Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মদন মিত্রের গ্রেফতারের প্রতিবাদেও সভার অনুমতি দিল না পুলিশ-প্রশাসন

স্থানীয় বিধায়কের ই-মেল নির্দেশ গিয়েছে প্রশাসনের কাছে, তিনি বা দলের জেলা সভাপতির অনুমতি ছাড়া এলাকায় যেন কোনও রকম দলীয় কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া হয়। সেই নির্দেশ মানতে গিয়ে এ বার দলের মন্ত্রী মদন মিত্রের গ্রেফতারের প্রতিবাদে দলের একাংশের মিছিল-সভার অনুমতি মিলল না বাগদায়। বনগাঁ মহকুমার এই অংশে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের ইতিহাস দীর্ঘ দিনের। সোমবার এই ঘটনায় যা নতুন করে সামনে এল বলেই মনে করছেন দলের একাংশ। তাঁদের মতে, স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী উপেন বিশ্বাসের অনুগামীরা পুলিশ-প্রশাসনের উপরে চাপ সৃষ্টি করেই এই ঘটনা ঘটিয়েছে।

বাগদায় তৃণমূলের মিছিল।

বাগদায় তৃণমূলের মিছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাগদা ও বসিরহাট শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:১৫
Share: Save:

স্থানীয় বিধায়কের ই-মেল নির্দেশ গিয়েছে প্রশাসনের কাছে, তিনি বা দলের জেলা সভাপতির অনুমতি ছাড়া এলাকায় যেন কোনও রকম দলীয় কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া হয়।

সেই নির্দেশ মানতে গিয়ে এ বার দলের মন্ত্রী মদন মিত্রের গ্রেফতারের প্রতিবাদে দলের একাংশের মিছিল-সভার অনুমতি মিলল না বাগদায়। বনগাঁ মহকুমার এই অংশে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের ইতিহাস দীর্ঘ দিনের। সোমবার এই ঘটনায় যা নতুন করে সামনে এল বলেই মনে করছেন দলের একাংশ। তাঁদের মতে, স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী উপেন বিশ্বাসের অনুগামীরা পুলিশ-প্রশাসনের উপরে চাপ সৃষ্টি করেই এই ঘটনা ঘটিয়েছে।

মঙ্গলবার বাগদা ব্লক তৃণমূল কমিটির পক্ষ থেকে ক্রীড়ামন্ত্রীর গ্রেফতারের প্রতিবাদে মিছিল ও সভা করার কথা ছিল। সোমবার স্থানীয় হেলেঞ্চা বাজারে সেই কর্মসূচির জন্য পুলিশ-প্রশাসনের কাছে ব্লক তৃণমূল সভাপতি দীলিপ ঘোষ আগাম অনুমতিও চেয়েছিলেন। কিন্তু গোলমালের আশঙ্কায় ওই অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে পুলিশ ও মহকুমা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়। দুপুরের পর ওই সভার জন্য মাইক বাজানো হচ্ছিল। বাগদা থানার পুলিশ গিয়ে তা বন্ধ করে দেয়। সেখানে সভা করা যায়নি। তবে স্থানীয় হেলেঞ্চা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের মাঠে মাইক ছাড়াই তৃণমূলের ওই অংশের তরফে সভা করা হয়েছে। সন্ধ্যায় হেলেঞ্চা বাজারেও কয়েক হাজার মানুষকে নিয়ে মিছিল বের করেন দিলীপবাবুরা। সেখানে ছিলেন বাগদার প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক দুলাল বর, পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি তরুণ ঘোষ ও পঞ্চায়েত সমিতির বর্তমান কর্মাধক্ষ্য কার্তিক বাইন। সভায় বক্তারা জানান, দীর্ঘ দিন তাঁরা সিপিএমের হাতে অত্যাচারিত হয়েছেন। এখন দলের কিছু নেতার হাতেই নির্যাতিত হতে হচ্ছে। এ সব মুখ বুজে সহ্য করা হবে না। দলনেত্রীর কাছে তাঁরা বিচার চান। দিলীপবাবু বলেন, “দলের মধ্যেই আমাদের কোণঠাসা করার চেষ্টা হচ্ছে। কন্ঠরোধ করা হচ্ছে। পুলিশ-প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে কে বা কারা আমাদের সভা বানচাল করতে চেয়েছিলেন, তা বাগদার মানুষ জানেন।”

নাম না করলেও দিলীপবাবুর অভিযোগের তির উপেন-ঘনিষ্ঠ দলের কয়েক জনের গোষ্ঠীর দিকে। এ দিন বার বার তাঁর ফোন বেজে গেলেও উপেনবাবু অবশ্য ফোন ধরেননি।

এ দিকে, শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে বাগদায় অশান্তির আবহ কাটছে না। গত ২৭ নভেম্বর দিপীলবাবুদের এলাকায় মিছিল করতে পুলিশের কাছে আবেদন করার পরে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ও যুব তৃণমূল ওই একই দিনে মিছিল করতে চেয়ে আবেদন করে পুলিশের কাছে। পিছিয়ে আসেন দিলীপবাবুরা। গত ১১ ডিসেম্বর দিলীপবাবু পুলিশের কাছে মিছিল ও সভা করার অনুমতি চেয়ে চিঠি দেন। তারপর তৃণমূল সেবাদলের ব্যানারে দলের অন্য এক গোষ্ঠী ওই দিনই এলাকায় মানব বন্ধন করতে চেয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়। সে যাত্রায় দু’পক্ষের কাউকেই অনুমতি দেয়নি প্রশাসন। তারপরেই উপেনবাবুর ই-মেল পৌঁছয় বলে মহকুমা প্রশাসন সূত্রের খবর।

এ দিন এক দলের কর্মসূচি চলাকালীন হেলেঞ্চা বাজারে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেল হেলেঞ্চা পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান নিখিল ঘোষ ও দলের বাগদা ব্লকের প্রাক্তন সভাপতি রবীন চক্রবর্তীকে। দু’জনেই উপেনবাবুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। নিখিলবাবু বলেন, “ব্যক্তিগত ভাবে এ দিনের কর্মসূচি সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। আমাকে কেউ আমন্ত্রণও জানানি। দলীয় কর্মসূচি হলে নিশ্চয়ই জানতে পারতাম।” এলাকায় উপেনবাবুর ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত শিক্ষক নেতা অঘোর হালদার ও ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি তুলসী বিশ্বাসকেও এ দিনের কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। তাঁদের কথায়, “আমাদের কেউ আমন্ত্রণ করেনি। উপেনবাবুর ঘনিষ্ঠ মনে করেই হয় তো ডাকা হয়নি।”


বসিরহাটে কংগ্রেসের বিক্ষোভ।

১১ ডিসেম্বর জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছিলেন, বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠকে বাগদার সমস্যা মেটাতে ওই এলাকায় দলের স্থায়ী পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। গোপালবাবু এ দিন বলেন, “বাগদায় দলের সকলকে বলে দেওয়া হয়েছিল, দলে আলোচনা না হওয়া পর্যন্ত কেউ কোনও মিটিং-মিছিল করবে না। সোমবারের বিষয়টি নিয়ে জেলা সভাপতিকে রির্পোট দেওয়া হবে।” কী বলছেন জ্যোতিপ্রিয়বাবু? তাঁর কথায়, “কেউ দলের ঊর্ধ্বে নয়। দলের শৃঙ্খলা সকলকে মেনে চলতে হবে।”

অন্য দিকে, পরিবহণমন্ত্রীর গ্রেফতারের প্রতিবাদে টিএমসিপি-র নেতৃত্বে সোমবার বেলা ১২টা নাগাদ রাস্তা অবরোধ হয়েছে হিঙ্গলগঞ্জে। ঘণ্টা খানেক পরে পুলিশের মধ্যস্থতায় অবরোধ ওঠে। রাস্তা অবরোধের জেরে যানজট হয়। সমস্যায় পড়েন যাত্রীরা। তাঁদের অনেককে এক সময়ে বলতে শোনা গেল, “জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। চিকিৎসকের অভাবে সুন্দরবন এলাকায় স্বাস্থ্য পরিষেবার দিনে দিনে অবনতি হচ্ছে। সে দিকে কারও কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই। অথচ মদন মিত্রের গ্রেফতারে রাস্তায় নেমেছে ছাত্রছাত্রীরা।” ডায়মন্ড হারবারেও এ দিন মদলের গ্রেফতারের প্রতিবাদে সভা করেছে তৃণমূল।

এ দিনই বেলা সাড়ে ৩টে নাগাদ বসিরহাটের টাউনহল চত্বর থেকে প্ল্যাকার্ড, পোস্টার এবং ব্যানার হাতে কংগ্রেসের পক্ষে এক বিশাল মিছিল বের করা হয়। জেলা কংগ্রসের সভাপতি অসিত মজুমদার বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যে পাঁচজনকে চোর কিনা বলে মন্তব্য করেছিলেন, তার মধ্যে ইতিমধ্যে তিন জন জেলে গিয়েছেন। কেন্দ্র সরকারের কাছে আমাদের দাবি, বাকি দু’জনকেও সারদার সব রকম সুবিধা নেওয়ার জন্য অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে।”

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE