Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সমন্বয়ের অভাব কমিশনারেটে, ব্যারাকপুরে বাড়ছে চুরি-ছিনতাই

কল-কারখানা ধুঁকছে। কিন্তু রাস্তার ধারে পানশালা নেই, এমন জায়গা বিরল। শুধু কী তাই? নেশার সব সামগ্রীই মেলে পয়সা ফেললে। আর সেই টাকার জোগানের সহজ রাস্তা হয় দালালি নয় তো চুরি-ছিনতাই। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের এই ছবিটা গত তিন-চার বছরে স্পষ্ট হয়েছে। সম্প্রতি ব্যারাকপুর উড়ালপুলের কাছে হাওড়ায় কর্মরত রাজ্য পুলিশের এক আধিকারিকের বাড়ির মন্দিরে চুরির ঘটনার পরেও পুলিশের মন্থর গতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৪ ০১:০৩
Share: Save:

কল-কারখানা ধুঁকছে। কিন্তু রাস্তার ধারে পানশালা নেই, এমন জায়গা বিরল। শুধু কী তাই? নেশার সব সামগ্রীই মেলে পয়সা ফেললে। আর সেই টাকার জোগানের সহজ রাস্তা হয় দালালি নয় তো চুরি-ছিনতাই। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের এই ছবিটা গত তিন-চার বছরে স্পষ্ট হয়েছে। সম্প্রতি ব্যারাকপুর উড়ালপুলের কাছে হাওড়ায় কর্মরত রাজ্য পুলিশের এক আধিকারিকের বাড়ির মন্দিরে চুরির ঘটনার পরেও পুলিশের মন্থর গতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

চুরি-ছিনতাই আগেও হত। সিন্ডিকেট ব্যবসাও ছিল। কিন্তু সে সব দিন দিন বাড়ছে বলে অভিযোগ শিল্পাঞ্চল এলাকার বাসিন্দাদের। আর এই চক্রের মধ্যে গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের জেরে দিনদুপুরে গুলি করে, বোমা মেরে খুনের ঘটনাও ঘটছে। শাসক দলের পার্টি অফিসের মধ্যে ঢুকেই কুপিয়ে খুনের মতো ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে প্রশাসনিক দুর্বলতাকে। খুন, হুমকি, সন্ত্রাসের পাশাপাশি ঘন জনবসতির ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে প্রতিদিন অসংখ্য চুরি, কেপমারির অভিযোগ উঠছে। চুরি বা কেপমারির সঙ্গে সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরাও জড়িয়ে পড়ছে বলে পুলিশের দাবি। শহুরে আধুনিকতায় তাল মেলাতে নিজেকে হাই প্রোফাইল প্রমাণ করতে যোগ্যতার থেকেও হাত সাফাইয়ের কায়দা রপ্ত করার দিকে এই প্রজন্মের একটা অংশের আগ্রহ বেশি বলে মনে করেন মনোবিদ ও সমাজকর্মীরাও।

তবে প্রশাসনিক সমন্বয়ের অভাবের কারণেই অধিকাংশ দুষ্কর্মের ঘটনায় তদন্ত এগোতে ঘাম ছুটছে পুলিশ কর্তাদের। গত ছ’মাসে পুলিশের খতিয়ান অনুযায়ী, ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে চুরির ঘটনা দু’শোরও বেশি। কমিশনারেট হওয়ার পরে ব্যারাকপুরে পুলিশের পরিকাঠামো ঢেলে সাজার কথা বলা হলেও বাস্তব অন্য কথাই বলে। থানা সামলাতে হিমসিম খাওয়া নিচুতলার পুলিশ কর্মীদের দাবি, দিন-রাত এক করে কাজ করেও কাজ গুছানো যাচ্ছে না। কারণ কমিশনারেট হওয়ার পরে কাগজে-কলমে কাজের চাপ বেড়েছে কয়েক গুণ। কিন্তু লোকবল বাড়েনি। টহলদারি বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে, কিন্তু প্রতিদিন গাড়ি পিছু তেলের বরাত বাড়েনি। পুলিশের প্রতিটি থানার পিসি (প্লেইন ক্লোদ) পার্টির কাজ এলাকার ছোটখাটো চোর, উঠতি মস্তান থেকে পুরনো অপরাধীদের খুঁটিনাটি জানা ও নজরদারি করা। কার্যত ফাঁক থাকছে সেখানে। তাই চুরি, লুঠের মতো ‘পেটি কেস’-এর অভিযোগের পাহাড় জমছে কমিশনারেটে। অভিযোগ জানাতে গিয়েও দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে। বা শুনতে হচ্ছে, ‘পরে আসুন’ গোছের কথা। শুনে ফিরে আসার ঘটনাও ঘটছে কর্তাদের অজান্তে

ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, “পুলিশ যে একটা টিম ওয়ার্কের মধ্যে দিয়ে তদন্ত এগোয় ও তার কিনারা করে এটাই ভুলে যাচ্ছেন অনেকে। বহু ঘটনাই হয় তো নজর এড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সমন্বয়ের অভাব চলতে থাকলে যে কোনও দিন বড় সমস্যায় পড়তে হবে।” কমিশনারেটের নিয়ম অনুযায়ী, অভিযোগ হওয়া সব ঘটনাই কমিশনারেটের সদর দফতরের নজরে আনতে হবে। তদন্তকারী অফিসার আইসিকে জানাবেন। কমিশনারেটের ১৩টি থানার আধিকারিকেরা তাঁদের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তাদের জানাবেন। গোয়েন্দা প্রধানকে কমিশনারেটের মুখপাত্র করা হয়েছে। অধিকাংশ দিনই অবশ্য গোয়েন্দা প্রধানের কাছে থানাগুলিতে অভিযোগ হওয়া বহু ঘটনারই হদিস থাকে না। এই নজর গলে পেরিয়ে যাওয়ায় চুরির ঘটনার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান অজয় ঠাকুর বলেন, ‘‘আমাদের সীমাবদ্ধতার মধ্যে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। সমস্যা আছে। সেগুলো কী ভাবে সমাধান করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।” সব তথ্য সাধারণের কাছে তুলে ধরতে একটি ওয়েবসাইটও চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

barrackpur southbengal theft
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE