সকলেই। সমস্যায় পড়েছে মৃৎ শিল্পীরাও।

এমন বৃষ্টি হলে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ হবে কিনা তা নিয়ে চিন্তায় পুজো কর্মকর্তারা। বৃষ্টির ফলে শুকোচ্ছে না প্রতিমা। শিল্পীরা জানালেন, বিশেষ করে এই সমস্যা ঠাকুরের মুখের ক্ষেত্রে বেশি হচ্ছে। কাঠ দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে ঠাকুরের মুখ শুকনোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু সে জন্য বাড়তি খরচ গুণতে হচ্ছে শিল্পীদেরই। কমছে মুনাফা। কিন্তু ‘গ্যাস ব্লোল্যাম্ব’ যন্ত্রের সাহায্যে কাঁচা মাটি শুকনো হলেও তাতে রঙের জৌলুষ কমে বলে জানালেন শিল্পীরা।

বনগাঁর শিমূলতলার মৃৎশিল্পী সিন্টু ভট্টাচার্য বলেন, “রোদ্দুরে রং করলে দেবীর মুখ উজ্বল দেখাত। আমরা সন্তুষ্ট হতাম। কিন্তু এই স্যাঁত স্যাঁতে আবহাওয়ায় তা আর হচ্ছে না। দেখে মনে হচ্ছে মায়েরও যেন মন খারাপ।” তা ছাড়া, এক দিনের মধ্যে যে কাজ শেষ হত, সেই কাজের জন্য এখন সময় লাগছে তিন দিন। ফলে শ্রমিক খরচও বেড়ে গিয়েছে। আবার অনেক সময় প্রতিমা তৈরির শেড দেওয়া ঘরে জল পড়ছে। তাতেও তো ব্যাহত হচ্ছে কাজ।” একই হাল দক্ষিণ ২৪ পরগনার নিউটাউনের পুজো নিউ টাউন স্পোর্টিংয়ের। হাসপাতালের মাঠ ছেড়ে এ বার পুজো হচ্ছে পাশেই একটি জায়গায়। ক্লাবের প্রতিমা শিল্পী, সরিষা হাটের রঙ্গলাল পাল বললেন, “স্টুডিওতে প্রতিমার রঙের প্রলেপ যেন কিছুতেই শুকাতে চাইছে না।” ক্লাবের দুই যুগ্ম সস্পাদক রণজিৎ হালদার ও জয়দেব সামন্ত বলেন, “নতুন জায়গায় পুজো বলে মাটি ফেলতে হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টিতে সেগুলি ধুয়ে যাচ্ছে। মণ্ডপে খড়িমাটির রঙ থেকে এখন ব্যয়বহুল অয়েল পেন্টের কথা ভাবতে হচ্ছে।” একই রকম সমস্যায় পড়েছে এলাকার ইয়ং ফাইটার সহ অন্য ক্লাবগুলি।

বনগাঁয় বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখা গেল সমস্যা শুধু মৃৎ শিল্পীদের হচ্ছে তা নয়। সমস্যায় পড়েছে মণ্ডপ তৈরির শ্রমিকেরাও। বনগাঁর মতিগঞ্জ ঐক্য সম্মেলনী পুজোর মণ্ডপ পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। বৃষ্টির জন্য এই মণ্ডপে কাজ করা যাচ্ছে না। দেবদাস মণ্ডল নামে ক্লাবের এক কর্মকর্তা বলেন, “পুজো আর বেশি দিন নেই। মণ্ডপের ভিতরে কিছু কাজ এগোলেও বাইরে কোনও ভাবেই কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ভাবে নির্দিষ্ট সময়ে মণ্ডপ শেষ করা সম্ভব হবে কিনা জানি না।” বনগাঁর এগিয়ে চলো ক্লাবের থিম এ বার কাশ্মীর। সেখানেও এই সমস্যায় ভুগছেন কর্মকর্তারা। বিশ্বজিৎ দাস নামে এক ক্লাব কর্মকর্তা বলেন, “কাশ্মীরের ডাল লেক তৈরি করার ইচ্ছা আছে। বৃষ্টির জন্য সেই কাজ করতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। এলাকার অন্য ক্লাবগুলিরও একই রকম অবস্থা।

ডায়মন্ড হারবরের নুনগোলা সার্বজনীন এ বার পা দিয়েছে ৯৭ বছরে। মণ্ডপে ঘটের কাজ, পোড়া মাটির ভাঁড় ছাড়াও রয়েছে সাবেকি চটের ব্যবহার। পুজো কমিটির সম্পাদক অভিজিৎ রায় বলেন, “বৃষ্টির জন্য আমরা তিন থেকে চার দিন পিছিয়ে রয়েছি। চটগুলি ভিজে যাচ্ছে। দ্রুত কাজ শেষ করার চাপ বাড়ছে। দর্শনার্থীদের বসার ব্যবস্থা নিয়ে আমরা বিশেষ ভাবে চিন্তিত।”

কাকদ্বীপ অমৃতায়ন সঙ্ঘের সমস্যা আরও তীব্র। ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ এই থিমে প্রতিমা ও মণ্ডপের আবহ সাজানো হচ্ছে সহজপাঠ থেকে। ক্লাবের সভাপতি দেবব্রত মাইতি বলেন, “বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। আমাদের মণ্ডপ এ বার ধান-খড়-তুশ দিয়ে তৈরি। মণ্ডপের সামনে কাদা জমে পিছল হয়ে পড়ছে।” প্রতিমা ও মণ্ডপ শিল্পী উমাপদ দাস বলেন, “আঠা দিয়ে ধান লাগানো হয়েছিল। জলে ধুয়ে আলগা হয়ে সেগুলি পাখি ঠুকরে খাচ্ছে। বৃষ্টি কমলে নতুন করে আঠা লাগানোর অপেক্ষায় আছি।”

ও দিকে, বকখালির পল্লিসমাজ দুর্গোৎসব কমিটির সমস্যা একটু অন্য রকম। পুজো কমিটির সম্পাদক গোবিন্দ প্রামাণিক বলেন, “সমুদ্র সৈকত লাগোয়া পার্কিং মাঠের এই পুজোর প্রস্তুতি মার খাচ্ছে ঝোড়ো হাওয়া আর বৃষ্টির দাপটে।” মণ্ডপের কর্মকর্তা মতে প্যান্ডেলের কাজ, প্রতিমার রঙ সবই ব্যাহত হচ্ছে বৃষ্টিতে।

কিন্তু এত কিছুর পরও জামা কাপড়ের দোকানগুলিতে কিন্তু ভিড় কম দেখা যাচ্ছে না। তবে দোকান মালিকদের বক্তব্য, এই সময় যে হারে ক্রেতাদের ভিড় থাকত। বৃষ্টির জন্য এই দু’তিন দিন একটু কম। আবহাওয়া ঠিক হলে ভিড় আরও বাড়বে বলে আশা করছে দোকান মালিকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE