Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

প্রতিমা নামিয়ে অবরোধ বসিরহাটে

বিসর্জন নিয়ে তুলকালাম বাধল বসিরহাটে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মানতে গিয়ে ল্যাজেগোবরে হল পুলিশ-প্রশাসন। রাস্তা কাটা, কালভার্ট উপড়ে ফেলা, রেল অবরোধ সামলাতে গিয়ে রবিবার ঢিল-পাটকেলও খেতে হয়েছে পুলিশ কর্মীদের কাউকে কাউকে। পুলিশ-প্রশাসনের নড়বড়ে অবস্থানের জন্যই এমন কাণ্ড বলে অভিযোগ পুজো কমিটির কর্তাদের অনেকেরই।

রেল লাইনে প্রতিমা নামিয়ে অবরোধ। রবিবার।—নিজস্ব চিত্র।

রেল লাইনে প্রতিমা নামিয়ে অবরোধ। রবিবার।—নিজস্ব চিত্র।

নির্মল বসু
বসিরহাট শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৩৫
Share: Save:

বিসর্জন নিয়ে তুলকালাম বাধল বসিরহাটে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মানতে গিয়ে ল্যাজেগোবরে হল পুলিশ-প্রশাসন। রাস্তা কাটা, কালভার্ট উপড়ে ফেলা, রেল অবরোধ সামলাতে গিয়ে রবিবার ঢিল-পাটকেলও খেতে হয়েছে পুলিশ কর্মীদের কাউকে কাউকে। পুলিশ-প্রশাসনের নড়বড়ে অবস্থানের জন্যই এমন কাণ্ড বলে অভিযোগ পুজো কমিটির কর্তাদের অনেকেরই। তবে রাজ্যের অন্য কোনও প্রান্তে বিসর্জন নিয়ে সরকারি নির্দেশ অমান্য করার এমন নজির তৈরি হয়নি, রবিবার যেমনটা হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার এই এলাকায়।

পুজো এবং ঈদ পরপর পড়ায় (সোমবার ঈদ) শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ ছিল, শনিবার ও সোমবার রাত ৮টার পরে দুর্গাপ্রতিমা নিরঞ্জন করা যাবে। ঈদের আগের দিন, রবিবার কোনও মতেই বিসর্জন হবে না।

শনিবার বিসর্জন দিতে রাজি ছিলেন না বসিরহাটের বেশ কিছু বড় পুজোর কর্তারা। সব দেখেশুনে মহকুমা পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা জানান, সরকারি নির্দেশ মেনে শনিবার বিসর্জনের সময়ে নিরাপত্তার ব্যবস্থা হবে। কিন্তু রবিবার কেউ প্রতিমা বিসর্জন দিতে চাইলে, নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে পারবে না পুলিশ। তা নিয়েই শুরু জলঘোলা। শনিবার রাতে ফের অবস্থান বদলে পুলিশ বিভিন্ন পুজো কমিটির কাছে গিয়ে মৌখিক ভাবে জানিয়ে আসে, রবিবার বিসর্জন দেওয়া যাবে না। কিন্তু শনিবার তত ক্ষণে উদ্যোক্তাদের হাতে বিসর্জনের জন্য আর সময় নেই।

রবিবার সকালে দেখা যায়, বসিরহাটের বিভিন্ন বড় পুজোর প্যান্ডেলের বাইরে লাঠি হাতে তিন-চার জন করে পুলিশ কর্মী দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছেন। তাতে আগুনে ঘি পড়ে। পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ জনতা নামে রাস্তায়। ইটিন্ডা রোড, টাকি রোড, মার্টিন বার্ন রোডে শুরু হয় অবরোধ। কোথাও প্যান্ডেল থেকে প্রতিমা নামিয়ে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। ভ্যাবলা স্টেশনে রেল অবরোধ হয়। ভ্যাবলাতেই পুলিশকে লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছোড়া হয়। চোট পান কয়েক জন। র্যাফ নামিয়ে, লাঠি উঁচিয়ে পরিস্থিতি সামলনোর চেষ্টা করে পুলিশ। এক সময়ে পুলিশ কর্তাদের অনেকে কার্যত হাতজোড় করে জনতাকে শান্ত হতে অনুরোধ করেন। বিকেলের দিকে জেলা পুলিশ-প্রশাসনের উচ্চস্তর থেকে বার্তা পৌঁছয়, রবিবার বিসর্জনে বাধা দেওয়া হবে না। সে কথা জানতে পেরে পরিস্থিতি শান্ত হয়। ততক্ষণে দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকেল। ইছামতীতে যে সব নৌকো সকাল থেকে জড়ো হয়েছিল, তার বেশির ভাগই ফিরে গিয়েছে। ফলে বিসর্জন দিতে চাইলেও রবিবার তা যে সম্ভব নয়, বুঝে যান পুজো কর্তারা। তা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়ান অনেকে। কিছু নৌকো জোগাড় করে অনেকে ইছামতীতে ভাসান দিলেও বেশির ভাগ প্রতিমাই পাড়ার পুকুর, খাল-বিলে ভাসান দেওয়া হয়।

পুলিশ-প্রশাসন তো বটেই, গোটা ঘটনায় ‘বসিরহাট সমন্বয় কমিটি’র ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। এলাকার কয়েক জনকে নিয়ে এই কমিটি তৈরি হয় প্রতিবার। পুজো নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে ক্লাবগুলির সমন্বয় রক্ষাই কমিটির কাজ। প্রশাসনের অবস্থান স্পষ্ট করে ক্লাবগুলির কাছে তারা পৌঁছে দেয়নি বলেও অভিযোগ পুজো কমিটির কর্তাদের অধিকাংশের। কমিটির বক্তব্য, শনিবার যে অনেকে ভাসান চাইছেন না, তা আগেই পুলিশ-প্রশাসনের কানে তোলা হয়। বার বার নিজেদের অবস্থান বদলানোয় জনতার মধ্যে ক্ষোভ বাড়ে।

সে কথা অবশ্য মানতে নারাজ জেলা পুলিশ-প্রশাসন। প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করার উপায় ছিল না। কিন্তু তা করতে গিয়ে স্থানীয় ভাবাবেগ কোনও ভাবে আঘাত পাওয়াতেই এই বিপত্তি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

pujo nirmal basu basirhat southbengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE