Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

শতাধিক বছরের পুরনো শহরে এখনও বহু সমস্যায় মত্‌স্যজীবীরা

প্রায় ১০০ বছরের পুরনো কাকদ্বীপ শহরের উন্নয়নের চাবিকাঠি নদী ও সমুদ্র থেকে মাছ ধরে তা পাইকারি বাজারে বিক্রি করা। শহরে প্রায় ৬০ শতাংশ মত্‌স্যজীবী পরিবারের বাস। এ ছাড়াও, পান চাষের সঙ্গে যুক্ত বহু মানুষ। কাকদ্বীপের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে এই দুই জীবিকার উপরে নির্ভর করে। কিন্তু বাণিজ্য ও চাষের জন্য পরিকাঠামো কেমন?

নরসিংহ সেতু ভেঙে যাওয়ায় এ ভাবেই কালনাগিনী খাল পারাপার করেন স্থানীয় মানুষ।

নরসিংহ সেতু ভেঙে যাওয়ায় এ ভাবেই কালনাগিনী খাল পারাপার করেন স্থানীয় মানুষ।

দিলীপ নস্কর
কাকদ্বীপ শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৪ ০১:০২
Share: Save:

প্রায় ১০০ বছরের পুরনো কাকদ্বীপ শহরের উন্নয়নের চাবিকাঠি নদী ও সমুদ্র থেকে মাছ ধরে তা পাইকারি বাজারে বিক্রি করা। শহরে প্রায় ৬০ শতাংশ মত্‌স্যজীবী পরিবারের বাস। এ ছাড়াও, পান চাষের সঙ্গে যুক্ত বহু মানুষ। কাকদ্বীপের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে এই দুই জীবিকার উপরে নির্ভর করে। কিন্তু বাণিজ্য ও চাষের জন্য পরিকাঠামো কেমন?

মুড়িগঙ্গা নদী-লাগোয়া স্টিমার ঘাট গ্রামের কাছে কালনাগিনী খালের সংযোগস্থলে ২০০৬ সালে তৈরি হয়েছে মত্‌স্যবন্দর। বন্দর থেকে মাছ ধরা জাল, বরফ, ট্রলারের জ্বালানি, খাবার-সহ নানা সরঞ্জাম নিয়ে গভীর সমুদ্রে রওনা হন মত্‌স্যজীবীরা। সমুদ্রে মাছ ধরার পরে ফিরেও আসেন ওই বন্দরে। সেখান থেকে মাছ পাঠানো হয় পাইকারি বাজারে। কিন্তু অতিরিক্ত মাছ এলে তা সংরক্ষণের উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই। হিমঘর গড়ে ওঠেনি। বরফ পেতেও সমস্যা। ট্রলার মেরামতির জন্য থাকবে ড্রাই ডকের ব্যবস্থা থাকার কথা। কিন্তু কাকদ্বীপ বন্দরে তাঅমিল। জ্বালানি সরবরাহেরও সমস্যা রয়েছে। এ ছাড়াও, বড় সমস্যা হল, অমাবস্যা-পূর্ণিমার ভরা কোটালের মুখে কালনাগিনী নদীতে চর পড়ে যাওয়ায় ট্রলার গভীর সমুদ্রে যেতে বা ফিরতে মুশকিল হয়।

কাকদ্বীপ মত্‌স্যজীবী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন, “প্রতি বছর সিজনে (১ জুন-১৪ এপ্রিল) প্রায় ১২০০ ট্রলার ওই মত্‌স্যবন্দর থেকে গভীর সমুদ্রে যায়। কিন্তু উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে প্রতি নিয়ত সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে। স্থানীয় ভাল পাইকারি মাছের বাজার না গড়ে ওঠায় ছুটতে হয় প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে ডায়মন্ড হারবারের নগেন্দ্র বাজারে। সরকার উদ্যোগী হলে এখানেও ভাল মাছের বাজার গড়ে উঠতে পারে।”

কী বলছেন মত্‌স্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ? তিনি বলেন, “কাকদ্বীপে হিমঘর বানানোর পরিকল্পনা আছে।” যে খাল দিয়ে বন্দরে ট্রলার যাতায়াত করে, সেটি সংস্কারে কেন্দ্রের কাছে সাহায্য চাওয়া হবে বলেও জানান তিনি। মন্ত্রী আরও জানান, কাকদ্বীপে বড় মাছের বাজার গড়ে তোলার জন্য কেন্দ্রের কাছে আবেদন জানানো হয়েছিল। সে জন্য প্রায় ৩ কোটি টাকা দরকার। অনুমোদন এখনও মেলেনি।

কাকদ্বীপের প্রায় প্রতিটি গ্রামে কমবেশি পানচাষি ছড়িয়ে আছেন। চাষিদের পান বিক্রির জন্য কাকদ্বীপে দু’টি ব্যক্তি মালিকানায় পান মার্কেট রয়েছে। কিন্তু মার্কেটে উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকায় খুবই সমস্যায় পড়তে হয় চাষিদের। ওই দু’টি মার্কেটে সপ্তাহে তিন-চার দিন কেনাবেচা চলে। দূর দূর থেকে পাইকাররা গিয়ে ফড়েদের মাধ্যমে চাষিদের থেকে পান কিনে বাজারে আনেন। কাকদ্বীপ ছাড়াও সাগর, নামখানা, পাথরপ্রতিমা এলাকার চাষিদের কাছ থেকেও পান কেনা হয়। চাষিদের অভিযোগ, সরকারি নিয়ন্ত্রণে পান বাজার গড়ে না ওঠায় ফড়েদের পাল্লায় পড়ে প্রতিনিয়ত সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কোন কোনও সময়ে লোকসানেও পানবিক্রি করতে হয়। তা ছাড়া, অতিরিক্ত ফলন রাখার মতো এখনও কোনও হিমঘর না থাকায় মাঝে মধ্যে পান ফেলেও দিতে হয়।

যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি হলেও এখনও তা পর্যাপ্ত নয় বলে অভিযোগ। সন্ধে ৬টার পরেই কলকাতার দিকে সরাসরি বাস মেলে না। গ্রামীণ এলাকার রাস্তাঘাটের অবস্থা খারাপ।

কাকদ্বীপে একাধিক নাটকের দল আছে। কিন্তু ভাল মঞ্চ পান না তাঁরা। নাট্যকর্মী সৌমিক বসু বলেন, “নাটকের চর্চার ভাল জায়গা নেই। একটি মঞ্চ হওয়া জরুরি। এলাকায় সাত-আটটি নাটকের দল আছে। তারা সারা রাজ্যেই নানা সময়ে অনুষ্ঠান করতে যায়। কিন্তু এলাকায় রিহার্সাল দিতে সমস্যা হয়। স্থানীয় নাট্যমোদী মানুষও ভাল শো দেখতে পান না।”

বিবেকানন্দ পঞ্চায়েতে মুড়িগঙ্গা-সংলগ্ন এলাকায় শুটকি মাছের প্রক্রিয়াকরণ হয়। দুর্গন্ধে সমস্যা হয় আশপাশের বহু দূর এলাকার বাসিন্দাদের। মাছ শুকনোর কাজ লোকালয় থেকে আরও দূরে কোথাও নিয়ে গিয়ে করানোর দাবি আছে।

কালনাগিনী খালের উপরে নরসিংহ সেতু ভেঙেছে বেশ ক’বছর হল। বহু মানুষকে এই পথে যাতায়াত করতে হয়। ভাটার সময়ে পর পর নৌকো পাতা থাকে। তার উপর দিয়ে চলে যাতায়াত। অন্য সময়ে শ’তিনেক ফুট লম্বা সেতু পেরোতে হয় নৌকোয়। কিন্তু সন্ধের পরে সমস্যা হয় খুবই। এই সেতু সারাইয়ের দাবি দীর্ঘ দিনের। এ বিষয়ে সুন্দরবন উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা বলেন, “সেতু তৈরির বরাদ্দ এসে গিয়েছে। খুব শীঘ্রই ওই কাজ শুরু করা হবে।” (শেষ)

কেমন লাগছে আমার শহর? আপনার নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।
ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। Subject-এ লিখুন ‘আমার শহর-কাকদ্বীপ’।
অথবা চিঠি পাঠান, ‘আমার শহর’, হাওড়া ও হুগলি বিভাগ, জেলা দফতর,
আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা- ৭০০০০১।
ফেসবুকেও প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন। www.facebook.com/anadabazar.abp

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE