হঠাত্ ধেয়ে আসা উত্তুরে বাতাসের দাপটে বঙ্গোপসাগরে ফের ট্রলার উল্টে নিখোঁজ হয়েছেন পাথরপ্রতিমার দক্ষিণ সীতারামপুরের সাত মত্স্যজীবী। শুক্রবার কেঁদো দ্বীপ থেকে প্রায় ১২ নটিক্যাল মাইল দক্ষিণে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। তিন জনকে উদ্ধার করা গেলেও বাকিদের এখনও কোনও খোঁজ নেই।
মত্স্যজীবীদের একটি সূত্র জানাচ্ছে, যেখানে ট্রলারটি ডুবেছে, সেখানে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি আশপাশে ছাইমারির জঙ্গল এবং কলসদ্বীপের জঙ্গল রয়েছে। মত্স্যজীবীদের দাবি, ওই দ্বীপগুলিতে বাঘ এবং কুমির দুই-ই রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ভারতীয় সীমানা ধরে খোঁজ করা হলেও প্রবল উত্তুরে বাতাসের জেরে নিখোঁজ মত্স্যজীবীদের বাংলাদেশের দিকে চলে যাওয়াও অস্বাভাবিক নয়।
কিছু দিন আগেই কাকদ্বীপের একটি ট্রলার এফবি সূর্যনারায়ণ উল্টে ৬ জন মত্স্যজীবীর মৃত্যু হয়। এক জন এখনও নিখোঁজ। বার বার এ রকম দুর্ঘটনা বহু প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
মত্স্যজীবীদের দুর্ঘটনায় মাত্র ১ লক্ষ টাকার সরকারি বিমা থাকে। নিজেদের থাকে আর ১ লক্ষ টাকার বিমা। সেই প্রিমিয়ামের টাকা শ্রমিক-মালিক লভ্যাংশের যৌথ অংশ থেকে বহন করা হয়। কিন্তু দুর্ঘটনায় দেহ মিললে, তবেই মেলে সেই বিমার টাকা। ১ লক্ষ টাকার উপরে বিমা করতে গেলে আবার সুনির্দিষ্ট বাত্সরিক আয় দেখাতে হয়। অনিশ্চয়তার মাছ ব্যবসায় আয়ের কোনও ঠিক-ঠিকানা থাকে না বলে তা অনেক সময়েই করা যায় না বলে জানালেন মত্স্যজীবীদের অনেকে। পাথরপ্রতিমার শ্রীধরনগর মত্স্যজীবী সমিতির সদস্য তথা ট্রলার মালিক রবীন্দ্রনাথ রঞ্জিত বলেন, “তাও অনেক সময়ে শ্রমিকেরা বিমার টাকা লভ্যাংশ থেকে আর খরচ করতে চান না। আমরাই প্রায় জোর করে বলে-কয়ে এই বিমা চালাই।”
বিড়ি শ্রমিক, বা অন্য কল-কারখানার শ্রমিকদের মতো সামাজিক সুরক্ষার আওতায় মত্স্যজীবীরা পড়েন না। অতিরিক্ত মত্স্য অধিকর্তা (সামুদ্রিক) সুরজিত্কুমার বাগ বলেন, “সরকারের তরফে প্রত্যেক মত্স্যজীবীর ১ লক্ষ টাকা বিমা করা থাকে। তােঁদর ছেলেমেয়েদের বিনা পয়সায় পড়াশোনার সুযোগ না থাকলেও আমরা স্কুলশিক্ষা দফতরের সঙ্গে কথা বলে সেই চেষ্টা করছি। মত্স্যজীবী অধ্যুষিত ওই সমস্ত এলাকায় যাতে আরও বেশি করে স্কুল খোলা যায়, তা-ও দেখা হচ্ছে।” পাথরপ্রতিমা, সাগর, কাকদ্বীপ, নামখানার মতো এলাকায় মত্স্যজীবীদের জন্য আমার বাড়ি আমার ঘর প্রকল্পে কিছু বাড়ি ইদানীং হচ্ছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। পাথরপ্রতিমায় মত্স্যজীবী অধ্যুষিত কিছু এলাকায় পানীয় জলের নলকূপ বসানো হচ্ছে বলে দাবি করেছেন প্রশাসন কর্তারা।
সমস্যা রয়েছে ট্রলার নিয়েও। শুক্রবারের ঘটনায় দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রলারটির বিমা করা ছিল না বলে জানা গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ইউনাইটেড মত্স্যজীবী সংগঠনের পাথরপ্রতিমা শাখার নেতা নায়ারণ দাস বলেন, “বছরে একবারই দুর্ঘটনার টাকা পাওয়া যায়। তা-ও ট্রলারের ভগ্নাবশেষ পাওয়া গেলে তবেই। ট্রলার ডুবে গেলে তা বেশিরভাগ সময়েই টেনে তোলা যায় না। তা ছাড়াও, আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম, যেমন মাছ ধরার জালের বিমা হয় না। এ সব ঝামেলার জন্য বোটের বিমা করান না বেশির ভাগ মালিকই।” ট্রলার মালিকদের থেকেই জানা গেল, মাছের মরসুম ফুরিয়ে গেলে বছরে এক বার ট্রলার ডাঙায় তুলে সারাই হয়। তারপর থেকে নতুন সমস্যা না হলে ট্রলার সারানোও হয় না।
এই পরিস্থিতিতেই বছরের পর বছর প্রাণ হাতে গভীর সমুদ্রে গিয়ে কাজ করেন অসংখ্য মত্স্যজীবী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy