Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ভরা কোটালে সুন্দরবনে ভাঙছে বাঁধ

পূর্ণিমার ভরা কোটালে জল বাড়ছে সুন্দরবন এলাকার বিভিন্ন নদীতে। জলের চাপ সামলাতে না পেরে ভাঙতে শুরু করেছে নদীবাঁধ। ইতিমধ্যেই কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ভেঙেছে মাটির বাড়ি। ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিতে হয়েছে দুর্গতদের। যে সব গ্রামে এখনও জল ঢোকেনি, সেখানে বাঁধ পাহারা শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ।

সরেজমিনে সাংসদ। বৃহস্পতিবার সন্দেশখালির আতাপুরে ছবিটি তুলেছেন নির্মল বসু।

সরেজমিনে সাংসদ। বৃহস্পতিবার সন্দেশখালির আতাপুরে ছবিটি তুলেছেন নির্মল বসু।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বসিরহাট শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:৪১
Share: Save:

পূর্ণিমার ভরা কোটালে জল বাড়ছে সুন্দরবন এলাকার বিভিন্ন নদীতে। জলের চাপ সামলাতে না পেরে ভাঙতে শুরু করেছে নদীবাঁধ। ইতিমধ্যেই কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ভেঙেছে মাটির বাড়ি। ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিতে হয়েছে দুর্গতদের। যে সব গ্রামে এখনও জল ঢোকেনি, সেখানে বাঁধ পাহারা শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ।

মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই বিভিন্ন গ্রামে একশোর বেশি মাটির বাড়ি ভেঙেছে। পাঁচটি ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ। এ ছাড়াও অনেকে উচুঁ জমি কিংবা বড় রাস্তার উপরে আশ্রয় নিয়েছেন। দুর্গতদের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকার অবৈধ মেছোভেড়ির কারবার চলছে। নদীবাঁধের ধারে মেছোভেড়ির জন্য সারা বছর বাঁধের মাটি নরম থাকে। ফলে, নদীবাঁধগুলি জলের চাপ নিতে পারছে না।

মহকুমা প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, ত্রাণ পর্যাপ্ত আছে। বাঁধের ভাঙন মেরামতি এবং বাঁধের উপর মাটি ফেলার জন্য এলাকার পঞ্চায়েত, ব্লক অফিস এবং সেচ দফতরকে বলা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার সকালে সন্দেশখালি-২ ব্লকের তালতলা ফেরিঘাটের কাছে বড় কলাগাছি নদীর বাঁধ ভেঙে গ্রামে নোনা জল ঢুকে পড়ে। তার পর ওই এলাকায় অনেকেই ঘর ছেড়েছেন। আতাপুর, তুষখালি হয়ে কোড়াকাঠি গ্রামের দিকে বেশ কিছু বাড়িতে জল ঢুকেছে। বহু মেছোভেড়ির জল উপচে বেরিয়ে যাচ্ছে মাছ। ফসলের জমিতেও ঢুকে পড়ে নোনা জল। সঙ্কটে রয়েছে আরও কয়েকটি নদীবাঁধ।

হাসনাবাদের পুরাতন বাজার এলাকাও জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। বর্তমানে হাসনাবাদ থানা, রেজিস্ট্রি অফিস, বাজার, বাসস্ট্যান্ড, ফেরিঘাট এলাকায় এক হাঁটু জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। অনেক দোকানে জল ঢুকে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। স্বরূপনগর এলাকার তিনটি পঞ্চায়েত এলাকায় সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে জল জমে ছিল। নতুন করে জল ঢোকার কারণে সেই জল কোথাও কোমর ছাড়িয়েছে। দিন দুয়েক আগে তিন নম্বর উত্তর সাহেবখালির বাঁধে ফাটল দেখা যায়। গ্রামের মানুষ সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় পঞ্চায়েত এবং বিএসএফ জওয়ানদের খবর দেয়। বিএসএফ কিছু বস্তা দেয়। একই সময়ে কালিন্দী নদীর বাঁধও ভাঙে। ফলে, গ্রামে জল ঢুকতে শুরু করে। বেশ কয়েকটি স্লুইস গেট অকেজো থাকায় সমস্যা বাড়ে। তখন গ্রামের মানুষই বাঁধ রক্ষায় নেমে পড়েন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আপাতত কোনও রকমে বাঁধে মাটির বস্তা ফেলে নোনা জল ঢোকা বন্ধ করা গিয়েছে। তবে বাঁধ ভাল ভাবে মেরামতি না হলে সমস্যা হবেই।

সন্দেশখালি-২ ব্লকের সুনীল পড়ুয়া, খগেন মাহাতো, রুমকি মণ্ডলদের মনে পড়ছে আয়লার ভয়ঙ্কর স্মৃতির কথা। পরিস্থিতি সামলাতে অবশ্য বৃহস্পতিবার থেকেই বাঁধ সারানোর কাজ শুরু করেছে সেচ দফতর। রাতে জেনারেটর লাগিয়েও কাজ হবে বলে জানানো হয়েছে। এ দিনই সন্দেশখালির আতাপুর গ্রামে গিয়ে দুর্গতদের হাতে আর্থিক সাহায্য তুলে দেন বসিরহাটের সাংসদ ইদ্রিশ আলি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE