Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বাঁধ নিয়ে তৎপর মন্ত্রী, সরালেন ঠিকাদারকে

নামখানায় প্লাবনে ক্ষতিগ্রস্ত নদীবাঁধ মেরামতিতে এক ঠিকাদারের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ পেয়ে তৎক্ষণাৎ তাকে কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে প্রশাসন ও নিজের দফতরের আধিকারিকদের নির্দেশ দিলেন, যে সব জায়গায় জমি অধিগ্রহণের কাজ মিটেছে, সেখানে অবিলম্বে বাঁধ নির্মাণ শুরু হোক।

সুন্দরবনে প্লাবিত এলাকা পরিদর্শনে সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার।  ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।

সুন্দরবনে প্লাবিত এলাকা পরিদর্শনে সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।

শুভাশিস ঘটক
নামখানা শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৪ ০২:২৩
Share: Save:

নামখানায় প্লাবনে ক্ষতিগ্রস্ত নদীবাঁধ মেরামতিতে এক ঠিকাদারের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ পেয়ে তৎক্ষণাৎ তাকে কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে প্রশাসন ও নিজের দফতরের আধিকারিকদের নির্দেশ দিলেন, যে সব জায়গায় জমি অধিগ্রহণের কাজ মিটেছে, সেখানে অবিলম্বে বাঁধ নির্মাণ শুরু হোক।

দিন দ’শেক আগে ভরা কোটালের জলোচ্ছ্বাসে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা ও সাগর ব্লকের বহু জায়গায় বাঁধ ভেঙেছে। প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। ত্রাণ নিয়ে অভিযোগ উঠছিল শুরু থেকেই। সময় মতো বাঁধ মেরামতি হলে এই বিপর্যয় ঘটত না বলে অভিযোগ তুলছিলেন ক্ষতিগ্রস্তরা। বৃহস্পতিবার পরিস্থিতি দেখতে আসেন সেচমন্ত্রী। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ কাকদ্বীপের লট-৮ ঘাট থেকে সপার্ষদ লঞ্চে ওঠেন রাজীববাবু। লঞ্চের ডেকে বসেই সেচ দফতরের আধিকারিক, নামখানার বিধায়ক বঙ্কিম হাজরা, সুন্দরবন উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরাদের সঙ্গে বৈঠক সেরে নেন।

নামখানার মৌসুনি দ্বীপে ক্ষতির পরিমাণ খুবই বেশি। নিজের দফতরের আধিকারিকদের কাছে রাজীববাবু জানতে পারেন, ওই এলাকার বালিয়াড়ায় বাঁধ মেরামতিতে ঢিলেমি করছে ঠিকাদার। সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে বাতিল করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগের নির্দেশ দেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমরা এই এলাকার জন্য দফতরের সেরা আধিকারিকদের নিয়ে কাজ করছি। যে সব ঠিকাদার ভাল কাজ করেন, তাদের দিয়েই দ্রুত মেরামতির ব্যবস্থা করুন।”

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ নিয়ে অভাব-অভিযোগের কথা মন্ত্রীর কানে উঠেছিল। বঙ্কিমবাবুর কাছে সে বিষয়ে জানতে চান রাজীববাবু। বিধায়ক জানান, ত্রাণ যথেষ্টই বিলি হচ্ছে। শিবিরও হয়েছে বেশ কিছু। মন্ত্রীর সঙ্গে এ দিন ছিলেন সেচ দফতরের মুখ্য বাস্তুকার কৌশিক চট্টোপাধ্যায়, সহকারী বাস্তুকার গৌতম চট্টোপাধ্যায়। তাঁরা জানান, কালিয়াডাঙা পূর্ব ও পশ্চিম, বোটখালি, মৌসুনি, সুমতিনগর-সহ কিছু এলাকায় বাঁধ সারাইয়ের কাজ চলছে। সুমতিনগরে অবশ্য রিং-বাঁধ তৈরিতে জমি-সমস্যার কথাও তাঁরা জানান মন্ত্রীকে। স্থানীয় ভাবে কথা বলে সমস্যা মেটানোর জন্য বঙ্কিমবাবু ও মন্টুরামবাবুকে অনুরোধ করেন রাজীব। প্লাবনের পরে পরেই প্রাক্তন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ নিয়ে এসেছিলেন। কান্তিবাবু কোথায় কোথায় গিয়েছিলেন, কত ত্রাণ বিলি করেছিলেন, সে সব নিয়েও খোঁজ-খবর করেন রাজীববাবু।

সাগর ও নামখানা ব্লকের মধ্যে দিয়ে চলছিল মন্ত্রীর লঞ্চ। বিভিন্ন জায়গায় নেমে পরিস্থিতি আরও কাছ থেকে দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন রাজীববাবু। কিন্তু আবহাওয়া খারাপ থাকায় দফতরের কর্তারা তাঁকে নামতে নিষেধ করেন। এর পর লঞ্চ পৌঁছয় সুমতিনগরে। সেখানে নেমেই পড়েন রাজীববাবু। বাঁধের কাছে বসবাসকারী কয়েকটি পরিবারের লোকজন এসে তাঁকে ঘিরে নানা অভাব-অভিযোগের কথা জানান। মন্ত্রী বলেন, “আপনারা জমি দিতে রাজি হোন। না হলে বাঁধ তৈরি হবে না। আপনারাই পরে বিপদে পড়বেন।” তখন বাঁধ মেরামতির কাজ চলছিল সেখানে। শ্রমিকদের হাতে ইট তুলে দেন রাজীববাবু।

লঞ্চে উঠে মন্ত্রী ফের এক দফা আলোচনায় বসেন। বলেন, “দফতর তো কাজ করবে ই। কিন্তু জমির সমস্যা স্থানীয় ভাবে জনপ্রতিনিধিদের মেটাতে হবে। বর্ষার মধ্যেই ওই কাজ শেষ করা দরকার। এখন মানুষকে সমস্যার কথা যে ভাবে বোঝানো যাবে, বছরের অন্য সময় বোঝালে ততটা হবে না।” বিকেলে লট-৮ ঘাটে ফেরে মন্ত্রীর লঞ্চ। সেখানে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক শান্তনু বসু-সহ প্রশাসনের আধিকারিকদের রাজীব বলেন, “যেখানে জমি পাওয়া গিয়েছে, সেখানে রিং-বাঁধ তৈরির কাজ শুরু করে দিন।”

চার জেলার সেচে ৫০০ কোটি

রাজ্যের খরাপ্রবণ চার জেলার সেচ প্রকল্পে ৫০০ কোটি টাকা খরচ করা হবে। বৃহস্পতিবার নবান্নে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়েছে। পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় পরে বলেন, “খরাপ্রবণ জেলা বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরে এই প্রকল্পে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমি সেচের আওতায় আসবে। কাজটা করবে জলসম্পদ উন্নয়ন দফতর।” এ দিনের বৈঠকে অনাথ ও অসহায় কন্যাসন্তানদের পুনর্বাসনের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। ওই প্রকল্পের নাম ‘মুক্তির আলো’। পার্থবাবু জানান, পুনর্বাসন প্রকল্পের জন্য হিডকো নিউ টাউনে সাড়ে ২১ কাঠা জমি দেবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE