পাড়ুইয়ের পর এ বার নোয়াপাড়া। যাঁদের বিরুদ্ধে থানায় হামলার অভিযোগ, তাঁরাই শান্তি বৈঠক করলেন থানায় বসে। শুধু শান্তি বৈঠকই নয়, থানা থেকে বেরিয়ে সদর্পে ঘোষণা করলেন, “সরকার আমাদের। প্রশাসনও আমাদের। কী ভাবে এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় থাকবে, তা নিয়েই পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করলাম।”
বক্তা গারুলিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের সুনীল সিংহ। রবিবার এলাকায় শান্তি ফেরাতে এই বৈঠক ডেকেছিল পুলিশ প্রশাসন। অশান্তির কারণ কী? ১০ ফেব্রুয়ারি বিকেলে গারুলিয়ায় একটি জলা থেকে বিদ্যুৎ চুরি করে জল তোলার অভিযোগে গোপাল সাউ নামে এক ব্যক্তিকে বিদ্যুৎ আইনে পুলিশ গ্রেফতার করে। অভিযোগ, রাতে তাঁকে ছাড়াতে দলবল নিয়ে থানায় সালিশি করতে যান সুনীলবাবুর দাদা চন্দ্রভান। কিন্তু কথা চলাকালীন উত্তেজনা তৈরি হওয়ায় চন্দ্রভানকে থানায় বসিয়ে রাখে পুলিশ। এ দিকে থানায় তাঁকে আটকে রাখা হয়েছ শুনে অনুগামীদের ভিড় বাড়ে থানার বাইরে। তাঁকে ছাড়াতে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। ইটের ঘায়ে থানার জানলা, পুলিশের গাড়ির কাচ ভাঙে। হামলার ঘটনায় পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতার করলেও রাতেই সুনীলবাবু থানায় গিয়ে তাঁর দাদাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান বলে অভিযোগ। পুলিশ কর্তারা তখন দাবি করেছিলেন, এলাকায় শান্তি রাখতেই চন্দ্রভানকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ দিন পুরসভার তরফে সুনীলবাবু, তাঁর দাদা এবং গারুলিয়ার ১০ জন তৃণমূল কাউন্সিলরকে নিয়ে থানায় স্মারকলিপি দিতে যাবেন বলে পুলিশের কাছে খবর ছিল। কিন্তু দলবল নিয়ে থানায় পৌঁছে সুনীলবাবুরা সটান আইসি-র ঘরে ঢুকে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরু করেন। যাঁদের বিরুদ্ধে থানায় হামলার অভিযোগ, তাঁদেরই সেই বৈঠকে দেখে পুলিশের নিচুতলা তাদের ক্ষোভ চেপে রাখতে পারেনি। এক পুলিশ কর্মীর মন্তব্য, “বীরভূমের পাড়ুইয়ে বিজেপি কর্মী খুনে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতারা থানার শান্তি বৈঠকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এ ক্ষেত্রে তারই পুনরাবৃত্তি ঘটল। যারা থানায় হামলা করল, তাদেরই আদর করে ডেকে এনে বৈঠক করা হল।” পুলিশের নিচু তলার মনোবল এতে ধাক্কা খাবে বলেই থানার পুলিশ কর্মীদের একাংশের অভিযোগ। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান অজয় ঠাকুর অবশ্য বলেন, “থানা কোনও শান্তি বৈঠক ডাকেনি। তার পরে কী ঘটেছে আইসি-র কাছে তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।” তবে নিচু তলার পুলিশ কর্মীদের ওই আশঙ্কা আরও বেড়েছে এ দিন বৈঠক শেষে বেরিয়ে আসা সুনীল ও চন্দ্রভানের কথায়। চন্দ্রভান বলেন, “১০ ফেব্রুয়ারি রাতে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির সময়ে আমারই চোট লেগেছিল।” এ দিনের বৈঠকে কী হল? চন্দ্রভান বলেন, “আগের দিনের ঘটনায় আইসি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তবে ভবিষ্যতে এ রকম ঘটনা যাতে আর না ঘটে, আমাদের সকলকেই তা খেয়াল রাখতে হবে।” তাঁর সঙ্গে থাকা তৃণমূলের কাউন্সিলর ও অন্য সমর্থকদের কেউ কেউ পুলিশের উপরে ক্ষোভ উগড়ে দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy