Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভাল হাসপাতাল হবে কবে, প্রশ্ন কাঁচরাপাড়ার বধূর

এক সময়ে সিপিএমের ‘গড়’ কাঁচরাপাড়া পুরসভা এখন তৃণমূলের ‘দুর্গ’। কাঁচরাপাড়া পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফতেমা খাতুন বাড়ির কাছেই রাস্তার ধারে দাঁড়িয়েছিলেন। উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন করতেই একগাল হেসে বললেন, ‘‘দেখতেই তো পাচ্ছেন, কেমন ঝাঁ চকচকে রাস্তা, নিকাশিও আগের থেকে অনেক ভাল। ভ্যাট বসেছে রাস্তার ধারে। নিয়ম করে জঞ্জাল পরিষ্কার হয়। তবে রেলের জায়গা আর পুরসভার জায়গা লাগোয়া হওয়ায়, এক বাড়িতে যে পুর পরিষেবা মেলে তার কাছাকাছি রেলের জমিতে থাকা বাড়ি সেই পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হয়।’’

বিতান ভট্টাচার্য
ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৫ ০১:২৩
Share: Save:

এক সময়ে সিপিএমের ‘গড়’ কাঁচরাপাড়া পুরসভা এখন তৃণমূলের ‘দুর্গ’।

কাঁচরাপাড়া পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফতেমা খাতুন বাড়ির কাছেই রাস্তার ধারে দাঁড়িয়েছিলেন। উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন করতেই একগাল হেসে বললেন, ‘‘দেখতেই তো পাচ্ছেন, কেমন ঝাঁ চকচকে রাস্তা, নিকাশিও আগের থেকে অনেক ভাল। ভ্যাট বসেছে রাস্তার ধারে। নিয়ম করে জঞ্জাল পরিষ্কার হয়। তবে রেলের জায়গা আর পুরসভার জায়গা লাগোয়া হওয়ায়, এক বাড়িতে যে পুর পরিষেবা মেলে তার কাছাকাছি রেলের জমিতে থাকা বাড়ি সেই পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হয়।’’

নিজের খাসতালুকে মুকুল রায়কে নিয়ে কানাঘুষো যাই হোক, পুরসভার কাজকর্ম নিয়ে সমালোচনার উঁচু সুর শোনা গেল না এখানকার বাসিন্দা কয়েক জন গৃহবধূর মুখে।

ফতেমার সুর ধরেই রেললাইন লাগোয়া ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কাবেরী ঘোষ বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন কিছুই পাইনি। সব উন্নয়ন থমকে ছিল। কাজের নিরিখে বিচার করলে এখন পুর পরিষেবা অনেক ভাল। ন্যূনতম চাহিদাগুলো বিদায়ী পুরবোর্ড মিটিয়েছে। এক সময় রাস্তা দিয়ে চলা যেত না। ফুটপাথে দোকান বসায় দুর্ঘটনা ঘটত প্রতিনিয়ত। এখন ফুটপাথ পরিষ্কার হয়েছে। রাস্তায় হাঁটা যায়।’’ বহু দিন ধরেই কাঁচরাপাড়ার সব থেকে বড় সমস্যা ছিল নিকাশি ও জল। এই দুই সমস্যা অনেকটাই নির্মূল হয়েছে। বিশেষত কল্যাণী ও কাঁচরাপাড়ার মাঝে খাল সংস্কারের পর নিকাশি সমস্যা কমেছে।

চায়ের কাপ হাতে বারান্দায় বসেছিলেন ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অরুণা চক্রবর্তী। পুর পরিষেবা কেমন পেলেন গত পাঁচ বছরে? খামতি আছে কিসে? প্রশ্ন শুনে অরুণাদেবী হাসেন। বলেন, ‘‘একটা সময় ছিল ভোটের আগে সব প্রার্থীরা আসতেন, হাত জোড় করে মিষ্টি মুখে ভোট ভিক্ষা করতেন। কিন্তু ভোটের হাওয়া উড়ে গেলে নিজেদের দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলোও উবে যেত। এখন তবু কিছু কাজ হয়েছে বলে চোখে দেখা যায়। এলাকায় নিরাপত্তার সমস্যা অনেক কমেছে। আগে কাঁচরাপাড়া মানেই বোম, গুলি। এখন চুরি-ছিনতাইও অনেক কমেছে। মেয়েরা রাতে রাস্তায় বেরনোর সাহস পায়।’’

তবে এ শহরে স্বাস্থ্য পরিষেবার মান যে বেহাল তা নিয়ে মুখ খুলেছেন সকলেই। অরুণাদেবীও বলেন, ‘‘কিছু হলেই আমাদের কল্যাণী ছুটতে হয়। কাঁচরাপাড়া আর হালিশহরের মাঝে একটা হাসপাতাল হলে বড় ভাল হত।’’ ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সুমিতা দাসও হাসপাতালের দাবিতে সোচ্চার। যে হাসপাতাল কাঁচরাপাড়ায় আছে সেটি রেলের। তার মানও খুব খারাপ। আর পুরসভার হাসপাতালটি নেহাতই ছোট। তিনি বলেন, ‘‘একটা সরকারি হাসপাতাল থাকলে সাধারণ মানুষের উপকার হয়। তবে দল, আলো, নিকাশি, রাস্তা এ নিয়ে কোনও সমস্যা নেই এখন। এক সময় কাঁচরাপাড়া মানেই হাঁটু জল ঠেলে এগোতে হত। এখন আর তা হয় না। ভিতরের রাস্তাগুলোর কিছু কাজ বাকি আছে।’’

২৩ নম্বর ওয়ার্ডের অনেকটাই কলোনি এলাকা। বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পে এখানে কিছু ঘর বাড়ি হয়েছে। রাস্তা সংস্কার হয়েছে। বিদ্যুৎ ঢুকেছে। তবে নিকাশি নালার সমস্যা এখানে এখনও আছে। স্থানীয় বাসিন্দা অনিমা মল্লিক বলেন, ‘‘পাঁচ বছরে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু নিকাশি সমস্যাটা এই এলাকায় রয়ে গিয়েছে। কাঁচরাপাড়া সব মিলিয়ে এখন অনেক সুন্দর। ট্রেন, বাসে যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভাল। ছোটদের জন্য অনেক স্কুল হয়েছে। এ বার বস্তি এলাকার উন্নয়নের দিকে পুরসভা যদি আরও একটু নজর দেয়, তা হলে নিম্নবিত্ত মানুষগুলোর উপকার হয়।’’

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE