Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

পুজোর বরাদ্দ থেকে সাহায্য একাধিক দুঃস্থ পরিবারকে

সমুদ্র কেড়ে নিয়েছে ওদের আশা, ওদের ভরসা ওদের একমাত্র সম্বল, সন্তানকে। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে লোকটির চলে যাওয়ার পরে সংসারগুলির হাঁড়ির হাল। যখন পুজোর আনন্দে মেতে উঠেছে সকলে, তখন তাদের দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের সন্ধান করতে গিয়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে। কীসের পুজো কীসের বোধন এসব এখন এঁদের হিসেবের বাইরে। সে সব কথা মাথায় রেখে কাকদ্বীপের একটি পুজো কমিটি চাঁদার টাকার থেকে এই পরিবারগুলিকে আর্থিক সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

শান্তশ্রী মজুমদার
কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৪ ০১:৩০
Share: Save:

সমুদ্র কেড়ে নিয়েছে ওদের আশা, ওদের ভরসা ওদের একমাত্র সম্বল, সন্তানকে। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে লোকটির চলে যাওয়ার পরে সংসারগুলির হাঁড়ির হাল। যখন পুজোর আনন্দে মেতে উঠেছে সকলে, তখন তাদের দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের সন্ধান করতে গিয়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে। কীসের পুজো কীসের বোধন এসব এখন এঁদের হিসেবের বাইরে। সে সব কথা মাথায় রেখে কাকদ্বীপের একটি পুজো কমিটি চাঁদার টাকার থেকে এই পরিবারগুলিকে আর্থিক সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সপ্তমীর দিন ওই পুজো কমিটি থেকে আটটি পরিবারের হাতে টাকা তুলে দেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে এই ক্লাবের সম্পাদক দেবব্রত মাইতি বলেন, “আমরা চাঁদা তুলে প্রতি বছরই এ রকম অসহায়দের পাশে দাঁড়াই। এ বার এই ৭টি পরিবারকে ৫ হাজার টাকা করে সাহায্য দেব বলে এগোচ্ছি। আর একটি পরিবারকে আরও কিছু বেশি সাহায্য দেওয়া হবে।”

কিছু দিন আগেই বঙ্গোপসাগরে তলিয়ে গিয়েছিল ট্রলার এফ বি সূর্যনারায়ণ। সেখান থেকে বেরিয়েছিল ছ’টি দেহ। নিখোঁজ এক জন। একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন শেফালিদেবী। শারীরিক অসুস্থতার জন্য তাঁর স্বামী কাজ করতে পারেন না। ঘরে দু’টি মেয়ে আছে। পরিবারে রোজগেরে বলতে ছিল তাঁর ওই ছেলে। কিন্তু তাঁকেও সমুদ্র ছাড়ল না। মত্‌স্যজীবীর মা শেফালি দাস বলেন, “আমার একমাত্র ছেলে ছিল লোটন। মাছ ধরতে গিয়ে আর ফিরল না। কিছু সাহায্য পেয়েছি। সেগুলি থেকেই কোনও রকমে খেয়ে বেঁচে আছি। এ বার ক্লাব থেকে কিছু সাহায্য করা হবে বলেছে।” পুজোর জামাকাপড় তো দূরের কথা। আগামী দিনে ওই দুই মেয়ে ও অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে কী ভাবে সংসার চালাবেন শেফালিদেবী, তা নিয়ে চিন্তার শেষ নেই।

একই অবস্থা এই ঘটনায় সন্তানহারা আর এক মা মিনতিদেবীর। জাল বোনার কাজ করে যা পায় তাই দিয়ে কোনও রকমের সংসার চলে। তাঁর স্বামীও হাত-পা চালিয়ে কাজ করতে এখন আর সক্ষম নন। ছোট একটি ছেলে আছে। তাই এই ক্লাবের সাহায্য নিতে অপেক্ষায় তিনি। তাঁর কথায়, “মরসুম ছাড়া জাল বোনার কাজ রোজ থাকে না। ছোট ছেলেটাকে পড়াতাম। কিন্তু এখন আর পড়াতে পারব না।”

এদেঁর মতো সপ্তমীর অপেক্ষায় রয়েছেন হিমাংশু মণ্ডল নামে এক অসহায় বাবা। একমাত্র ছেলে কৃষ্ণেন্দুকে ভর্তি করেছিলেন রামপুরহাট পলিটেকনিক কলেজে। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বিভোর ওই ছাত্রের কিডনির অসুখ ধরা পড়ে মাস দুই আগে। সে দিনই জানা যায় একটি কিডনির সাহায্যেই তাঁকে চলতে হয়েছে ১৮ বছর। কিন্তু এখন সেটাও প্রায় অকেজো হয়ে যেতে চলেছে। তাই অবিলম্বে কিডনি প্রতিস্থাপন প্রয়োজন। পিজি হাসপাতালে সে এখন চিকিত্‌সাধীন। হিমাংশুবাবুর কথায়, ‘‘ছোট ব্যবসায়ী আমি। ভেলোর সিএমসি থেকে ১২ লক্ষ টাকার খরচ আছে বলেছে। কী ভাবে সামলাবো?” পুজো কমিটির তরফে তাঁকে ২৫ হাজার টাকা সাহায্যের কথা বলা হয়েছে। মণ্ডপের মোড়ে হেল্প বক্সেও চাঁদা তোলা হবে কৃষ্ণেন্দুর জন্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE