Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ভুটভুটি উল্টে মৃত্যু হল শিশু ও বৃদ্ধার

চার বছরের মেয়ে রেশমিকাকে কোলে নিয়ে বসে ছিলেন মা সাবিনা গাজি। ছোট ভুটভুটি করে পঞ্চমখণ্ডে মাসির বাড়ি যাওয়ার পথে বেশ আনন্দেই ছিল ছোট্ট মেয়েটা। তখনও ঘাট থেকে ভুটভুটি ছাড়েনি। কিন্তু হঠাৎই বদলে গেল দৃশ্যটা। আচমকাই ভুটভুটি উল্টে তলিয়ে গেলেন মা-মেয়ে সহ বেশ কয়েক জন। যাত্রীদের আর্তচিৎকারে স্থানীয় বাসিন্দারা এসে জলে ঝাঁপ দেন।

ঘাটের কাছেই বিপর্যয়। ছবি: দিলীপ নস্কর।

ঘাটের কাছেই বিপর্যয়। ছবি: দিলীপ নস্কর।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৩৮
Share: Save:

চার বছরের মেয়ে রেশমিকাকে কোলে নিয়ে বসে ছিলেন মা সাবিনা গাজি। ছোট ভুটভুটি করে পঞ্চমখণ্ডে মাসির বাড়ি যাওয়ার পথে বেশ আনন্দেই ছিল ছোট্ট মেয়েটা। তখনও ঘাট থেকে ভুটভুটি ছাড়েনি। কিন্তু হঠাৎই বদলে গেল দৃশ্যটা। আচমকাই ভুটভুটি উল্টে তলিয়ে গেলেন মা-মেয়ে সহ বেশ কয়েক জন। যাত্রীদের আর্তচিৎকারে স্থানীয় বাসিন্দারা এসে জলে ঝাঁপ দেন। কিছু ক্ষণ পরেই তাঁরাই জল থেকে উদ্ধার করেন রেশমিকার দেহ। উদ্ধার হয় বছর ষাটেকের এক অজ্ঞাতপরিচয় বৃদ্ধার দেহও।

মঙ্গলবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে রায়দিঘিতে মণিনদীর ১ নম্বর ঘাটে। পুলিশ জানায়, এই ঘটনায় জখম হয়েছেন আরও ৪ জন। তাঁদের মধ্যে দু’জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। অন্য দু’জন রায়দিঘি গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নৌকোর মাঝি উত্তম প্রধান পলাতক বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ ‘মা সরস্বতী’ নামে ওই ছোট ভুটভুটিটি ঘাটে দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছিল। কুলতলির মৈপীঠ মন্দির ঘাটে যাওয়ার কথা ছিল সেটির। ভুটভুটিতে জনা পনেরো যাত্রী উঠেছিলেন। নৌকোর বহণ ক্ষমতার তুলনায় তা বেশ কম হলেও চাল-ডাল-সব্জির বেশ ক’টি বস্তা ভুটভুটির উপরে তোলা হয়েছিল। এর জেরেই ডান দিকে বেশি চাপ পড়ে ভুটভুটিটি উল্টে যায় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

কোনও রকমে বাঁচলেও আতঙ্কের ঘোর কাটেনি মৈপীঠের বাসিন্দা পার্বতী জানার। হাসপাতালে শুয়ে বললেন, “বেশি মাল তুলেছিল মাঝি। আমরা যাত্রীরা সকলে বারণ করেছিলাম। তখন জোয়ার আসছে। নৌকো ছাড়ার পরেই হঠাৎ পাল্টি খেল। জলে পড়ে গেলাম। জ্ঞান ফিরল যখন, দেখলাম হাসপাতালে আছি।” বেলগাছির বাসিন্দা যাত্রী মামনি বিবির সাত বছরের মেয়ে সুরাইয়া হাসপাতালে ভর্তি। তিনি বলেন, “আজ না হয় বেঁচে গেলাম। কিন্তু এ ভাবে কত দিন চলবে? মালপত্র ও যাত্রীদের জন্য আলাদা ভুটভুটি চালানো উচিত।”

স্থানীয় সূত্রের খবর, এই নদীপথে প্রায় পঁয়তিরিশ বছর ধরে ভুটভুটিতে যাত্রী পারাপার করা হয়। তার সঙ্গে বাজারের সামগ্রীও ওই ভুটভুটিতে করেই নিয়ে যাওয়া হয়। এই ঘাট থেকে প্রায় ২০টি ভুটভুটি পাথরপ্রতিমার বিভিন্ন ঘাটে যায়। যেগুলির দূরত্ব ১৫-২০ কিলোমিটার। পারাপার হতে সময় লাগে প্রায় আড়াই ঘণ্টা। বিশেষ করে সোমবার ও বৃহস্পতিবার ওই এলাকা থেকে প্রচুর ধান, সব্জি, পান বাজারে বিক্রির জন্য এ পার ও পার করা হয়। নৌকোর ক্ষমতার তুলনায় বেশি মালপত্র তোলা হয় বলে অভিযোগ।

এক নিত্যযাত্রী বলেন, “প্রত্যেক দিন বিপদের আশঙ্কা মাথায় নিয়ে নদী পারাপার করি। ভুটভুটিতে যাত্রী বা জিনিসপত্র কম তোলার কথা বললেও মাঝিরা শোনে না।” এ বিষয়ে রায়দিঘি ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সন্তোষ মাইতি বলেন, “প্রত্যেকটি মাঝির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। অতিরিক্ত জিনিসপত্র এবং যাত্রী আর ভুটভুটিতে তোলা যাবে না।” এ দিন বিকেলে ঘটনাস্থলে যান প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি ঘটনাস্থল থেকে মৃত ওই শিশুর বাড়িতে তার মায়ের সঙ্গে দেখা করেন। প্রশাসনের পরিকাঠামোর দিকে নজর দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তিবাবু।

ভুটভুটির মালিক সংগঠন ‘রায়দিঘি যন্ত্রচালিত যাত্রিবাহী ভুটভুটি সমিতি’র সভাপতি চিত্তরঞ্জন মণ্ডল বলেন, “ওই ভুটভুটিটি ক্ষমতার তুলনায় অনেক বেশি মাল বোঝাই করেছিল। তা ছাড়া মেঝের তুলনায় ছাদে বেশি মাল তোলায় এই বিপত্তি।” তাঁর বক্তব্য, বিশেষত মাঝিরাই নিষেধাজ্ঞা মানেন না। এ বার থেকে সংগঠনের তরফে যাত্রী ও মাল যাতে পৃথক ভাবে ভুটভুটিতে তোলা হয়, সে ব্যাপারে উদ্যোগ করা হবে। রায়দিঘি পঞ্চায়েতের প্রধান মুজফ্ফর হোসেন খান বলেন, “মাঝ নদীতে এমন দুর্ঘটনা ঘটলে এক জনও প্রাণে বাঁচতেন না।”

মথুরাপুর ২ বিডিও মোনালিসা তিরকে বলেন, “এমন দুর্ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সে জন্য প্রশাসনিক ভাবে নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে নিয়ে খুব শীঘ্রই সভা ডাকা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE